মঙ্গলবার, ১১ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

কোরবানি ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানী

কোরবানি ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান

কোরবানি ইসলামী শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। মুসলমানদের জন্য বিশেষ ইবাদত। কোরবানির বিধান নবী আদম (আ.)-এর যুগে বিদ্যমান ছিল। ইসলামী শরিয়তে কোরবানির যে পদ্ধতি চালু আছে তা নবী ইব্রাহিম (আ.)-এর সময় প্রবর্তিত হয়েছিল। কোরআন এবং হাদিসের আলোকে সামর্থ্যবানদের জন্য কোরবানি করা ওয়াজিব। কারও কারও মতে, সুন্নতে মুয়াক্কাদা বা অতি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। কোরবানি করা ওয়াজিব, এ বিষয়ে এত বেশি পরিমাণে দলিল প্রমাণ রয়েছে, যা আলোচনার জন্য স্বতন্ত্র একটি বই রচনার দাবি রাখে। সাহাবি ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত- রসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় ১০ বছর অবস্থান করেছেন, তিনি প্রতি বছর কোরবানি করেছেন (তিরমিজি)। অপর হাদিসে বর্ণিত রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ঈদের দিনে রক্ত প্রবাহিত করা অপেক্ষা অধিক প্রিয় বনি আদমের কোনো আমল আল্লাহর কাছে নেই। এই কোরবানিকৃত জন্তু কিয়ামত দিবসে তার শিং, পশম ও ক্ষুরসমূহসহ উপস্থিত করা হবে। এর রক্ত জমিনে প্রবাহিত হওয়ার আগেই আল্লাহর কাছে পৌঁছে যায়। অতএব তোমরা নিষ্ঠার সঙ্গে, আগ্রহ চিত্তে কোরবানি কর’ (তিরমিজি)। কোরবানি করা মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি সুবর্ণ সুযোগ। এই মর্মে আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি করুন’ (সুরা কাউসার-২)। এ আয়াতে মহান প্রভু কোরবানি করার জন্য নির্দেশ করেছেন। নির্দেশ সূচক বাক্য সাধারণত ওয়াজিব বোঝানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। মহানবী (সা.) বলেন, যে কোরবানি করার সামর্থ্য রাখা সত্ত্বেও কোরবানি করবে না সে যেন মুসলমানদের ঈদগাহে না যায় (ইবনে মাজাহ)। বস্তুত মহানবী (সা.)-এর এমন কঠোর ধমক কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার প্রতিই ইঙ্গিত বহন করে। অপর হাদিসে মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নামাজের আগে কোরবানি করবে সে যেন নামাজের পর পুনরায় আরেকটি ছাগল জবাই করে’ (সহিহ মুসলিম)। কোনো এলাকায় ঈদের নামাজের আগে কেউ কোরবানি করলে বিজ্ঞ ওলামাগণের ঐকমত্যে নামাজের পর পুনরায় তাকে কোরবানি করতে হবে। বস্তুত ওয়াজিব আমল পুনরায় আদায় করতে হয়। ঐচ্ছিক কোনো আমল পুনরায় আদায় করার নির্দেশনা ইসলামী শরিয়তে হয় না।

কোরআন হাদিসের উল্লিখিত উক্তিসমূহের আলোকে জ্ঞানসম্পন্ন, প্রাপ্তবয়স্ক, সামর্থ্যবান প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর ওপর একটি ছাগল-দুম্বা অথবা গরু, উটের সপ্তমাংশ কোরবানি করা আবশ্যক। গরু, মহিষ ও উট কোরবানির ক্ষেত্রে অনূর্ধ্ব সাতজন মিলে কোরবানি করা যাবে। এতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। সাহাবি জাবের (রা.) বলেন, ‘আমরা রসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে হুদায়বিয়ার সময়ে উট, গরু সাতজনে মিলে কোরবানি করেছি’ (সহিহ মুসলিম)। মুসাফির অবস্থায় কোরবানি করা আবশ্যকীয় নয়। যে ব্যক্তি জিলহজ মাসের ১০ তারিখ সুবহে সাদিকের পর থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সাড়ে সাত ভরি সোনা অথবা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা বা এ পরিমাণ রুপা সমতুল্য নগদ অর্থের মালিক হবে তাকে সামর্থ্যবান গণ্য করা হবে। বর্তমান বাজার মূল্যে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার দাম প্রায় সত্তর হাজার টাকা। এ পরিমাণ অপ্রয়োজনীয় নগদ অর্থ অথবা অপ্রয়োজনীয় জিনিসের মালিককেও কোরবানি করতে হবে। এ সম্পদ বছর অতিক্রান্ত না হলেও কোরবানি ওয়াজিব হবে।

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা, ঢাকা

সর্বশেষ খবর