শুক্রবার, ১৪ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

এখলাস ও সুন্নত মোতাবেক নামাজ

আল্লামা মাহ্‌মূদুল হাসান

এখলাস ও সুন্নত মোতাবেক নামাজ

শুধু আমল করলেই চলবে না বরং কৃত প্রতিটি শরিয়তের নিয়ম মোতাবেক আমল পরিশুদ্ধ হতে হবে। যেমন ওষুধ ভুল প্রয়োগের দ্বারা রোগ দূর হয় না, বরং আরও বেড়ে যায়। ঠিক আমলও তেমনই। আমল ভুল হলে উল্টো রিয়েকশন করে। অশুদ্ধ আমল বাহ্যিক দৃষ্টিতে আমল হলেও প্রকৃতপক্ষে আমল হয় না। যেমন- কোনো লোক অজু ছাড়া নামাজ পড়লে, মানুষ তাকে নামাজি বলবে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সে নামাজি নয়। অশুদ্ধ আমলের দ্বারা আমলের সুফল পাওয়া যায় না। কতক মানুষ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে পড়ে, আবার মিথ্যাও বলে, গিবত করে, চুরি করে অথচ আল্লাহপাক কোরআনে কারিমে ইরশাদ করেন- নামাজ তাকে জোরপূর্বক গুনাহের কাজ থেকে বিরত রাখে।

আল্লাহর কথা ভুল হতে পারে না : আল্লাহপাক বলেছেন, জিকির নামাজির দিল-দেমাগ তথা সারা শরীরে প্রবিষ্ট হয়ে যায়। ফলে আল্লাহ ছাড়া তার ভিতরে কিছুই থাকে না। যখনই তার সামনে গুনাহ আসে তখন আল্লাহর কথা স্মরণ হয়ে যায় এবং সে গুনাহ থেকে বিরত থাকে। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, জনৈক সাহাবি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে হাজির হয়ে আরজ করলেন, রসুলাল্লাহ! অমুক সাহাবি নামাজ পড়ে আবার চুরিও করে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সে যদি নামাজ পড়ে তাহলে অতিসত্বর সে চুরি ছেড়ে দেবে। সত্যি সত্যি কিছুদিন পর সেই সাহাবি এসে বললেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! সে চুরি ছেড়ে দিয়েছে।

হাদিসের এ ঘটনা থেকে বুঝতে পারলাম, শুধু কোরআনের আয়াতে নয়, বাস্তবেও দেখা যাচ্ছে নামাজি যখন কোনো গুনাহের মুখোমুখি হয় তখন তার আল্লাহর কথা মনে হয় এবং গুনাহ থেকে দৌড়ে পালায়। আল্লাহপাক বলেন- ভালো মানুষ যখন সামাজিক কিংবা পারিপার্শ্বিকতার কারণে গুনাহ করে ফেলে, তখন তার দিলে আগুন লেগে যায়। গুনাহের ওপর সে স্থির থাকতে পারে না। হাকিমুল উম্মত হজরত থানবি (রহ.) বলেন, গুনাহের কাজ সামনে এলে আল্লাহর কথা স্মরণ হয় এবং গুনাহ থেকে দৌড়ে পালায়, এ ধরনের বুজুুর্গ কেয়ামত পর্যন্ত থাকবে।

এক বুজুর্গের ঘটনা : হাকিমুল উম্মত হজরত থানবি (রহ.) এক বুজুর্গের ঘটনা নকল করেছেন যে, সে তার বাগানের দারোয়ানের স্ত্রীর প্রতি আসক্ত হয় এবং কৌশল করে দারোয়ানকে দূরে কোথাও কাজের জন্য পাঠিয়ে দেয়। তারপর দারোয়ানের বাসার ভিতরে প্রবেশ করে তার স্ত্রীকে বলল, সব দরজা-জানালা বন্ধ করে আস, কাজ আছে।

দারোয়ানের স্ত্রী মালিকের মতলব : বুঝে ফেলল। যাই হোক দরজা জানালা বন্ধ করে এসে হাজির হলো। মালিক জিজ্ঞেস করল, সব দরজা বন্ধ করেছ? সে বলল, হ্যাঁ, একটি দরজা ছাড়া সব বন্ধ করেছি। মালিক বলল, সেটাও বন্ধ করে আস। দারায়ানের স্ত্রী বলল, সেটা বন্ধ করতে পারি না। মালিক বলল, সেটা আবার কোন দরজা? দারোয়ানের স্ত্রী বলল, যে দরজা দিয়ে আল্লাহপাক তাকিয়ে আছেন সে দরজা বন্ধ করতে পারি না। মহিলার এ কথা শুনে মালিকের মনে ঝড় বয়ে গেল। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর সেজদায় পড়ে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি ও তওবা করতে শুরু করে দিল।

আমাদের বুঝে আসে না : এ ধরনের হাজারো ঘটনা রয়েছে। এখান থেকে বুঝে আসে, আমল মানুষকে গুনাহ থেকে বিরত রাখে। আমাদের বুঝে আসে না যে, আমরা নামাজ পড়ি, অন্যান্য নেক আমলও করি, সঙ্গে সঙ্গে গুনাহও করি কেন? হজরতে সাহাবায়ে কেরাম নামাজ পড়তেন আমরাও নামাজ পড়ি। সাহাবায়ে কেরামের নামাজকে আল্লাহপাক আমাদের জন্য মাপকাঠি বানিয়েছেন। এখন বলুন, আমাদের নামাজ কি তাদের নামাজের মতো হয়? না হওয়ার একটি কারণ হলো- আমরা চেষ্টা করেও তাদের মতো পারি না। তখন আল্লাহর ফয়সালা হলো, চেষ্টা করেও যখন তোমরা সক্ষম না হও তখন আমি তোমাদের পরিপূর্ণ সওয়াব দান করব। কিন্তু অবহেলা ও অলসতা করার কারণে যদি তোমাদের নামাজ পরিশুদ্ধ না হয় তাহলে এর রিয়েকশন তথা বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। রিয়েকশন হলো, দুনিয়াতে বিভিন্ন বালা-মুসিবত আসবে আর আখেরাতের মুসিবত তো পরে আসবেই। আমি নামাজ পড়ছি আবার আমার দ্বারা গুনাহও হচ্ছে, তাহলে বুঝতে হবে আমার নামাজ পরিশুদ্ধ হচ্ছে না। আলেমদের কাছে গিয়ে প্র্যাকটিক্যাল অনুশীলন করা উচিত। আল্লাহপাক আমাদের তৌফিক দান করুন।

সেটাই নেক আমল : মোটকথা পরিশুদ্ধ আমল করতে হবে, পরিশুদ্ধ আমলকেই নেক আমল বলে। যে আমল এখলাস ও সুন্নত মোতাবেক হয় সেটাই নেক আমল। আমি বলি পরিশুদ্ধ হওয়টা হলো আমলের জন্য রুকন। যেমন নামাজের মধ্যে রুকু, সেজদা, কেরাত রুকন। এগুলো ছুটে যাওয়ার পর সেজদায়ে সাহো দিলেও নামাজ হবে না। ঠিক আমলেরও দুটি রুকন আছে। তা হলো- এখলাস ও সুন্নত। যে কোনো আমল এখলাসপূর্ণ ও সুন্নত মোতাবেক হতে হবে। কোনো আমলে এ দুটি না থাকলে ফলাফলও উল্টো হবে।

লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ

সর্বশেষ খবর