শনিবার, ২২ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

আমার এক প্রিয় কবি শঙ্খ ঘোষ

ইমদাদুল হক মিলন

আমার এক প্রিয় কবি শঙ্খ ঘোষ

শঙ্খ ঘোষের কবিতা প্রথম পড়েছিলাম ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকায়। শক্তি সুনীল শঙ্খ- এই তিন কবি তখন কবিতাপ্রেমী বাঙালিকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখছেন। কৃত্তিবাস সম্পাদনা করতেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। সেই পত্রিকা ঘিরে গড়ে উঠেছে কবিদের একটি দল। আমাদের বেলাল চৌধুরীও ছিলেন সেই দলে। যত দূর মনে পড়ে শঙ্খ ঘোষের একগুচ্ছ কবিতা ছাপা হয়েছিল কৃত্তিবাসের কোনো একটি সংখ্যায়। নাম ছিল ‘দিনগুলি রাতগুলি’। পরে এই নামে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। এত স্নিগ্ধ মায়াময় কবিতা! শব্দের কী অপূর্ব ব্যবহার! ছন্দের কী মধুর খেলা! এক বিস্ময়কর কবি! চুয়াত্তর সালে শঙ্খদাকে সামনাসামনি দেখলাম। ঢাকায় এসেছিলেন। বেইলি রোডের মহিলা সমিতির হলে রবীন্দ্রনাথের গানের একটি অনুষ্ঠান হয়েছিল। মঞ্চে শিল্পীদের মাঝখানে বসেছিলেন। ধবধবে সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি পরা শ্যামবর্ণের পুরোদস্তুর বাঙালি বাবু। অনুষ্ঠানের আয়োজনটি চমৎকার। রবীন্দ্রনাথের একেকটি গান ধরে কথা বলছেন শঙ্খ ঘোষ। তাঁর কথা শেষ হওয়ার পরই সেই গানটি গেয়ে শোনাচ্ছেন কোনো শিল্পী। অপূর্ব আয়োজন! কবিতা পড়ে যে শঙ্খ ঘোষের চেহারা মানসপটে এঁকেছিলাম, মানুষটি যেন অনেকখানিই তেমন। একজন মানুষ যে এত সুন্দর করে কথা বলতে পারেন, কণ্ঠের স্নিগ্ধতায় যে আবিষ্ট করতে পারেন শ্রোতাদের, সেদিনই আমি যেন প্রথম তা অনুভব করলাম। যেমন তাঁর কবিতার স্নিগ্ধতা, তেমনি তাঁর কণ্ঠমাধুর্য। সেদিন কল্পনাও করিনি এই মহান কবির সঙ্গে কখনো পরিচয় হবে। তাঁর খুব কাছাকাছি যেতে পারব। একই মঞ্চে তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে উদ্বোধন করতে পারব কোনো বইমেলা।

সেদিনের সেই অনুষ্ঠানের পর থেকে যেখানেই শঙ্খ ঘোষের যে লেখা পাই, সংগ্রহ করি। পড়ে মুগ্ধ হয়ে থাকি। কবিতায় তো তাঁর কোনো তুলনাই হয় না। একের পর এক অসামান্য সব কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হতে লাগল তাঁর। ‘নিহিত পাতালছায়া’, ‘আদিম লতাগুল্মময়’, ‘পাঁজরে দাঁড়ের শব্দ’। ‘ধুম লেগেছে হƒদকমলে’ এর জন্য পেলেন রবীন্দ্র পুরস্কার। ‘বাবরের প্রার্থনা’ কাব্যগ্রন্থের জন্য পেলেন ‘একাডেমি অ্যাওয়ার্ড’। আরেক অসামান্য কাব্যগ্রন্থ ‘মূর্খ বড়, সামাজিক নয়’ এর জন্য পেলেন নরসিংহ দাস পুরস্কার। আর অনেক পরে এসে লেখা ‘মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে’। আমাদের মুখে মুখে ফিরতে লাগল এই কবিতার কয়েকটি লাইন,

একলা হয়ে দাঁড়িয়ে আছি

তোমার জন্য গলির কোণে

ভাবি আমার মুখ দেখাবো

মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে।

আর্জেন্টিনার মেয়ে ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো ছিলেন রবীন্দ্রপ্রেমে মগ্ন। রবীন্দ্রনাথ ও ওকাম্পোকে নিয়ে অসামান্য একটি গ্রন্থ রচনা করলেন শঙ্খ ঘোষ। ‘ওকাম্পোর রবীন্দ্রনাথ’। এই বই বলতে গেলে আমাদের পাগল করে দিল। কত যত্নে, কত মায়ায়, কত অনুসন্ধানে শঙ্খ ঘোষ লিখলেন রবীন্দ্রনাথ ও ওকাম্পোকে নিয়ে। শঙ্খ ঘোষের ‘জার্নাল’গুলো সাহিত্যের বোদ্ধা পাঠকদের ব্যাপকভাবে আলোড়িত করেছে। সাহিত্যের কত কত বিষয় নিয়ে তিনি লিখেছেন! তাঁর লেখা ছোটদের দুটো উপন্যাসের কথা আমার খুব মনে পড়ছে। ‘সকালবেলার আলো’ ছোটদের জন্য লিখেছিলেন পুজো সংখ্যা আনন্দমেলায়। আরেক কিশোর উপন্যাস ‘সুপারি বনের সারি’। কবিতার মতো গদ্যভাষাও অতুলনীয় শঙ্খ ঘোষের। তাঁর সঙ্গে পরিচয় হওয়ার মুহূর্তে আমার মনে হয়েছিল আমার যেন পরিচয় হলো এক ঋষির সঙ্গে, এক দেবদূতের সঙ্গে। যাঁর অন্তরে সর্বক্ষণই খেলা করছে সকালবেলার আলো।

কয়েক বছর ধরে কলকাতায় একটা সাহিত্য উৎসব হয়। ‘এপিজে সাহিত্য উৎসব’। অক্সফোর্ড বুকসের সেই বনেদি বইয়ের দোকানটির দোতলা একতলা মিলে হয়েছিল প্রথমবারের আয়োজন। চারজন কবি লেখক ছিলেন সেবারের অনুষ্ঠানের উদ্বোধক। শঙ্খ ঘোষ, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার আর বাংলাদেশ থেকে আমন্ত্রিত হয়ে গেছি আমি। মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন হলো। শঙ্খদার শরীর খারাপ যাচ্ছে অনেক দিন ধরেই। অনুষ্ঠানাদিতে যান না। গেলেও কথা একেবারেই বলেন না। পাশাপাশি বসে শ্রোতাদের উদ্দেশে সবাই কথা বললেন, শুধু শঙ্খদাই কিছু বললেন না। এত কাছাকাছি থেকেও সেদিনও তাঁর সঙ্গে কোনো কথা হলো না। মাঝখানে এক বছর গ্যাপ পড়ল। সে বছরও এপিজে সাহিত্য সম্মেলনে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কী যেন কী কারণে যাওয়া হলো না। অক্সফোর্ড বুকসের সঙ্গে যৌথভাবে উৎসবটির আয়োজন করে প্রকাশন সংস্থা ‘পত্রভারতী’। পত্রভারতীর স্বত্বাধিকারী ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায় ‘কিশোর ভারতী’ পত্রিকার সম্পাদক। লেখক হিসেবেও জনপ্রিয়। কলকাতা পাবলিশার্স গিল্ডের কর্তাব্যক্তি। আমার বিশেষ বন্ধু। পত্রভারতী আমার দুটো বইও প্রকাশ করেছে।

পরের বছর আবার আমন্ত্রণ পেলাম এপিজে সাহিত্য উৎসবে। এবারের আয়োজন একটি মাঠে। একদিকে কিছু বইয়ের স্টল আছে। শামিয়ানা টানিয়ে সুন্দর স্টেজ করা হয়েছে। আগের অনুষ্ঠান হতো এক দিনের। সেবার হলো দুদিনের। শেষ দিনকার সন্ধ্যায় এসেছেন শঙ্খ ঘোষ ও সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়। আমাকে বসানো হয়েছে শঙ্খ ঘোষ আর সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের মাঝখানে। একপাশে এত বড় কবি, আরেক পাশে হাস্যরসের রাজা লেখক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়! আমি খানিকটা সংকুচিত হয়ে আছি। তার পরও শঙ্খদার সঙ্গে টুকটাক কথা শুরু হলো। সেই প্রথম কথা বলা তাঁর সঙ্গে। তিনি বলেন খুবই কম, শোনেন বেশি।

সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় তাঁর সাহিত্য ভাবনা নিয়ে পঁয়তাল্লিশ মিনিটের অতি রসালো বক্তৃতা করলেন। তাঁর বক্তৃতা শোনার জন্য মাঠে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। সঞ্জীবদা লেখেন যেমন, বলেনও তেমন। তাঁর সঙ্গে যৌথভাবে ‘কিশোরদের হাসির গল্প’ সম্পাদনা করেছি আমি। আগে থেকেই পরিচয় ছিল। সঞ্জীবদার পরনে সেদিন প্যান্ট আর ফতুয়া। শঙ্খদা আছেন তাঁর সারা জীবনের পোশাকে। সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি। আমি একটা বেজার পরে আছি। শীতকাল আসি আসি করছে। কথার ফাঁকে খুবই আগ্রহী গলায় সঞ্জীবদা এক সময় আমাকে বললেন, ‘ঢাকায় বুঝি খুব শীত পড়েছে!’ সঞ্জীবদার সূক্ষ্ম ঠাট্টাটা আমি বুঝলাম এবং আমার খুবই গরম লেগে উঠল। মনে হলো বেজারটা খুলে ফেলি।

পরের রসিকতাটা এলো শঙ্খদার কাছ থেকে। বক্তৃতা শেষ করে মঞ্চ থেকে নেমে শঙ্খদার পাশে এসে বসেছি। কিছু দর্শক-শ্রোতা আমার পরিচয় পেয়ে বেশ আগ্রহী হয়েছেন। কিছু উৎসাহী ছেলেমেয়ে অটোগ্রাফ নিতে এলো। লিখতে গেলে শঙ্খদার হাত কাঁপে। এ জন্য বোধ হয় তিনি অটোগ্রাফ ইত্যাদি এড়িয়ে চলেন। ছেলেমেয়েরা আমার অটোগ্রাফ নিচ্ছে। শঙ্খদার দিকেও খাতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। শঙ্খদা অটোগ্রাফ না দিয়ে তাঁর স্বভাবসুলভ অতিমৃদু কণ্ঠে আমাকে বললেন, ‘মিলন, আমার অটোগ্রাফটাও দিয়ে দিও।’

কয়েক বছর আগে শঙ্খ ঘোষ ‘জ্ঞানপীঠ’ পুরস্কার পেলেন। সেলিনা আপা (সেলিনা হোসেন) ও আমি তখন কলকাতায়। নিউ টাউন এলাকায় বইমেলা হচ্ছে। আমরা গেছি অতিথি হয়ে। অরুণিমা নামের একজন তরুণ কবি শঙ্খ ঘোষের জ্ঞানপীঠ পাওয়ার সুসংবাদটি দিলেন। সুভাস মুখোপাধ্যায়ের অনেক দিন পরে আরেকজন বাঙালি কবি এই উচ্চ মর্যাদার পুরস্কারটি পেলেন। গবেষক প্রাবন্ধিক ইমানুল হক আমাদের বিশেষ পরিচিত। শঙ্খদার খুবই অনুরাগী এবং প্রিয়ভাজন। বললেন, ‘চলুন, শঙ্খদার বাড়িতে যাই। তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে আসি।’

এই সুযোগ কি আর হাতছাড়া করা যায়? চললাম শঙ্খদার বাড়িতে। যেতে যেতে আমার মনে পড়ল বাদল বসুর কথা। আনন্দ পাবলিশার্সের কর্ণধার ছিলেন। সেই সন্ধ্যার কয়েক মাস আগে কলকাতা এয়ারপোর্টে নেমেই শুনেছিলাম তাঁর প্রয়াণের কথা। এয়ারপোর্ট থেকে সোজা চলে গিয়েছিলাম বাদলদার ফ্ল্যাটে। ফ্যাট বাড়িগুলোর মাঝখানে অনেকখানি করে চওড়া জায়গা। সেখানে বাদল বসুর অনুরাগী বন্ধুরা আছেন। শঙ্খদাকে দেখেছিলাম উদাস বিষণ্ন মুখে একটা চেয়ারে বসে আছেন। মুখ দেখে বোঝা যায়, দেখছেন সব কিছুই আবার কিছুই যেন দেখছেন না। তিনি যেন আছেন তাঁর নিজের জগতে।

শঙ্খদার ফ্ল্যাটে গিয়ে সেই সন্ধ্যায় সেলিনা আপা, ইমানুল আর আমি বসে আছি তাঁর বসার ঘরে। শঙ্খদার জন্য আমি নিয়ে গেছি আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত আমার ‘নূরজাহান’ বইটির অখণ্ড সংস্করণ। সেলিনা আপা নিয়েছেন ফুল। শঙ্খদা তাঁর বেডরুমে ছিলেন। আমাদের একটু অপেক্ষাই করতে হলো। তারপর তিনি এলেন। সেই সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি পরা। আমার মনে হলো, একজন দেবদূত এসে উপস্থিত হলেন আমাদের মাঝখানে। তারপর কত কথা, কত গল্প! অসামান্য একটি সন্ধ্যাবেলা কেটে গেল। ওরকম সন্ধ্যা জীবনে একবারের বেশি আসে না।

করোনা কেড়ে নিল আমাদের এই দেবদূতকে। জন্মেছিলেন ৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৩২, চলে গেলেন ২১ এপ্রিল ২০২১। বাংলাদেশটিকে বড় ভালোবাসতেন শঙ্খ ঘোষ। বরিশালের বানারীপাড়ায় ছিল আদি বাড়ি। জন্মেছেন চাঁদপুরে। বাবার কর্মসূত্রে ছেলেবেলার কতগুলো বছর কেটেছে পাবনায়। শঙ্খ ঘোষ তাঁর আসল নাম নয়। নাম ছিল চিত্তপ্রিয় ঘোষ। সাহিত্যের অধ্যাপনা করেছেন যাদবপুর ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ৩৪-৩৫টি কবিতার বই, গদ্যগ্রন্থ ৪৮টি, শিশু-কিশোরদের বই ২৩টি। কত পুরস্কার, কত সম্মান তাঁর জীবনজুড়ে! বিশ্বভারতীর ‘দেশিকোত্তম’, ভারত সরকারের ‘পদ্মভূষণ’। সব কিছু পেছনে ফেলে চলে গেলেন শঙ্খদা। এই চলে যাওয়া কি আসলে চলে যাওয়া? রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ‘যাওয়া তো নয় যাওয়া’। বাংলা কবিতায় শঙ্খ ঘোষ এক অমর নাম। চলে গিয়েও এই কবি রয়ে গেলেন বাংলা কবিতার অনেকখানি জায়গা আলোকিত করে।

শঙ্খ ঘোষের কবিতা খুব বেশি নয়। তিন খণ্ডে তাঁর ‘কাব্যসংগ্রহ’ প্রকাশ করেছে কলকাতার বনেদি প্রকাশনা সংস্থা ‘দে’জ’। শুনে অনেকেই বিস্মিত হবেন, শঙ্খদা গদ্য লিখেছেন প্রচুর। তাঁর ‘জার্নাল’ এক সময় মেধাবী পাঠকদের খুবই আকর্ষণ করেছিল। আমার বইয়ের তাকে দেখলাম তাঁর ‘উর্বসির হাসি’ বইটির প্রথম সংস্করণ। কিশোর উপযোগী জীবনীগ্রন্থ লিখেছেন, সতীনাথ ভাদুরী রচনাবলি সম্পাদনা করেছেন, অনুবাদ করেছেন। এই মুহূর্তে মনে পড়ছে শঙ্খদা অনুবাদ করেছিলেন গিরিশ কারনাডের ‘হয়বদন’ নাটকটি। চমৎকার একটা ভূমিকা লিখেছিলেন সেই নাটকের। শঙ্খদা কাজের মধ্যেই থেকেছেন সারাটা জীবন। বারো খণ্ডে তাঁর গদ্য রচনা প্রকাশ করেছে ‘দে’জ’। ‘গদ্যসংগ্রহ’র প্রতিটি খণ্ডই বেশ মোটা।

১৪৩০ সালের ‘আনন্দ পুরস্কার’-এর বাংলাদেশ থেকে বিচারক ছিলাম আমি। ১৫ এপ্রিল ২০২৪, হলো সেই অনুষ্ঠান। কলকাতার বনেদি হোটেল গ্র্যান্ড ওবেরয়ের বলরুমে আয়োজন। সেদিন আনন্দবাজার কর্তৃপক্ষ আমাকে একটি বিশাল সম্মানের জায়গায় বসিয়ে দিলেন। পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে পৌরোহিত্য করার কথা শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের। আগের দিন জানা গেল তিনি খুবই অসুস্থ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারবেন না। কী করা যায়? আনন্দ পাবলিশার্স প্রধান সুবীর মিত্র আর ‘দেশ’ সম্পাদক সুমন সেনগুপ্ত কথা বললেন আনন্দবাজারের স্বত্বাধিকারী অরূপ সরকারের সঙ্গে। সুবীরদা বিকল্প হিসেবে আমার নাম প্রস্তাব করলেন। যেহেতু বিচারক হিসেবে আনন্দবাজারের অতিথি হয়ে আমি কলকাতায় গিয়েছি। সেখানেই আছি। অরূপবাবুর সঙ্গে আমার পরিচয় নেই, তবে তিনি আমার লেখালেখির খবর রাখেন। সানন্দে রাজি হলেন।

সে এক অবিস্মরণীয় সন্ধ্যা আমার জীবনের। মঞ্চের মাঝখানে বসে আছি। আমার এক পাশে আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদক ঈশানী দত্ত রায়, আরেক পাশে ‘নকশালবাড়িনামা’ বইয়ের জন্য পুরস্কার পাওয়া লেখক অসীম চট্টোপাধ্যায় তারপর ‘দেশ’ সম্পাদক সুমন সেনগুপ্ত। অসীম চট্টোপাধ্যায়ের ডাকনাম ‘কাকা’। নকশালবাড়ি আন্দোলনের সময় ‘কাকা’র নামে ভারতবর্ষ কাঁপাত। তাঁর বইতে আমাদের সবার প্রিয় বেলালভাই, মানে বেলাল চৌধুরীর কথাও আছে। বেলালভাই ছিলেন অসীম চট্টোপাধ্যায় বা ‘কাকা’র বন্ধু।

অনুষ্ঠান শেষে অনেকের সঙ্গেই পরিচয় হলো। কথা হলো। এক ভদ্রমহিলা আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন। আমি তাঁর মুখ দেখে চমকে উঠলাম। মাত্র কথা বলতে যাব তার আগেই তিনি বললেন, ‘আমার নাম সেমন্তি ঘোষ। আনন্দবাজারেই আছি। বাবা আপনার কথা দুয়েকবার বলেছেন। আমার বাবার নাম শঙ্খ ঘোষ।’ সেমন্তির মুখে শঙ্খদার ছাপ। বাবার ছায়া মেয়ের মুখে। এ জন্যই আমি চমকে উঠেছিলাম।

লেখক : কথাসাহিত্যিক ও প্রধান সম্পাদক, কালের কণ্ঠ

সর্বশেষ খবর