শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১১ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

সুশাসন চাই সবক্ষেত্রে

মাজহারুল ইসলাম

সুশাসন চাই সবক্ষেত্রে

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর গঠিত আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে তাদের আগের তিন সরকারের কিছুটা হলেও গুণগত পার্থক্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের কড়া মনোভাবের প্রতিফলন দেশবাসীর চোখে পড়ছে। পরে কী হবে জানি না, তবে মনে হচ্ছে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে রাঘববোয়ালরাও যাতে পার না পায় তেমন সংস্কৃতি চালুর চেষ্টা চলছে। সাবেক সেনাপ্রধান ও সাবেক পুলিশের আইজির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে তা কতটা সত্যি যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে ভিআইপি বলে আইন যে তাদের কোনো খাতির করছে না এটি একটি আশা জাগানিয়া দিক। দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক কাজ করছে স্বাধীনভাবেই। আইন তার নিজস্ব গতিতে চললে ক্ষমতার অপব্যবহার যারা করেন- তাদের মনে ভয় ঢুকবে এমনটিই আশা করা যায়।

সভ্য দেশগুলোতে অপরাধীদের দেখা হয় অপরাধী হিসেবে। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের মতো সাবেক প্রেসিডেন্টকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে। ক্ষমতাধর বলে তিনি ছাড় পাননি। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হয়েছে অনিয়মের অভিযোগে। তার পদমর্যাদা ও প্রভাব প্রতিপত্তি এমনকি জনপ্রিয়তা কোনো কাজে আসেনি। পাশের দেশ ভারতে মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীকেও জবাবদিহিতার মুখে পড়তে হয়েছে। কারাগারে যেতে হয়েছে আইন অনুযায়ী। সরকার বিভিন্ন পদে বিভিন্ন লোকজনকে বসান। বিধিবদ্ধ নিয়মে তারা দায়িত্ব পালন করবেন এমনটিই আশা করেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। কেউ যদি নিজেদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে লুটেপুটে খাওয়াকে দায়িত্ব মনে করেন সে দায় তাদের ওপর বর্তায়। সরকার যদি সেক্ষেত্রে সন্দেহভাজনদের পক্ষে অবস্থান নেন, তবে তার দায় তারা এড়াতে পারেন না। বেনজীর ও আজিজকান্ডে সরকার তাদের পক্ষ নেয়নি বলেই এখনো পর্যন্ত আইন নিজস্ব গতিতে চলছে। অতীতে দুর্নীতি করে অনেকে পার পেয়ে গেছেন বিভিন্ন সরকারের আমলে। বর্তমান সরকার সে অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার যে চেষ্টা করছে তা প্রশংসার দাবিদার। সাম্প্রতিক সময়ের একটি বড় কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটিয়েছে আদম ব্যাপারীরা। তারা ১৭ হাজারের বেশি কর্মীর কাছ থেকে ৫ লাখ টাকারও বেশি জনপ্রতি আদায় করে ভিসার ব্যবস্থা করলেও বিমানের টিকিটের অভাবে মালয়েশিয়ায় পাঠাতে পারেননি।

সরকারেরও নজর ছিল দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া যাতে কোনোভাবে বিঘ্নিত না হয়। বাংলাদেশের কর্মীদের জন্য দীর্ঘ চার বছর বন্ধ ছিল মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। সরকারের নানামুখী চেষ্টায় সে বাজার আবার উন্মোচিত হয়। ৫ লাখেরও বেশি কর্মী নিতে আগ্রহ দেখায় মালয়েশিয়া। শুরু হয় ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়া। সময়মতো ভিসাপ্রাপ্তরা যাতে মালয়েশিয়ায় যেতে পারেন সেজন্য বিশেষ ফ্লাইটের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রীর ভাষ্য, রিক্রুটিং এজেন্টদের সংগঠন বায়রার সঙ্গে কথা বলে কাদের ভিসা হয়েছে আর কাদের হয়নি সে তথ্য চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু বায়রা সে তালিকা দিতে পারেনি। পরে কর্মী পাঠানোর জন্য ২২টি বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা হয়। মালয়েশিয়া সরকারকেও সময় বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়। তারা সময় বাড়াতে রাজি হয়নি। সরকার বলছে, এ কেলেঙ্কারিতে যারা দায়ী তাদের ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে দুঃখ ক্ষোভে যেতে না পারা একজন কর্মী আত্মহত্যা করেছেন রেলসেতু অতিক্রমের সময় ট্রেন থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে। যা সারা দেশে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।

ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সিদ্ধান্ত দেশের অর্থনীতির প্রধান শত্রু হুন্ডি নামের ভয়াল দৈত্যের থাবা নিয়ন্ত্রণে অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। ১ কোটিরও বেশি প্রবাসী যাদের একটা বড় অংশ হুন্ডির মাধ্যমে দেশে অর্থ পাঠান, তাদের অনেকে এখন ব্যাংকিং খাতে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহবোধ করবেন। ডলারের দাম বাজারভিত্তিক হওয়ায় ক্রমান্বয়ে সংকটও কমে আসবে। বাজারভিত্তিক সুদহার এবং ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে ডলারের দাম নির্ধারণ ছিল আইএমএফের পরামর্শ। বিশ্বের বৃহত্তম ঋণদাতা সংস্থার কাছ থেকে ঋণ পেতে পূর্বশর্ত হিসেবে এমন ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হয়। আইএমএফ তার দেওয়া ঋণ যাতে সুদাসলে সময়মতো ফিরে পায় তা নিশ্চিত করতে ঋণগ্রহীতা দেশের অর্থনীতির ভুলত্রুটি সংশোধনের ব্যবস্থাপত্র দেয়। আইএমএফ ইতোমধ্যে আভাস দিয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন বিশ্বের গুটিকয় বিকাশমান অর্থনীতির একটি। ২০২৮ সালে বিশ্বের ২০০-এর বেশি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতি ১৯তম স্থানে পৌঁছাবে। এজন্য তারা দৃশ্যত হুন্ডির টুঁটি চিপে ধরার পরামর্শ দিয়েছে। ডলার সংকট মোচনে গার্মেন্টসহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীদের মধ্যে রপ্তানিকৃত পণ্য বাবদ প্রাপ্ত অর্থের একটা অংশ বিদেশে রাখার যে প্রবণতা রয়েছে তা রোধ করতে হবে। পাশাপাশি অর্থনীতিতে সুবাতাস আনতে ব্যাংকিং খাতের সংস্কারে জোর দিতে হবে। এজন্য থামাতে হবে খেলাপি ঋণ নামের আরেক দৈত্যের দৌরাত্ম্য। তা সম্ভব হলে সৎ ব্যবসায়ীদের ব্যাংক ঋণ পাওয়ার সুযোগ বাড়বে। বাড়বে কর্মসংস্থানের সুযোগও। সবক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে এগিয়ে যাবে দেশ।

লেখক : প্রাবন্ধিক

সর্বশেষ খবর