সোমবার, ১০ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

ভারতের নির্বাচনি ফল-দুই শিবিরেই উল্লাস

মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মাদ আলী শিকদার পিএসসি (অব.)

ভারতের নির্বাচনি ফল-দুই শিবিরেই উল্লাস

ভারত আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র শুধু নয়, সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশী। ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং ঐতিহাসিক সূত্রে একে অপরের সঙ্গে অপার বন্ধনে আবদ্ধ। চলমান বৈশ্বিক অস্থিরতা ও কঠিন সময়ে এ বন্ধনকে আরও শক্তিশালী করা উভয় দেশের স্বার্থের জন্য অতি প্রয়োজন। তাই সম্প্রতি ভারতের ১৮তম জাতীয় নির্বাচনটি বিশাল কর্মযজ্ঞের মধ্য দিয়ে সুসম্পন্ন হওয়ায় বাংলাদেশের একজন নাগরিক  হিসেবে ভারতের জনগণ, সুশীল সমাজ ও সব রাজনৈতিক দলকে অভিনন্দন জানাই। ভারতের জনগণ ও রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ সব শঙ্কা উড়িয়ে আবার প্রমাণ করতে পেরেছে, ভারতের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করতে পারে। আঞ্চলিক রাজনীতির একজন নিবিড় পর্যবেক্ষক হিসেবে সাত দফায় অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনের চতুর্থ দফার ভোট গ্রহণ শেষে বাংলাদেশ প্রতিদিনের এই কলামে বড় দুই প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষের বিগত সময়ের ভোট ও আসন প্রাপ্তির চিত্র গত পাঁচ বছরে দুই পক্ষের রাজনৈতিক কর্মকান্ড এবং ভারতের অভ্যন্তরীণ মিডিয়ার ভাষ্য, ইত্যাদি মূল্যায়নপূর্বক অঞ্চলভিত্তিক ভোটের পাটিগাণিতিক ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণে বলেছিলাম প্রধানমন্ত্রী দুই শিবিরের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে, তবে পাল্লা বিজেপির দিকে ভারী। ১ জুন শেষ দফা ভোট গ্রহণের পর ভারতের বেশ কয়েকটি মিডিয়া হাউস থেকে বুথফেরত জরিপের ফল প্রকাশ করে, যেটিকে ইংরেজিতে এক্সিট পোল বলা হয়। তাতে সবকটি জরিপেই বিশাল ব্যবধানে বিজেপিকে বিজয়ী দেখানো হয়। বলা হয়, বিজেপি একাই ২৫০ আসনের কাছাকাছি এবং জোট সঙ্গী নিয়ে ৪০০ আসনেরও বেশি পেতে যাচ্ছে। কংগ্রেস জোটকে ১৪৫-১৬০ আসনের বেশি কেউ দেয়নি। কিন্তু ৪ জুন সকাল থেকে ভোটের ফল প্রকাশ শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে জরিপকারী মিডিয়া হাউসের সুর পাল্টাতে থাকে। বিগত সময়ের জরিপও সঠিক হয়নি উল্লেখ করে নিজেদের দুর্বলতা ঢাকার চেষ্টায় রত হয়। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে এ লেখাটি প্রকাশ হওয়ার আগেই হয়তো দিল্লিতে বিজেপির নেতৃত্বে নতুন সরকার শপথ নেবে। বিজেপি একাই ২৪০ আসন পেয়ে নতুন সংসদের সর্ববৃহৎ দল এবং জোট সঙ্গীসহ ২৯৩ সদস্য নিয়ে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। কংগ্রেস জোট পেয়েছে ২৩২টি এবং অন্যান্য জোটহীনদের রয়েছে ১৮টি আসন। নরেন্দ্র মোদি নতুন ইতিহাস গড়তে যাচ্ছেন। ভারতের ৭৭ বছরের ইতিহাসে জওহরলাল নেহরুর পর নরেন্দ্র মোদিই হচ্ছেন একটানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন ও শুভ কামনা জানাই। কিন্তু মুদ্রার অপর পিঠের মতোই বিজেপির তৃতীয় মেয়াদের সরকার পূর্ববর্তী দুই মেয়াদের মতো নিজেদের নির্বাচনি ওয়াদা এবং রাজনৈতিক কর্মসূচি কতখানি বাস্তবায়ন করতে পারবেন সে প্রশ্ন ইতোমধ্যেই উঠেছে। অনেকে নতুন সরকারকে বিজেপি নয়, এনডিএ (ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স) জোট সরকার বলছেন এবং আমিও মনে করি সেটাই যথার্থ। নির্বাচনি ফলের চিত্র অনুযায়ী এনডিএ জোটভুক্ত অন্ধ্রপ্রদেশের তেলেগু দেশম পার্টির নেতা চন্দ্রবাবু নাইডু ও বিহারের জনতা দল ইউনাইটেডের নীতীশ কুমার কিং মেকার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। দুই নেতাই চাণক্য দর্শনের পাকা খেলোয়াড় এবং সুবিধাবাদী রাজনীতির জন্য সুপরিচিত। দুজনই একসময়ে কংগ্রেস জোটে ছিলেন। তাদের দলীয় রাজনৈতিক আদর্শ বিজেপির সঙ্গে মিলের থেকে অমিলই বেশি। নিজেদের সমর্থক ভোটার তাদের থেকে সরে যেতে পারে এমন কোনো পদক্ষেপ কোয়ালিশন সরকার নিতে চাইলে তাতে বাধা দেওয়াসহ নিজ নিজ ভোটব্যাংক বৃদ্ধি পায় এমন রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মসূচি নিতে সরকারকে চাপে রাখবেন। কোয়ালিশন সরকারের জন্য এটা একই সঙ্গে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক। ভারতের মিডিয়া ও বিশ্লেষকরা বিহার, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক ও পশ্চিমবঙ্গকে এবার নির্বাচনের জন্য মূল ব্যাটল গ্রাউন্ড হিসেবে ধরেছিলেন। নীতীশ কুমারের দল জেডিইউ এবং বিজেপি জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করায় আমার গত লেখায় উল্লেখ করেছিলাম বিহারে এনডিএ সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। ৪০টি আসনের মধ্যে এনডিএ জোট ২৫টি আসন পেয়েছে, যেখানে নীতীশ কুমারের জেডিইউ পেয়েছে ১২টি। বাড়ির পাশে পশ্চিমবঙ্গে আমার বিশ্লেষণ সঠিক হয়নি। শুধু আমার নয়, ভারতের প্রায় সব মিডিয়া ও বিশ্লেষকের মূল্যায়নকে উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস বড় বিজয় পেয়েছে। তবে ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রাপ্ত ৩৪ পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি, এবার পেয়েছে ২৯টি আসন। বিজেপির আসন ২০১৯ সালের ১৮ থেকে ১২ আসনে নেমে এসেছে। মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ ও কর্ণাটকে আমার আগের মূল্যায়ন পুরোটাই সঠিক হয়েছে। উত্তরপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রে বড় আকারের বিজয়  ইন্ডিয়া জোট ও কংগ্রেসকে অনেক দূর এগিয়ে দিয়েছে। লোকসভার ৮০টি আসন নিয়ে ভারতের রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় ডিসাইডিং ফ্যাক্টর উত্তরপ্রদেশ। গত নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে বিজেপির আসন ছিল ৬২। এবার যেহেতু কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টি জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করেছে, তাই বেশির ভাগ বিশ্লেষকের ধারণা ছিল বিজেপির আসন কমে ৪৮-৫০ হতে পারে। কিন্তু অভাবনীয়ভাবে বিজেপির আসন নেমে এসেছে ৩৬টিতে। সমাজবাদী পার্টি ৩৭ আসন পাওয়ায় আগামীতে উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে পিতা মুলায়েম সিং যাদবের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার সুযোগ পেতে পারেন অখিলেশ যাদব। অন্যদিকে ছত্তিশগড়, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, ঝাড়খন্ড, ওড়িশা ও উত্তরখন্ডে একচেটিয়া বিজয় লাভ করায় বিজেপি এককভাবে ২৪০ আসনে পৌঁছতে পেরেছে। বিজেপির সবচেয়ে বড় চমক তারা ভারতের ইতিহাসে এবারই প্রথম কেরালায় দুটি আসনে জয়লাভ করেছে। অনেক চেষ্টা করেও তামিলনাড়ুতে বিজেপি খাতা খুলতে পারেনি। এবারের নির্বাচন কেন্দ্র করে কঠোর সমালোচনার সস্মুখীন হয়েছে ভারতের এক্সিট পোলকারী মিডিয়া হাউসগুলো, যার কারণ লেখার শুরুতেই উল্লেখ করেছি। এক্সিট পোলে দেখানো ফলের সঙ্গে বাস্তব ফলের ব্যাপক পার্থক্য হওয়ায় মিডিয়াগুলোর পেশাগত সততা ও দক্ষতা নিয়ে ভারতের অভ্যন্তরেই বড় রকম প্রশ্ন উঠেছে।

শুক্রবার বিকালে এ লেখাটি যখন শেষ করছি তখন পর্যন্ত এটা মোটামুটি নিশ্চিত ৯ জুন রবিবার একটানা তৃতীয়বারের মতো নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন এবং একই সঙ্গে নতুন মন্ত্রিসভারও শপথ হবে। কিন্তু আগামীতে নতুন সরকারের পথচলা কেমন হবে এবং সর্বভারতীয় রাজনীতির গতিপথ কী হতে পারে তা নিয়ে ব্যাপক বিচার-বিশ্লেষণ চলছে। প্রথমেই ধারণা করা হচ্ছে, নতুন সরকারের রাজনৈতিক এবং রাজনৈতিক লক্ষ্যে গৃহীত কর্মসূচির বিরুদ্ধে বিরোধী জোট সংসদে ও সংসদের বাইরে প্রবল বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারে। সুযোগ পেলেই যে কোনো আঞ্চলিক ও জাতীয় ইস্যুতে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে চাইবে বিরোধী পক্ষ। ২০১৯-২০২৪ মেয়াদে সংসদে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও পাঞ্জাব-হরিয়ানায় কৃষক আন্দোলনের মুখে এতদসংক্রান্ত আইন বিজেপি সরকারকে বাতিল করতে হয়েছিল। অন্ধ্রপ্রদেশের তেলেগু দেশম পার্টির প্রধান চন্দ্রবাবু নাইডু ও বিহারের জেডিইউর প্রধান নীতীশ কুমারের মতিগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিজেপির চলার পথ কতখানি মসৃণ হবে সেটাই এখন ভারতের অভ্যন্তরীণ মিডিয়ায় ‘টক অব দ্য টাইম’। ইতিবাচক-নেতিবাচক বহু রকমের আলোচনা হচ্ছে। নব্বই দশকের মাঝামাঝিতে চন্দ্রবাবু নাইডুর শ্বশুর এনটি রামা রাও তেলেগু দেশম পার্টি গঠন করেন এবং একাধিকবার মুখ্যমন্ত্রী হন। এনটি রামা রাও রাজনীতিতে আসার আগে তেলেগু সিনেমার ভীষণ জনপ্রিয় নায়ক ছিলেন। নিজের ক্যারিশমা ও জনদরদি ভূমিকার জন্য স্বল্প সময়ের মধ্যে তিনি অন্ধ্রপ্রদেশের রাজনীতিরও জনপ্রিয় নায়ক হয়ে যান। একসময়ে তেলেগু জনগণের কাছে তিনি সেমিগড়ের মতো ফিগার হয়ে ওঠেন। চন্দ্রবাবু নাইডুর শাশুড়ি, অর্থাৎ এনটি রামা রাওয়ের প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। একসময়ে দলের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি এমন হয়ে যায় যে, তাতে সবার কাছে মনে হয় দলের সব নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব বোধহয় এনটি রামা রাওয়ের দ্বিতীয় স্ত্রীর হাতে চলে যাচ্ছে। রাজনীতি ও ক্ষমতার কাছে আপন-পর বলে কিছু নেই। সুতরাং ক্ষুব্ধ হন চন্দ্রবাবু নাইডু। তিনি দলের মধ্যে এক ধরনের অভ্যুত্থান ঘটিয়ে শ্বশুরকে সরিয়ে নিজেই দলের সব নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। কিছুদিন পরই এনটি রামা রাও হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। সেই থেকে চন্দ্রবাবু নাইডু চাণক্য রাজনীতির দক্ষ খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। উল্লেখ্য, এবার জাতীয় নির্বাচনের সময় একই সঙ্গে অনুষ্ঠিত অন্ধ্রপ্রদেশের রাজ্য নির্বাচনেও বিপুলভাবে জয়ী হয়েছে তেলেগু দেশম পার্টি। সুতরাং চন্দ্রবাবু নাইডু এখন রাজনৈতিকভাবে অনেক শক্তিশালী অবস্থানে আছেন। তিনি এই সুযোগে কেন্দ্রীয় সরকারে যোগ দিয়ে নিজের এবং নিজ দলের রাজনীতিকে আরও বিস্তার ও শক্তিশালী করার জন্য যেসব এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে নিতে চাইবেন তা বিজেপির রাজনীতির জন্য কতটুকু সুখকর হবে সেটা আগামীতে এক বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করবে। আগেই বলেছি চন্দ্রবাবু নাইডুর রাজনৈতিক মতাদর্শ বিজেপির সঙ্গে একই কাতারে অবস্থান করে না। চন্দ্রবাবু নাইডু সম্পর্কে যে বিষয়গুলো এত সময়ে তুলে ধরা হলো তার প্রায় সবকিছুই আরও বেশি প্রযোজ্য বিহারের নীতীশ কুমারের বেলায়। কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া (ইন্ডিয়া ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স) জোটের প্রধান প্রবক্তা ও রূপকার ছিলেন নীতীশ কুমার। ধারণা করা হয়, কংগ্রেসের সঙ্গে নেতৃত্বের কোন্দলে তিনি গত বছর ইন্ডিয়া জোট ছেড়ে যান এবং বিজেপির জোটে যোগ দেন। ইতিপূর্বেও তিনি কয়েকবার কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে ছিলেন। নিজ রাজ্য বিহারেও তিনি কংগ্রেস মিত্র রাষ্ট্রীয় জনতা দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ ছিলেন। কিন্তু কোনো জোটেই তিনি স্থায়ীভাবে থাকেননি। নীতীশ কুমার ও চন্দ্রবাবু নাইডু দুজনেই পরিপক্ব রাজনীতিক হিসেবে ভালো করে বোঝেন রাজনীতির মাঠে কখন সামনে-পেছনে যেতে হয় এবং কখন কোথায় থামতে হয়। চন্দ্রবাবু নাইডুর দলের ১৬ আসন এবং নীতীশ কুমারের দলের ১২ আসনসহ এনডিএ জোটের মোট আসন ২৯৩। অনেকে হয়তো ভাবছেন আলোচ্য দুই নেতা সমর্থন প্রত্যাহার করলে বিজেপি সরকারের পতন হবে। কিন্তু আমার ধারণা সেটা খুব তাড়াতাড়ি হবে না। দুই জোটের বাইরে ১৮ জন সংসদ সদস্য আছেন, যাদের সব না হলেও বেশি সংখ্যককে সরকারের সমর্থনে আনার জন্য বিজেপির হাতে অনেক মেকানিজম আছে। অন্যদিকে বিজেপি সরকার পড়ে গেলে কংগ্রেস জোটের জন্যও ২৩২ আসন নিয়ে সরকার গঠন করা সহজ হবে না, জোটের নেতৃত্ব নিয়েও সংকট তৈরি হতে পারে। সেরকম হলে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হবে। তাই আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলছে, বিজেপি সরকারের পতন এবং দ্রুত আরেকটি নতুন নির্বাচনের জন্য ইন্ডিয়া জোট হয়তো খুব তাড়াহুড়া করবে না। কারণ, নব্বই দশকের শেষভাগের তিক্ত অভিজ্ঞতা কংগ্রেসের রয়েছে। ১৯৯৮ সালে ১২তম লোকসভায় তখন অটল বিহারি বাজপেয়ির নেতৃত্বে বিজেপি জোট ২৬৫ আসন নিয়ে ছোট দলের সমর্থনে সংখ্যালঘু সরকার গঠন করে। কিন্তু এই সরকারের মাত্র ৪১৩ দিনের মাথায় কোয়ালিশন সঙ্গী তামিলনাডুর জয়ললিতার দল সমর্থন প্রত্যাহার করলে ১৯৯৯ সালের ১৭ এপ্রিল বাজপেয়ি সরকারের পতন ঘটে। কিন্তু ১৯৯৯ সালের অক্টোবর মাসে ১৩তম লোকসভার জন্য নতুন নির্বাচন হয় এবং তাতে বিজেপি জোট পূর্বের প্রাপ্ত ২৬৫ আসন থেকে বেশি ২৯৮ আসন পায়। বাজপেয়ির নেতৃত্বে বিজেপি পুনরায় নতুন সরকার গঠন করে। সে সরকার পুরো পাঁচ বছর টিকে ছিল। তাতে বোঝা যায় বিরোধী পক্ষের যেনতেনভাবে সরকারের পতন ঘটানোর বিষয়টি ভারতের জনগণ ভালোভাবে গ্রহণ করে না। তাই আমার ধারণা কংগ্রেস জোট আপাতত ওয়েট অ্যান্ড সি কৌশলে থাকবে। তাছাড়া সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও নির্বাচনে একটা ভালো ফল আসায় একে পুঁজি করে নিজেদের আরও সংঘবদ্ধ ও সুসংহত করার জন্য ইন্ডিয়া জোটের নেতৃবৃন্দ সময় নেবেন বলে আমার ধারণা। ফল প্রকাশের পর দুই শিবিরকেই উল্লাস করতে দেখা গেছে। এককভাবে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা কংগ্রেস থেকে ১৪০ আসন বেশি। ২৪০ আসন পাওয়া, জোট হিসেবে ২৯৩ আসন, নরেন্দ্র মোদির টানা তিনবার প্রধানমন্ত্রী হওয়া, ইত্যাদি মিলে বিজেপি শিবিরের জন্য উল্লাসের কারণ অবশ্যই আছে। অন্যদিকে কংগ্রেস শিবির থেকে উল্লাসের কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, এককভাবে বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন ঠেকিয়ে দিতে পারা এবং এনডিএ জোটকে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় অনেক পেছনে রাখতে পারাটা তাদের জন্য বিশাল রাজনৈতিক বিজয়। প্রতিবেশী বন্ধুরাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে আমরা ভারতের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা কামনা করি। নরেন্দ্র মোদির শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ১০ বছরে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে বোঝাপড়ার যে রসায়নটি তৈরি হয়েছে তা ভবিষ্যতে আরও এগিয়ে নেওয়া উভয় দেশের স্বার্থের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 

লেখক : রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক

[email protected]

সর্বশেষ খবর