শুক্রবার, ২১ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

ইমান থাকলেই জান্নাতে যাওয়া যাবে

আল্লামা মাহ্‌মূদুল হাসান

গুনাহ করলেই জাহান্নামে যেতে হবে এটা আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের আকিদা নয়। এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, সব গুনাহগারই ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে না, বরং জাহান্নামে যাবে, তবে অল্প কয়েকদিন জাহান্নামে থাকার পর আল্লাহপাক তাকে ক্ষমা করে দেবেন। এই ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে আল্লাহপাক নবীগণকে বলবেন-

তোমরা জাহান্নামে গিয়ে দেখো, যাদের অন্তরে অণুপরিমাণ ইমান আছে তাদের জাহান্নাম থেকে বের করে জান্নাতে নিয়ে যাও। আল্লাপাকের এ নির্দেশ পাওয়ার পর নবীগণ অণুপরিমাণ ইমানওয়ালাদের খুঁজে বের করে জান্নাতের দরজার সামনের হাউসে গোসল করিয়ে তাদের জান্নাতে পৌঁছে দেবেন। তারপর আল্লাহপাক নবীদের জিজ্ঞেস করবেন, আরও কোনো ইমানদার জাহান্নামে আছে? নবীগণ বলবেন, না। আল্লাহপাক বলবেন, ভালো করে দেখো। নবীগণ বলবেন, না ভালো করে দেখেছি কোনো ইমানদার জাহান্নামে নেই। আল্লাহপাক বলবেন, তোমরা যা বের করেছো আমি তার চেয়ে হাজার গুণ বেশি বের করব। সেদিন আল্লাহপাক একশগুণের নিরানব্বই গুণ দয়া প্রকাশ করবেন। আল্লাহপাক বলবেন, এখন আমি নিজ হাতে বের করে আনব। অতঃপর এ পর্যন্ত যত লোক জান্নাতবাসী হয়েছেন তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি লোক জান্নাতে পাঠাবেন, যাদের নবীগণও তালাশ করে পাননি, ফেরেশতারাও পাননি। তাদের কোনো আমল নেই। আল্লাহপাক তাঁর নিজ দয়ায় ক্ষমা করে তাদের জান্নাত দান করবেন। তাদের কপালে লেখা থাকবে- এদের কোনো আমল নেই, এরা জান্নাতে যাওয়ার যোগ্য নয়; এখন স্বাধীনতা দিবসে যেমন অনেক অপরাধী কারাগার থেকে সাধারণ ক্ষমা পেয়ে বের হয়ে আসে। অনুরূপ আল্লাহপাক নিজ দয়ায় জাহান্নামিদের জাহান্নাম থেকে বের করে আনবেন। জান্নাতে যাওয়ার পর যখন তারা জান্নাতিদের সঙ্গে পরস্পর দেখা-সাক্ষাৎ করবে তখন জান্নাতিরা তাদের কপালে লেখা দেখে বলবে আপনারা জাহান্নামে ছিলেন, তাই না? আপনাদের কোনো আমল নেই, আল্লাহপাক নিজ দয়ায় আপনাদের জান্নাত দান করেছেন। কিন্তু তারা কোনো জবাব দেবেন না।

কারণ হলো, তারা আসলেই অপরাধী। যারা অপরাধ করে তারা মানসিকভাবে দুর্বল থাকে। এমনকি অপরাধী তওবা করার পরও যখন অপরাধের কথা মনে পড়ে তখনো দুর্বল হয়ে যায়। এজন্যই বলা হয়েছে, জীবনের শুরু থেকে নিজেকে এমন পাক পবিত্র রাখো, যাতে চক্ষু বন্ধ করলে মনে হয়, জীবনেও একটি গুনাহ করিনি। অন্যথায় গুনাহ হয়ে যাওয়ার পর অনুতপ্ত হয়ে তওবা করার পর আল্লাহপাক ক্ষমা করে দিলেও গুনাহের কথা স্মরণ হলে মন দুর্বল হয়ে যায়। হাদিসে শাফায়াতে বর্ণিত হয়েছে, কিয়ামতের দিন হাশরবাসী কষ্টে অসহ্য হয়ে সবাই মিলে পর্যায়ক্রমে হজরত আদম (আ.), তারপর হজরত নূহ (আ.), তারপর হজরত মুসা (আ.), এরপর হজরত ঈসা (আ.)-এর কাছে যাবে আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করার আবেদন নিয়ে। তাঁদের সবাই নিষ্পাপ ও জান্নাতি। কিন্তু তাদের প্রত্যেকেরই কোনো এক বিষয়ে আল্লাহর দরবারে লজ্জিত হতে হবে।

উম্মত সর্বপ্রথম হজরত আদম (আ.)-এর কাছে যাবে এবং কিয়ামতের এ ভয়াবহ অবস্থা থেকে নিষ্কৃতি লাভের জন্য আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করতে আবেদন করবে। তখন হজরত আদম (আ.)-এর জবাবে বলবেন, আমি এক অপরাধ করেছি বিধায় আল্লাহপাকের দরবারে যেতে আমার লজ্জাবোধ হচ্ছে। আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করার জন্য তোমরা হজরত নূহ (আ.)-এর কাছে যাও। অতঃপর তারা সবাই হজরত নূহ (আ.)-এর কাছে গিয়ে আবেদন করলে হজরত নূহ (আ.) বলবেন, আল্লাহর দরবারে যেতে আমার লজ্জা লাগে। কারণ আমি আমার কাফের ছেলের জন্য আল্লাহর দরবারে মাগফেরাত ও রহমতের জন্য দোয়া করেছি। একই অবস্থা হজরত মুসা ও ঈসা (আ.)-এর। তারাও সুপারিশ করার ব্যাপারে নিজেদের অক্ষমতা প্রকাশ করবে। অবশেষে সব উম্মত মিলে আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে আসবে।

অনেক দিন পর্যন্ত আমার মনের মধ্যে একটি প্রশ্ন ছিল যে, যেখানে সব নবীই অপারগতা প্রকাশ করবেন সেখানে আমাদের নবী মুহাম্মদ রসুল (সা.) কীভাবে নির্দ্বিধায় সুপারিশ করতে এগিয়ে যাবেন? বহুদিন পর এ প্রশ্নের সমাধান হয়েছে। তা হলো, আমাদের দেশে লোকমুখে শোনা যায় যে, দেয়ালের সঙ্গে পিঠ ঠেকে গেছে। দেয়ালের সঙ্গে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পর ধাক্কা দিলেও আর পেছনে যায় না। বরং দেয়ালে পিঠ ঠেকলে গায়ে একটু প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি পায়। এ প্রবাদটি নিয়ে গবেষণা করে আমার প্রশ্নের জবাব বের করেছি। জবাবটি হলো- আগের আম্বিয়ায়ে কেরাম উম্মতের জন্য আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করতে অক্ষমতা প্রকাশ করেছেন। নবীজি (সা.) দেখলেন আমার পর তো উম্মতের সুপারিশের জন্য আর কেউ নেই। তাঁর পিঠও দেয়ালের সঙ্গে মিশে গেছে। তখন তিনি মুখে কিছু না বলে সেজদায় চলে যাবেন এবং বলবেন, হে রব্বুল আলামিন! সুপারিশের জন্য নবীদের একজন আরেকজনকে দেখিয়ে দিয়েছেন, আমার কাছে এসে সেই ধারাবাহিকতা শেষ। আমি উম্মতকে কার কাছে যেতে বলব? আমার পর তো আর কোনো নবী নেই! হে আল্লাহ! তুমি সব নবীকেই ধমক দিয়েছো, আমাকেও ধমক দিয়েছো, লজ্জায় তাদের কেউ তোমার সামনে উম্মতের সুপারিশের জন্য আসছেন না, এখন আমিও যদি না আসি তাহলে উম্মত যাবে কার কাছে? হে আল্লাহ! তোমার কদমে মাথা রেখে উম্মতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি, তুমি তাদের ক্ষমা করে দাও।

যাহোক আলোচনা চলছিল, জাহান্নাম থেকে নাজাতপ্রাপ্ত জান্নাতিদের কপালে লেখা থাকবে আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমাপ্রাপ্ত। সবাই মিলে আল্লাহর দরবারে হাজির হয়ে আবেদন জানাবে, হে আল্লাহ! আমাদের কপালের লেখা মুছে দাও! কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে-জান্নাতে কোনো কষ্ট থাকবে না। মনের দিক থেকেও না, শরীরের দিক থেকেও না। মান-মর্যাদার দিক থেকেও না। জান্নাতে প্রবেশ করার পর কপালের লেখাটি তাদের জন্য কষ্টের কারণ হওয়ায় আল্লাহপাক তাদের কপাল থেকে এ লেখাটি মুছে দেবেন।

লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ

সর্বশেষ খবর