বৃহস্পতিবার, ২০ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

প্রতিভাহীন তারকাদের জন্ম দিচ্ছে অভাগা দেশ

তসলিমা নাসরিন

প্রতিভাহীন তারকাদের জন্ম দিচ্ছে অভাগা দেশ

লিভ টুগেদার বা লিভ ইন সম্পর্ককে বাংলায় আমি একত্রবাস বলি। বাংলাদেশের অনেকে বলছে এই সম্পর্কটি অবৈধ, এই সম্পর্ক সমাজকে কলুষিত করে। বাংলাদেশের কোনো আইন নেই একত্রবাসের বিরুদ্ধে। সুতরাং এটি অবৈধ হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমি মনে করি না পরস্পরের সম্মতিতে যে একত্রবাস করছে মানুষ, সেটি সমাজকে কোনোভাবে কলুষিত করে। যে একত্রবাসের ভিত্তি ভালোবাসা, সেটি বরং ঝগড়া-অশান্তিময় বিবাহিত দম্পতির সংসারের চেয়ে অনেক ভালো। সমাজকে কলুষিত করে মানুষের অনেক অপকর্ম। সেগুলো নিরন্তর ঘটেই চলেছে। নারীর অধিকার লঙ্ঘন, দরিদ্রের অধিকার লঙ্ঘন, পশু নির্যাতন, নারী নির্যাতন, শিশু শ্রম, প্রতারণা, মিথ্যাচার, যৌন হেনস্তা, বধূ নির্যাতন- এসব অপকর্ম বাংলাদেশের গ্রাম, শহর, নগর প্রতিটি স্থানে অত্যন্ত স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হয়। বরং নারীর সমানাধিকারই সমাজে অস্বাভাবিক। এটিই মানুষকে অস্বস্তি দেয়, কিছু মানুষকে তো রীতিমতো ক্রোধান্বিত করে।

বাংলাদেশে বয়স্ক পুরুষ অল্প-বয়সী মেয়েদের দিকে লোভের হাত বাড়ায়। বয়স্ক পুরুষরা ধনী হলে তো কথাই নেই। পরিবারের অনুমতি নিয়ে অথবা না-নিয়ে দিব্যি বিয়ে করে ফেলতে পারে অল্প-বয়সী মেয়েদের। এর বিপরীত কোনো চিত্র আমরা দেখি না। বয়স্ক মহিলারা অল্পবয়সী ছেলেদের দিকে সাধারণত লোভের হাত বাড়ায় না। যদি স্বামী বা প্রেমিকের চেয়ে স্ত্রীর বা প্রেমিকার বয়স বেশি হয়, সে বড়জোর পাঁচ ছ’ বছর। এ নিয়েই সমাজে ঢি ঢি পড়ে যায়। কুড়ি থেকে তিরিশ বছরের পার্থক্য তো অলীক ঘটনা।

কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় লক্ষ্য করছি এই অলীক ঘটনাটি ঘটছে। লায়লা আক্তার আর প্রিন্স মামুনের রিল বা ছোট ভিডিওগুলো চোখে পড়ার পর মনে হয়েছে এরা সমাজের প্রথা ভাঙছে। কিন্তু আরও কিছুদিন লক্ষ্য করার পর আমার মনে হলো, প্রথা ভাঙার কোনো ঘটনা এই সম্পর্কে ঘটছে না। এটি নেহাতই এক বয়স্ক মহিলা আর তার জিগোলোর সম্পর্ক।

আমার বিশ্বাস টিকটিকার প্রিন্স মামুন ছিল মামুনের কথিত বিগ ফ্যান লায়লা আক্তারের জিগোলো। অল্প বয়সী সেসব তরুণকে জিগোলো বলা হয় যারা টাকা-পয়সা আর নানা উপহার সামগ্রীর বিনিময়ে বয়স্ক মহিলাদের সঙ্গ দেয়। ৪৮ বছর বয়সী লায়লা ২২/২৩ বছর বয়সী মামুনকে জিগোলো হিসেবেই রেখেছিল। মামুনকে সে প্রায়ই নানা কিছু উপহার দিত, উপহার দিয়ে সুদর্শন তরুণটিকে নিজের কাছে রাখত আর তার সঙ্গ উপভোগ করত। মামুনকে শুধু যৌনসঙ্গী হিসেবে ব্যবহার করতো না, মামুনকে সে টাকা উপার্জনের জন্যও ব্যবহার করত। মামুনের পেছনে লায়লা যত টাকা ব্যয় করত, সম্ভবত তার চেয়ে বেশি সে মামুনের সঙ্গে ভিডিও বানিয়ে আয় করত। জনপ্রিয় টিকটকার মামুন নাচত বা গানের সঙ্গে ঠোঁট মেলাত, তার পাশে রং করা পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে থাকত লায়লা- এসব অর্থহীন রুচিহীন ভিডিও টিকটক, ইউটিউব, ইন্সটাগ্রাম, ফেসবুকে আপলোড করত লায়লা। শুধু নাচ গানের ভিডিও নয়, মামুন খাচ্ছে, মামুন হাসছে, মামুন খেলছে- সব কিছুর ভিডিও তার করা চাই, মামুনের জন্য ভিউ এত বেশি ছিল যে, লায়লা এ থেকে ভালো টাকা রোজগার করত। করতই বা বলি কেন, রোজগার এখনো করছে। মামুনের কাঁধে ভর করেই লায়লা এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, তার ফ্যানপেজও তৈরি হয়ে গেছে।

লোকে বলে, লায়লা আর মামুনের মতো নিম্নরুচির লোকদের নিয়ে ভেবে প্রগতিশীল মানুষরা অযথা সময় নষ্ট করছে। আমার মনে হয় বাংলাদেশের সমাজ কোন দিকে যাচ্ছে দেখতে গেলে ওদের প্রসঙ্গ আসেই। সমাজের খুব বড় একটা অংশ হিরো আলম আর লায়লা মামুন জাতীয় লোকদের ভক্ত। রুচির দুর্ভিক্ষে এমন লোকই সমাজে তারকা হয়ে ওঠে। কয়েক বছর আগে লাইকি নামের অ্যাপে মামুনের ফলোয়ার ছিল দশ মিলিয়ন। এত বেশি ফলোয়ার আর কারও ছিল না। কী করত মামুন? নিজের চুলগুলোকে নানা রকম রঙে রাঙাতো আর নানা রকম চটুল গানের সঙ্গে ঠোঁট মিলিয়ে কয়েক পাক নাচতো। এহেন মামুনকে লায়লা মাই কিং বা আমার রাজা বলে সম্বোধন করত।

লায়লা ধনীর কন্যা, ধনীদের প্রাক্তন স্ত্রী। মামুন গ্রামের দরিদ্র পিতা-মাতার সন্তান। ঢাকা শহরে মামুনের কোনো থাকার জায়গা নেই বলে লায়লা অভিজাত এলাকায় নিজের বাড়িতে নিজের উদ্যোগে এবং নিজের উৎসাহে মামুনকে এনে রেখেছে। মামুনকে খাইয়েছে, পরিয়েছে। দামি উপহারসামগ্রীর বিনিময়ে মামুনকে সারা জীবনের জন্য কিনে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। দরিদ্র পরিবারের ছেলে মামুন যা চাইত, লায়লা তাকে তা-ই দিত। পেতে পেতে পাওয়াটাই স্বাভাবিক বলে মনে হতো তার। লায়লা সর্বত্র বলে বেড়ালো মামুন তাঁর লাইফ পার্টনার। এক সময় মামুনকে বিয়ে করার জন্য লায়লা উন্মাদ হয়ে ওঠে। মামুনের কিন্তু কোনো ইচ্ছে নেই তার দ্বিগুণ বয়সী দু-দুবার বিয়ে হওয়া দুই সন্তানের মা’কে বিয়ে করার। চাপাচাপি করলে মামুন শর্ত দেয় তাকে ঢাকা শহরে একখানা বাড়ি কিনে দিতে হবে, অথবা লায়লার নিজের বাড়িটিই তাকে লিখে দিতে হবে। পাকা জিগোলোর মতোই ব্যবহার মামুনের। নাকি মামুন জেনেশুনে এমন এক শর্ত দিয়েছে, যে শর্ত লায়লার পক্ষে মানা সম্ভব নয়, এবং তাহলেই শর্ত না মানার অভিযোগ করে লায়লার নাগপাশ থেকে সে মুক্তি পাবে!

মামুনের পেছনে অঢেল খরচ করে লায়লা হয়তো ভেবেছিল নিজের স্বপ্ন পূরণ করবে, মামুনকে নিজের করে পাবে। কিন্তু মামুন চায় বাড়ি। মামুনকে লায়লা বাড়ি লিখে দেবে কথা দিয়েও দেয় না। লায়লার দরকার সঙ্গ, মামুনের দরকার টাকা। এই সম্পর্কটি শুরু থেকেই ছিল দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্ক। বাড়ি না পেয়ে লায়লার সঙ্গে তিন বছরের সম্পর্কের ইতি টানলো মামুন। মামুন অবশ্য বলে সে সম্পর্কের ইতি টেনেছে লায়লার আসল চেহারা প্রকাশ হওয়ার পর, আসল চেহারায় ভালোবাসা নেই, আছে স্বার্থ, মামুনকে ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিখ্যাত হওয়ার স্বার্থ, টাকা রোজগারের স্বার্থ।

সম্পর্ক গড়া যেমন মানবাধিকারের অংশ, সম্পর্কের ইতি টানাও মানবাধিকারের অংশ। বিচ্ছেদ মেনে নেওয়া উচিত ছিল লায়লার, কিন্তু লায়লা মেনে নেয় না। নিজের বয়সের দিকেও তাকায় না সে। বরং বয়স কম দেখানোর জন্য কড়া মেকআপ করে। কেউ কেউ তো বলে মুখে নানা রকম সার্জারিও নাকি করেছে সুন্দরী হওয়ার জন্য।

যদিও যে কারও যে কোনো বন্ধুত্বের, প্রেমের, বিয়ের, এমনকী জিগোলোর সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলার অধিকার আছে, কিন্তু মামুনকে সে অধিকার কিছুতেই দিতে চায়নি লায়লা। একবার দুজনের মধ্যে ঝগড়া-ঝাটি এমন হলো যে, লায়লা মামুনের গায়ে হাত তুলল, মামুনও একই কাজ করল, লায়লার মুখ-চোখে রক্ত জমাট বেঁধে গেল, তারপরও মামুনের সঙ্গ ত্যাগ করতে চায়নি লায়লা। আগেও নাকি সে মামুনের মার খেয়েছে। মামুনের মার খাবে, কিন্তু মামুনকে ছাড়া বাঁচবে না। মামুন যতবারই তার বাড়ি ছেড়ে চলে যায়, ততবারই তার হাতে পায়ে ধরে তাকে বাড়িতে ফেরত নিয়ে আসে লায়লা। সামাজিক মাধ্যমে সারাক্ষণই মামুনের জন্য তার কান্নাকাটি চলতে থাকে, মিডিয়ার লোক নিয়ে চলে যায় মামুনের গ্রামের বাড়িতে। দুনিয়াকে দেখায় মামুনকে সে খুব ভালোবাসে। মামুনকে সত্যিই যদি ভালোবাসত, মামুন তার ‘পায়ের নখের যোগ্য নয়’- এ কথা বলত না বারবার, মামুনের বিরুদ্ধে মামলা করে তার সর্বনাশ করত না! লায়লার মতো চালাক চতুর নয় মামুন। সে বিশ্বাস করেছিল লায়লা তার ফ্যান, লায়লা তাকে ভালোবাসে, লায়লা তার কোনো ক্ষতি করবে না। কোনো দিন সে নিশ্চয়ই কল্পনাও করতে পারেনি, লায়লা তাকে একদিন জেলের ভাত খাওয়াবে।

মামুনের পারিবারিক সমস্ত তথ্য প্রকাশ করলেও লায়লা তার নিজের বয়স, তার বিয়ে, তার সন্তান ইত্যাদি পারিবারিক কোনো তথ্যই কোনো দিনই প্রকাশ করেনি। মিডিয়া কোনো প্রশ্ন করলে সে নানা কায়দা করে উত্তর এড়িয়ে গেছে। মামুনের পরিবারের দারিদ্র্য নিয়ে, মামুন এবং তার পরিবারের সবার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে কম তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য লায়লা করেনি। নিজের ধন-দৌলত নিয়ে লায়লা সব সময় গর্ব করেছে, নিজের ডিগ্রি, নিজের বেতন, নিজের বাড়ি গাড়ি নিয়ে তাঁর অহংকারের শেষ নেই। আর মামুনকে কখন কত টাকা দিয়ে সাহায্য করেছে, মামুনকে কত টাকা দামের কী কবে কখন উপহার দিয়েছে, সবই বারবারই দুনিয়ার সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে।

মামুন লায়লাকে বিয়ে করতে রাজি নয় বলে লায়লা এখন মামুনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা ঠুঁকে দিয়েছে, মামুন নাকি তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেছে। এমন বানোয়াট কথা অসৎ না হলে বলা যায় না। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে যৌন সম্পর্ক করলে প্রতারণা হয়, ধর্ষণ হয় না। অনুমতি ছাড়া যৌন সম্পর্ক করলে হয় ধর্ষণ। লায়লার তো এ ব্যাপারে অনুমতির কোনো অভাব ছিল না। বরং খুব বেশি রকম আগ্রহই ছিল। মামুনকে পাওয়ার জন্য শেষে এমনই মরিয়া হয়ে উঠেছে লায়লা যে সে মামুনকে বাড়ি লিখে দেবে প্রতিশ্রুতি দিল, কাকুতি মিনতি করতে লাগল, মামুন যেন তার কাছে ফিরে আসে। মামুন তবু ফিরে আসে না। মামুন যে তাকে লাইফ পার্টনার মনে করছে না, মামুন যে তাকে ভালোবেসে বিয়ে তো করবেই না, এমন কি বাড়ি উপহার দিলেও করবে না, এটি লায়লার সহ্য হয়নি।

লায়লা যখন বুঝল মামুন তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে, সে তার নিজের শর্তে জীবনযাপন করছে, তখন সে মামুনকে হুমকি দিতে থাকে তাকে বিয়ে না করলে, বা তার সঙ্গে একত্রবাস না করলে, তার সঙ্গে আগের মতো ‘কন্টেন্ট ক্রিয়েট’ না করলে বা ভিডিও না বানালে সে মামুনের বিরুদ্ধে দায়ের করা ধর্ষণের মামলা তুলে নেবে না। যখন দেখেছে মামুনকে ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না, তখন বলেছে, তাকে নব্বই লক্ষ টাকা না দিলে সে মামলা তুলে নেবে না। মামুনকে কী করে হেনস্তা করা যায়, কীভাবে তাকে নিঃস্ব করা যায়, লায়লা ভালো জানে। এবং সে তা বেশ গুছিয়েই করছে। এভাবেই লায়লা তার অনুদার এবং প্রতিশোধপরায়ণ চেহারাটি জনসমক্ষে প্রকাশ করছে।

নারী হয়ে জন্ম নিয়েছে বলেই লায়লা ভালো আর সত্যবাদী, এ আমি মনে করি না। পুরুষ যেমন বদমাশ হতে পারে, নারীও তেমন বদমাশ হতে পারে। মামুনের প্রেমিকা এবং শয্যাসঙ্গী হিসেবে নিজেকে লায়লা সেলিব্রিটি ভাবে। মামুনকে জেলে পাঠিয়েও সে নিজেকে সেলিব্রিটি ভেবেছে। মামুনের বিরুদ্ধে বদনাম তো আছেই, লোকের সহানুভূতি অর্জনের জন্য যা বলা দরকার সবই মিডিয়াকে বলেছে, যেসব কথা আগে অবশ্য কখনো কোথাও বলেনি। যেমন তার এক কন্যা সন্তান প্রতিবন্ধী। যেমন তাকে ৩০ লক্ষ টাকা ধার করতে হয়েছে মামুন আর মামুনের পরিবারকে সাহায্য করার জন্য। যেমন কন্যাদের জন্য তার কিছুই সঞ্চয় নেই।

মামুনের বড় দুই ভাই বোন বোবা। তারা কথা বলতে পারে না। তার অসহায় মা-বাবা আর ভাই বোনের জন্য টিকটক থেকে উপার্জিত টাকা দিয়ে একখানা একতলা বাড়ি বানিয়েছে মামুন, পরিবারের মানুষগুলোর মাথা গোজার ঠাঁই হয়েছে। কিছুদিন আগে ঢাকায় একটি সেলুনের ব্যবসা শুরু করেছে সে। হাজারো ভক্ত মামুনকে দেখতে এসেছিল। সেই সেলুনের উদ্বোধনে লায়লা গিয়েছে। প্রেস কনফারেন্সের ভিড়ে সবাইকে দেখিয়ে নিজের ওড়না দিয়ে মামুনের মুখের ঘাম মুছে দিয়ে দরদি প্রেমিকার অভিনয় করে আসার দুই দিন পর লায়লা ধর্ষণের মামলা ঠুঁকে দিয়েছে মামুনের বিরুদ্ধে।

লায়লার আত্মীয়স্বজন প্রভাবশালী, ক্যান্টনমেন্ট থানার পুলিশও মনে হয় প্রভাবশালীর আদেশ পালন করতে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকে। সত্যিকার নারীনির্যাতক আর ধর্ষকরা দেশময় ঘুরে বেড়াচ্ছে, পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে না। আর মামুনের মতো ধর্ষণের সাতে পাঁচে নেই ছেলেকে তড়িঘড়ি গ্রেফতার করেছে। যে তরুণ লায়লার চক্রান্তের শিকার, সে এখন শিকার হচ্ছে মিথ্যে মামলার, ফেঁসে গেছে আইনের মারপ্যাঁচে। মামুনের আত্মীয়স্বজন লায়লার আত্মীয়স্বজনের মতো প্রভাবশালী নয়। সুতরাং মামুনকে ভুগতে হচ্ছে, ভুগতে হবে। মামুনকে মুক্ত করার জন্য, আশা করছি, মানবাধিকারের জন্য যে আইনজীবীরা লড়েন, এগিয়ে আসবেন।

লায়লা আর মামুনের এই দ্বন্দ্ব বা লড়াই আসলে নারীবাদ আর পুরুষতন্ত্রের লড়াই নয়, এ ধনী আর দরিদ্রের লড়াই, সবল আর দুর্বলের লড়াই, দম্ভ আর অসহায়ত্বের লড়াই, শিকারি আর শিকারের লড়াই। এই লড়াই শুধু লায়লা আর মামুনের মধ্যেই নয়। অগুনতি মানুষের মধ্যে এই লড়াই নিরন্তর চলছে। বৈষম্যের সমাজে এটিই আজ বাস্তবতা। ধনী ছড়ি ঘোরাবে, দরিদ্র ভুগবে। ধনীর আদেশ অমান্য করলে দরিদ্রের সর্বনাশ হবে। বাংলাদেশের জেলের ভিতর, আমি নিশ্চিত, দোষীর চেয়ে নির্দোষের সংখ্যা বেশি।

বাংলাদেশের যুবসমাজ লায়লা আর মামুনকে তারকা বানিয়েছে। তাদের প্রতিভা কড়া মেকআপে আর কড়া মেলোড্রামায়। তারা তারকা হয়েছে, এ দোষ তাদের নয়। দোষ সমাজের। জনগণ বুদ্ধি খাটাতে হয় না এমন জিনিস দেখতে পছন্দ করে। তারকাদের মধ্যে সাধারণ মানুষ তাদের নিজেদের প্রতিচ্ছবি দেখে। বুদ্ধিদীপ্ত মানুষের ভাষা তারা বোঝে না, প্রতিভার দ্যুতি তাদের চোখ ঝলসে দেয়। ধীরে ধীরে দেশটি প্রতিভাহীন মানুষের দখলে চলে যাবে। এরই নমুনা আমরা পাচ্ছি।

লেখক : নির্বাসিত লেখিকা

সর্বশেষ খবর