শুক্রবার, ২১ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

জুমার দিনের গুরুত্ব

আবদুর রশিদ

জুমার দিনের গুরুত্ব

প্রত্যেক উম্মতের জন্য আল্লাহ এমন একটা দিন নির্ধারণ করে দিয়েছেন যে দিনে তারা একত্রিত হয়ে তাঁর ইবাদত করবে খুশির পর্ব হিসেবে। এ উম্মতের জন্য ওইদিন হচ্ছে শুক্রবারের দিন। কেননা, ওটা হচ্ছে ষষ্ঠ দিন, যেদিন আল্লাহ সৃষ্টির কার্যের পরিপূর্ণতায় পৌঁছিয়ে দেন এবং সমস্ত মাখলুকের সৃষ্টি সমাপ্ত হয়। আর তিনি তাদের প্রয়োজনীয় সমস্ত নিয়ামত দান করেন।

হজরত আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, এক দিন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো- জুমার দিনকে জুমার দিন বলা হয় কেন? তিনি বললেন, কেননা সেই দিনে তোমার পিতা হজরত আদম (আ.)-এর কাদামাটি একত্র করা হয়েছে, জুমার দিনেই বিশ্বের ধ্বংস সাধন ও জীবনকুলকে পুনঃউঠানো হবে। জুমার দিনেই কঠোরভাবে কাফিরদের পাকড়াও করা হবে এবং জুমার দিন এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে যদি কেউ তখন আল্লাহকে ডাকে আল্লাহ তার ডাকে সাড়া দেন (আহমাদ)।

হাফেজ আব্দোবনো হুমাইদ এবং হাফেজ আবদুর রাজ্জাক প্রসিদ্ধ তাবিয়ি ইবনে শিরীন থেকে বর্ণনা করেছেন, রসুল (সা.) মদিনায় হিজরত করার এবং জুমার নামাজের হুকুম আসার আগে একবার মদিনাবাসী সমবেত হলে আনসারগণ বলেন, ইহুদিরা প্রতি সপ্তাহে এক দিন একত্রিত হয় এবং খ্রিস্টানরাও এক দিন সমবেত হয়। সুতরাং আমাদেরও উচিত কোনো এক দিন জমা হয়ে আল্লাহর জিকর ও শোকর আদায় করা। অতঃপর এর জন্য আনসারগণ শুক্রবার দিনটিকে ধার্য করেন এবং আসআদ ইবনে যুরারার বাড়িতে জমায়েত হন। তিনি সবাইকে নিয়ে দুই রাকাত নামাজ পড়ান এবং কিছু ওয়াজ নসিহত করেন। ফলে লোকদের জমায়েত হওয়ার কারণে ওই দিনটির নাম জুমার দিন অর্থাৎ জমায়েতের দিন নামে অভিহিত হয়। বর্ণিত আছে, মুসা (আ.)-এর বনি ইসরাইলের জন্য এই দিনটিকেই নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু তারা এই দিন থেকে সরে গিয়ে শনিবারকে গ্রহণ করে। তারা শনিবারকে এই হিসাবে গ্রহণ করে যে, শুক্রবারে সৃষ্টিকার্য সমাপ্ত হয়েছে। শনিবারে আল্লাহ কোনো জিনিস সৃষ্টি করেননি। সুতরাং তাওরাত অবতীর্ণ হলে তাদের জন্য ওইদিনকেই অর্থাৎ শনিবারকেই নির্ধারণ করা হয়। আর তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়, তারা যেন দৃঢ়তার সঙ্গে ওইদিনকে ধারণ করে। তবে এ কথা অবশ্যই বলে দেওয়া হয়েছিল, রসুল (সা.) যখনই আসবেন তখনই সবকিছু ছেড়ে দিয়ে শুধু তাঁরই অনুসরণ করতে হবে। ওই কথার ওপর তাদের কাছে ওয়াদাও নেওয়া হয়। সুতরাং শনিবারের দিনটি তারা নিজেরাই বেছে নিয়েছিল এবং শুক্রবারকে ছেড়ে দিয়েছিল (ইবনে কাছির)।

হজরত ঈসা (আ.)-এর যুগ পর্যন্ত তারা এর ওপরই থাকে। বলা হয়েছে, পরে ঈসা (আ.) কয়েকটি মানসুখ হুকুম ছাড়া তাওরাতের শরিয়তকে পরিত্যাগ করেননি এবং শনিবারের হিফাজত তিনি বরাবরই করে এসেছিলেন। যখন তাঁকে উঠিয়ে নেওয়া হয় তখন তার পরে কুসতুন তিন বাদশাহর যুগে শুধু ইহুদিদের হঠকারিতার কারণে ওই বাদশাহ পূর্বদিককে তাদের কিবলা নির্ধারণ করে এবং শনিবারের পরিবর্তে রবিবারকে ধার্য করে নেয়।

আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, আমরা দুনিয়ায় সর্বশেষে আগমনকারী, আর কিয়ামতের দিন আমরা সবারই আগে থাকব। তাদের আল্লাহর কিতাব আমাদের আগে দেওয়া হয়েছিল এবং এ দিনটিকেও আল্লাহ তাদের ওপর ফরজ করে ছিলেন। কিন্তু তাদের মতবিরোধের কারণে তারা তা নষ্ট করে দিয়েছে। আল্লাহ আমাদের ওপর হিদায়েত করেছেন। সুতরাং এসব লোক আমাদের পেছনেই রয়েছে। ইহুদিরা এক দিন পরে এবং খ্রিস্টানরা দুই দিন পরে (বুখারি)।

হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল (সা.) বলেছেন, আমাদের পূর্ববর্তী উম্মতকে আল্লাহ জুমার দিন থেকে বঞ্চিত করেছেন। ইহুদিদের জন্য হলো শনিবারের দিন এবং খ্রিস্টানদের জন্য হলো রবিবারের দিন। আর আমাদের জন্য হলো শুক্রবারের দিন। সুতরাং এই দিক দিয়ে যেমন তারা আমাদের পরে রয়েছে কিয়ামতের দিনেও তারা আমাদের পেছনেই থাকবে। দুনিয়ার হিসাবে আমরা পেছনে, আর কিয়ামতের হিসেবে আগে। অর্থাৎ সমস্ত মাখলুকের মধ্যে সর্বপ্রথম ফয়সালা হবে আমাদের (মুসলিম)। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুল (সা.) তাঁর হাতটি ধরে বলেন, আল্লাহ জমিন, আসমান এবং এই দুইয়ের মধ্যস্থিত সবকিছু সৃষ্টি করার পর সপ্তম দিবসে আরশের ওপর অধিষ্ঠিত হন (নাসাঈ)। হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর জুমা পেশ করা হয়, তখন হজরত জিবরাইল (আ.) রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলেন, তাঁর হাতে ছিল একটি সাদা আয়নার মতো জিনিস। যার মাঝখানে ছিল কালো দাগের মতো একটি বিন্দু। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটা কী? হে জিবরাইল! তিনি বললেন, এটি জুমা। আপনার রব আপনার ওপর একে পেশ করেছেন। যাতে আপনার ও আপনার কওমের ঈদ হয় (তারগিব ওয়াত তারহিব)।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর