রবিবার, ২৩ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

বন্যার্তদের সেবায় এগিয়ে আসতে হবে

মুহম্মাদ জিয়াউদ্দিন

বন্যার্তদের সেবায় এগিয়ে আসতে হবে

বন্যা এমন এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতি বছরই যার মোকাবিলা করতে হয় দেশবাসীকে। উজান থেকে আসা ঢলে ইতোমধ্যে ডুবে গেছে দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা। লাখ লাখ মানুষ এখন পানিবন্ধী। বিপদাপন্ন বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের ইমানি দায়িত্ব। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা শ্রেষ্ঠ জাতি; তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে মানবজাতির কল্যাণের জন্য।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১১০) রসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সাহায্যরত থাকে ততক্ষণ আল্লাহ তাকে সাহায্য করতে থাকেন।’ (তিরমিজি)

রসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘সমগ্র সৃষ্টি আল্লাহর পরিজন। আল্লাহর কাছে প্রিয় সৃষ্টি হলো সে, যে তার সৃষ্টির প্রতি সদয় আচরণ করে।’ (বায়হাকি)

রসুল (সা.) আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না, আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন না।’ (বুখারি)

অন্যদিকে আর্তমানবতার সেবা না করার পরিণাম সম্পর্কে রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয় কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাঁর কোনো বান্দাকে জিজ্ঞাসা করবেন, আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম, তুমি আমাকে খাদ্য দাওনি, আমি তৃষ্ণার্ত ছিলাম, তুমি আমাকে পানি দাওনি। আমি রুগ্ন ছিলাম তুমি আমার সেবা করোনি। তখন বান্দা অবাক হয়ে বলবে, হে আমার রব! তুমি যে অভাবমুক্ত। তুমি খাও না, পান করো না, কেমন করে ক্ষুধার্ত, পিপাসার্ত ও রুগ্ন হতে পারো? আল্লাহ বলবেন, আমার অমুক বান্দা ক্ষুধার্ত হয়ে তোমার দুয়ারে হাজির হয়েছিল; তুমি তাকে খাদ্য দাওনি, তাকে দিলে আমাকে দেওয়া হতো। তুমি পিপাসার্তকে পানি দাওনি, তাকে পানি দিলে আমাকে দেওয়া হতো। অসুখে রোগী কষ্টে ছটফট করেছে তার সেবা করলে আমাকে সেবা করা হতো, তুমি কি এটা জানতে না?’ (মুসলিম)

এক মুসলিমের ওপর অন্য মুসলিমের অধিকারগুলোর অন্যতম হলো কোনো মুসলিম অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া। (বুখারি) এ প্রসঙ্গে রসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘তোমরা রোগীকে দেখতে যাও, ক্ষুধার্তকে অন্ন দাও এবং বন্দিকে মুক্ত করো।’ (বুখারি)

তিনি আরও বলেছেন, ‘কোনো মুসলিম যখন তার কোনো মুসলিম ভাইয়ের রোগের খবর নিতে যায়, তখন সে ফিরে না আসা পর্যন্ত জান্নাতের খুরফার মধ্যে অবস্থান করে। জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রসুল! খুরফা কী? তিনি বললেন, জান্নাতের ফলপাড়া!’ (মুসলিম)

ইসলাম সমগ্র মানুষের সঙ্গে সদাচারের নির্দেশ দেয়। বিশেষ করে এতিম, দুস্থ, অসহায় ও মজলুম মানুষকে সহায়তাদানের প্রতি অধিক গুরুত্ব আরোপ করে। এতিমের হক আদায় না করা ও মিসকিনদের খাবার না দেওয়ার প্রতি ভর্ৎসনা করে কোরআন মজিদে বলা হয়েছে, ‘তুমি কি এমন লোককে দেখেছ, যে দীনকে অস্বীকার করে? সে তো ওই ব্যক্তি যে এতিমকে রূঢ়ভাবে তাড়িয়ে দেয়। আর মিসকিনদের খাবারদানে মানুষকে উৎসাহিত করে না।’ (সুরা মাউন, আয়াত ১-৩) আল্লাহ আরও বলেন, ‘কখনো এরূপ নয়, বরং তোমরা এতিমের সম্মান করো না, আর মিসকিনদের খাদ্যদানে উৎসাহিত করো না।’ (সুুরা ফজর, আয়াত ১৭-১৮) মহান আল্লাহ আরও বলেন, ‘আমি ও এতিমদের তত্ত্বাবধানকারী জান্নাতে এভাবে (পাশাপাশি) থাকব। এ কথা বলার সময় তিনি তার তর্জনী ও মধ্যমা আঙুল মিলিয়ে উভয়ের মাঝে একটু ফাঁক রেখে ইশারা করে দেখালেন।’

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

সর্বশেষ খবর