শুক্রবার, ১৪ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

জিম্মি স্বাস্থ্য খাত

দুষ্টচক্র নির্মূল করতে হবে

‘টাকা লাগে দেবে গৌরী সেন’। ফলে কেনাকাটায় প্রয়োজন-অপ্রয়োজনের বিচার নেই। বাড়তি দামে কেনা হচ্ছে কি না তাও দেখার দরকার নেই। এখানে গৌরী সেন হচ্ছে জনগণ। কারণ, রাষ্ট্রের সব কেনাকাটা হয় জনগণের টাকায়। ঋণ করে কিনলেও দায়টা দেশবাসীর ওপরই বর্তায়। কিন্তু কেনাকাটায় যে কমিশন এবং ৫০০ টাকার পণ্য লাখ টাকায় কেনার যে সাগরচুরির বাণিজ্য, তা যায় সিন্ডিকেট এবং তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করা কর্মকর্তাদের পকেটে। এ কারণে যে কোনো যন্ত্র-পণ্য কিনতে তারা খুবই আগ্রহী। যন্ত্রটি প্রকৃতই প্রয়োজন কি না, তা রাখার জায়গা করা হয়েছে কি না, চালানো ও রক্ষণাবেক্ষণের জনবল আছে কি না-বিবেচনা না করেই কেনা হয়। এই প্রবণতা সরকারি সব ক্ষেত্রেই, স্বাস্থ্য খাতে একটু বেশি। খুলনা মেডিকেলে ১০ কোটি টাকার যন্ত্র বাক্সবন্দি রয়েছে এক যুগ। অনেক হাসপাতালে বহু ব্যয়ে তৈরি আইসিইউ চালু করা হয়নি। এমআরআই মেশিন ব্যবহার হয়নি। অনেক হাসপাতালে মূল্যবান যন্ত্রপাতির সামান্য ত্রুটি মেরামতের উদ্যোগ নেই। সারা দেশে এমন হতদশার খবর লিখে শেষ করা যাবে না। জনগণের টাকায় কেনা পণ্য ও যন্ত্রপাতির সুবিধা লোটে চোরচক্র; ভাগ পায় অনেকেই। সিন্ডিকেটের ঘেরাটোপে বন্দি স্বাস্থ্যের কেনাকাটা কবজায় নিতে ফের সক্রিয় শীর্ষ হোতা। করোনাকালে যিনি অনেক অবৈধ সম্পদ অর্জন ও পাচার এবং মাস্ক-পিপিই কেনায় চরম দুর্নীতি করায় দুদকের তলবের মুখে দেশ ছাড়েন। যুক্তরাষ্ট্রে তার ৫০০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ জব্দ হয়েছে। কিন্তু অভিযুক্ত ধরাছোঁয়ার বাইরে। কিছুতেই স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি বন্ধ হচ্ছে না। কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি অব্যবহৃত পড়ে থাকছে। দেখার মানুষ নেই। কোথাও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় জরুরি পদক্ষেপটা আটকে থাকছে, কোথাও ভাগবাঁটোয়ারায় ভেস্তে যাচ্ছে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ। জয়জয়কার অসাধুদের দৌরাত্ম্যেরই। তাদের হাত নাকি অনেক লম্বা। এ দুরবস্থা কাটিয়ে উঠতে স্বাস্থ্য প্রশাসনকে শতভাগ সততা ও পেশাদারি দৃঢ়তা নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। মেরুদণ্ড সোজা করে, শক্ত হাতে দুর্নীতির খুঁটি উপড়ে ফেলতে হবে- যার জোরে দুষ্টচক্র সব অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর