বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

নিবিড় পরিচর্যা বাণিজ্য

স্বাস্থ্য খাত ঘুমিয়ে থাকলে চলবে না

মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং স্বাস্থ্যসেবার বেসরকারি খাতের অনেকাংশই এমন দুর্বৃত্ত চক্রের কবলে পড়েছে যে, প্রতিনিয়ত হচ্ছে রোগীদের সর্বনাশ। প্রতারণার শিকার হচ্ছে তাদের পরিবার। অসাধু সিন্ডিকেট স্বাস্থ্যসেবাকে অসৎ বাণিজ্যে পরিণত করেছে। নানা ফন্দি-ফিকির করে চিকিৎসার নামে ভুল চিকিৎসা এবং হাজারটা পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে মোটা টাকা হাতিয়ে নিয়ে তারা আসলে রোগীর স্বজনদের পকেট কাটার দোকান খুলেছে। এরই আরেকটি ধারালো অস্ত্র হচ্ছে আইসিইউ বা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র। সরকারি হাসপাতালে যেহেতু পর্যাপ্ত আইসিইউ নেই, তার সুযোগটা ষোলআনা নিতে চায় বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলো। তাদের আজ্ঞাবহ চিকিৎসকরা কারণে-অকারণে আইসিইউতে পাঠানোর সুপারিশ করে রোগীর পরিবারকে সর্বস্বান্ত করার পথে ঠেলে দেন। এক্ষেত্রে রোগীরা অসহায়। রোগীর সুস্থতার জন্য, স্বজনরা সর্বস্ব দিতেও পিছপা হয় না। আবেগ ও দুর্বলতার এ সুযোগটাই নেয় হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলো। এসব নিয়েই পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী নচিকেতার একটা প্রতিবাদী জনপ্রিয় গান আছে- যেখানে তিনি অসাধু ডাক্তার, কমিশনের ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের অসততা এবং অমানবিকতার দিকগুলো তুলে ধরে প্রশ্ন রেখেছেন- ত্রাণকর্তার ভূমিকা যাদের, তারাই যদি ঘাতক-তস্করের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন; সাধারণ মানুষ তবে কোথায় যাবে? আমাদের বর্তমান বাস্তবতায় গানটি খুবই প্রযোজ্য। দেশে স্বাস্থ্য খাতের অসাধু ব্যবসায়ীদের নৈতিকতা এমন তলানিতে পৌঁছেছে, কোনো সভ্য সমাজে এটা ভাবা যায় না। আর দুর্ভাগ্য, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরিয়ে এসেও সরকারি স্বাস্থ্য খাত এখনো প্রয়োজনীয় সক্ষমতা অর্জন করেনি। সাধারণ মানুষের বড় অংশকেই জীবন বাঁচাতে ছুটতে হয় বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে। যেখানে রোগীদের পকেট কাটার জন্য ওতপেতে থাকে প্রতারকচক্র। যেন এসব নিষ্ঠুরতা দেখার এবং এদের জঘন্য অন্যায় নিয়ন্ত্রণের কেউ নেই! এদের রুখতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতে হবে। অধিদফতরকে ঘুমিয়ে থাকলে চলবে না। যে কোনো মূল্যে, রুগ্ন স্বাস্থ্য খাতকে সুস্থ করে তুলতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর