শনিবার, ১৫ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

পরিবেশ রক্ষায় নারী

আফতাব চৌধুরী

পরিবেশ রক্ষায় নারী

মাঠে মাঠে সোনালি ফসল, গাছে গাছে ফলমূল, খাল-বিল, নদী-নালা, পুকুরে পুকুরে মাছের দল, নীল আকাশে অজস্র পাখি, বন-বনানী ও পশুপাখির অবাধ বিচরণ, নদী ও সাগরের অথৈ জল ইত্যাদি নিয়েই আমাদের পরিবেশ। ধরিত্রী তার মাটি, পানি, বায়ু আর প্রাকৃতিক সম্পদ দ্বারা  মানুষকে পানি, আহার ও আশ্রয় দিয়েছে।

মানুষ সভ্যতার বাহন। আবহমানকাল থেকে প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করে নগরায়ণ ও শিল্পায়নের মাধ্যমে মানুষ সভ্যতাকে অগ্রসর করে নিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে উন্নয়ন বলতে আমরা একটি স্থিতিশীল ভারসাম্য উন্নয়নকেই বুঝি, যেখানে শুধু গড় আয় নয় বরং গড় আয়ু, খাদ্য ও খাদ্য প্রাণের ব্যবহার বিশুদ্ধ পানি, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা প্রাপ্যতা দিয়েই।

মানুষের জীবনধারণের প্রতিটি স্তরে মান উন্নয়নের সঙ্গে রয়েছে পরিবেশের সম্পর্ক। মানুষই এ পরিবেশ আর মান উন্নয়ন উভয়ের সঙ্গেই সংযোগকারী, একাধারে উৎপাদনকারী ও অন্যদিকে ভোক্তা। কাজেই বলা যায়, মানুষ পরিবেশ ও উন্নয়ন একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে। আর এ মানুষের মধ্যে অর্ধেকই যে নারী তা কারও অজানা নয়। আজকাল যেহেতু ঘরে বাইরে সব ক্ষেত্রেই নারীর পদচারণা তাই একজন শিক্ষিত নারী পারেন চারদিকের পরিবেশ রক্ষায় আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসতে।

বিভিন্ন কারণে পরিবেশ দূষিত হয় এবং এতে নারী সমাজ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও দূষিত হচ্ছে। এ ছাড়া অত্যধিক রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার পয়ঃনিষ্কাশন, ময়লা নিষ্কাশনের বৈজ্ঞানিক উপায় না জানা, পোকামাকড়, জীবজন্তু পুঁতে না ফেলা এবং পানিতে ভাসিয়ে দেওয়া, উন্নত বিশ্বের রাসায়নিক ও শিল্প বর্জ্য পদার্থ উন্নয়নশীল দেশের সমুদ্র উপকূলে নিক্ষেপ, পলিথিন ধ্বংস না করে পানিতে ফেলে দেয় ইত্যাদি কারণে পানি দূষিত হয়।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে জনায়নে অতিরিক্ত কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণ, বন ধ্বংসের ফলে অক্সিজেন সৃষ্টি না হওয়া অথবা কার্বন ডাইঅক্সাইড বৃক্ষের ব্যবহারে না লাগা, শিল্পকারখানা, যানবাহন ও ধূমপানের দ্বারা নিঃসৃত দূষিত ধোঁয়া, গ্যাস নিঃসরণ, মলমূত্র, গৃহের বর্জ্য পদার্থের যথাযথ নিষ্কাশন বা ধ্বংস না করা, যেখানে সেখানে মলমূত্র ত্যাগ করা ও ময়লা ফেলা ইত্যাদি কারণে বায়ু দূষিত হচ্ছে। যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যুদ্ধবিগ্রহ কিংবা যে কোনো বিশৃঙ্খলতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় নারীসমাজ। আর নারীর কথা বলতে গেলে অবধারিতভাবে এসে যায় শিশুদের কথা। পুরুষ কিংবা মহিলা, যেই ধূমপায়ী হোক না কেন এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় গর্ভবতী মহিলা এবং তার পেটের সন্তান। পরিবেশ দূষণে নারী সমাজ যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সেভাবে কিন্তু তাদের রক্ষার কথা বলা হচ্ছে না। গৃহস্থালির সবার জন্য পানি, রন্ধনকৃত খাবার, জ্বালানি, পশুখাদ্য আহরণসহ জীবনধারণের বহু ক্ষেত্রে ও কাজের দায়িত্ব মেয়েরা পালন করে থাকে, পুরুষরা নয়।

সৃষ্টির প্রতীক নারী। তাই সৃষ্টিশীল নারী বৃক্ষ নিধনের চেয়ে পরম মমতায় লাগানো বৃক্ষ চারাটিকে রক্ষণাবেক্ষণ করে, পানি সেচ করে অপত্য স্নেহে লালন করে গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি আপন সন্তানের মতোই।

ধরিত্রী সম্মেলনের WOMEN’S ACTION AGENDA-2। এ পৃথিবীর জন্য সুস্থ পরিবেশ সংরক্ষণের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে নারীকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। বায়ু, পানি, ভূমি বা মাটি, আকাশ, সমুদ্র, পাহাড়, পর্বত, আবহাওয়া, গাছপালা, জীবজন্তু, এমনকি পোকামাকড় পর্যন্ত যা কিছু প্রকৃতির দান সবকিছুকে আন্তরিকভাবে পরম মমতায় দূষণের হাত হতে রক্ষা করতে পারে একমাত্র নারী সমাজ। নারী যদি প্রতি ঘরে ঘরে শুচিশুদ্ধ ও নির্মল পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করে তবে পৃথিবীর কোথাও আর পরিবেশ দূষণ থাকবে কি?

দেশে নারী শিক্ষার হার তুলনামূলকভাবে কম। পরিবেশ রক্ষায় নারীকে এগিয়ে আসতে হলে সবার আগে প্রয়োজন শিক্ষার। নারীদের বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। সামান্য বিজ্ঞান শিক্ষা নারীদের জ্ঞান দিতে পারে যাতে সুষম খাদ্য পাওয়া যায়। অতিরিক্ত সিদ্ধ খাদ্য দেহের পুষ্টি জোগায় না বরং খাদ্যের উপকারিতা নষ্ট করে। এসব জানা বিজ্ঞানের সাধারণ ব্যাপার।

পানির স্বল্পতা পরিবেশ পরিষ্কার রাখার অন্তরায় অথচ ব্যবহৃত থাকাকালে পানির কল বন্ধ রেখে খারাপ হয়ে গেলে তাৎক্ষণিক মেরামত করা, পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ যথাসম্ভব কম খরচ করে কিছু সম্পদ সংরক্ষণ করতে পারেন শিক্ষা প্রাপ্ত নারী গৃহিণী।  তারা ইচ্ছা করলে বাড়ির আনাচে-কানাছে, টবে, ছাদে অধিক হারে বৃক্ষ, শাক-সবজি, কলা, পেঁপে, লেবু, মরিচের গাছ লাগিয়ে বেশ কিছু আয় করতে পারেন এটি তাদের উপার্জনের একটি মাধ্যম হতে পারে। এভাবে পারিবারিক অসচ্ছলতা খানিকটা হলেও দূর করে সুন্দর পরিবেশ গড়ে তুলতে পারেন তারা।

♦ লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

বৃক্ষ রোপণে জাতীয় পুরস্কার

(প্রথম স্বর্ণপদক) প্রাপ্ত

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর