সোমবার, ২৪ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

হজ-পরবর্তী করণীয়

মো. আমিনুল ইসলাম

হজ-পরবর্তী করণীয়

হজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম। আর্থিকভাবে যারা বিত্তশালী হজ তাদের ওপর ফরজ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তিরই এ ঘর পর্যন্ত পৌঁছার সামর্থ্য থাকবে, সে যেন এই ঘরের হজ আদায় করে, আর যদি কেউ এ বিধান অস্বীকার করে (তার জেনে রাখা উচিত) আল্লাহতায়ালা সৃষ্টিকুলের মুখাপেক্ষী নন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৯৭)। পবিত্র হজ পালন করা আল্লাহর একটি বিধান। আল্লাহতায়ালার একনিষ্ঠ একত্ববাদের আলোকে জীবন পরিচালনার জন্য অন্যতম সহায়ক হলো হজ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন, ‘যখন তোমরা তোমাদের হজের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সেরে নেবে তখন (এখানে বসে আগের দিনে) যেভাবে তোমরা তোমাদের পূর্ব পুরুষদের (গৌরবের কথা) স্মরণ করতে তেমনি বরং তার চেয়ে বেশি পরিমাণে আল্লাহকে স্মরণ কর।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ২০০)।

আবার তাদের মধ্যে এমনও আছে যারা বলে, হে আমাদের রব তুমি এ দুনিয়ায় আমাদের কল্যাণ দাও, কল্যাণ দাও পরকালেও (সেদিনের বড় কল্যাণ হিসেবে) তুমি আমাদের আগুনের আজাব থেকে বাঁচাও। (সুরা বাকারা, আয়াত ২০১)। হজ আদায় শেষে যখন কোনো হাজি দেশে এবং বাড়িতে ফিরবেন তখন তার উচিত হলো নিজ মহল্লার মসজিদে গিয়ে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করা এবং অতঃপর ঘরে ফেরা। এ আমল রসুল (সা.)-এর অনুসরণীয় সুন্নত আমল। হাদিসে এসেছে, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন তুমি ঘর থেকে বের হবে তখন দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে। এ নামাজ তোমাকে ঘরের বাইরের সব বিপদ-আপদ থেকে নিরাপদ রাখবে। আবার যখন ঘরে ফিরবে তখনো তুমি দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে যা তোমাকে ঘরের ভিতরের সব বালা- মুসিবত থেকে হেফাজত করবে।’ (মুসনাদে বাজ্জার)। প্রকৃত হাজি তারা, যারা হজ পালন শেষে নিজ জীবনে হজের শিক্ষা গ্রহণ করে জীবন শেষ করেন। এজন্য প্রথমে দরকার গুনাহমুক্ত জীবনযাপন করা। গুনাহমুক্ত জীবনযাপনের প্রথম শর্ত হলো নেক ও সৎ লোকদের সাহচর্যে থাকা এবং নিম্নোক্ত আমলগুলো নিয়মিত করে যাওয়া।

১. প্রতিদিন কিছু পরিমাণ কোরআন তেলাওয়াত করা। ২. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে গিয়ে জামাতের সঙ্গে আদায় করা। ৩. প্রতিদিন কিছু নফল নামাজ আদায় করা। ৪. তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা ৫. ইস্তিগফার, দরুদ শরিফ ও জিকির করা।

একজন হাজি সাহেবের মাবরুর হজ নসিব হলে তিনি একজন সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে যান। তাই হজ পালন শেষে তিনি যখন দেশে ফিরে আসেন তখন তার নিজেকে নিষ্পাপ কলুষমুক্ত রাখতে দুনিয়ার সব কাজেই আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করাই একান্ত জরুরি। একজন হাজি যখন হজ পালনরত অবস্থায় মক্কায় অবস্থান করেন তখন তিনি বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের সান্নিধ্য লাভ করেন। তিনি কাবার সামনে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মুসলমান ভাই বোনদের সঙ্গে এক কাতারে নামাজ আদায় করার সৌভাগ্য লাভ করেন যা সত্যিই এক বিরল ঘটনা। এতে একজনের সঙ্গে আরেকজনের নৈকট্য অর্জনসহ প্রকৃত মানবিক অনুভূতি তার মনে জাগ্রত হয়। হজ আদায় করা হয়তো কঠিন কিন্তু হজ-পরবর্তী সময়ে নিজেকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য তাঁর বিধিনিষেধ মেনে জীবন পরিচালনা করাই হলো হজের সার্থকতা। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘হজ ও ওমরাহ পালনকারী আল্লাহর বিশেষ মেহমান। একজন হাজি দোয়া করলে তা কবুল হয়। আল্লাহ তার দোয়া কবুল করেন। কবুল হজের মাধ্যমে মানুষ নিষ্পাপ হন। (মিশকাত শরিফ)। হজ করে আসার পর হাজি বা আলহাজ শব্দটি নামের আগে যুক্ত করা ঠিক নয়। হজ কোনো সার্টিফিকেট কোর্স নয় যে আপনি হজ পালন শেষে নামের আগে আলহাজ বা হাজি শব্দটি ব্যবহার করবেন এবং তা শরিয়তসম্মতও নয়। এসব ব্যাপারে হাজিদের সতর্ক থাকতে হবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রসুলের পক্ষ থেকে মহান হজের দিনে মানুষের প্রতি (বিশেষ) বার্তা হলো আল্লাহর সঙ্গে শিরককারীদের কোনো সম্পর্ক নেই এবং তাঁর রসুলের সঙ্গেও নেই। (সুরা তওবা, আয়াত ৩)। মনে রাখতে হবে হজ আদায় করার পর গুনাহমুক্ত জীবনযাপন করাই হলো হজ কবুল হওয়ার লক্ষণ। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘এক ওমরাহ আদায়ের পর পরবর্তী ওমরাহ পালন করার মধ্যবর্তী গুনাহগুলোর জন্য কাফফারাস্বরূপ। আর হজে মাবরুরের প্রতিদান হলো জান্নাত।’ (বুখারি শরিফ, ১৭৭৩)। রসুল (সা.) আরও বলেছেন, ‘হজ ও ওমরাহ পালনকারীরা আল্লাহর মেহমান, তারা যখন আল্লাহর কাছে দোয়া করেন তখন তা কবুল করা হয়। আর যদি ক্ষমা প্রার্থনা করা হয় তখন আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দেন।’ (ইবনে মাজাহ, ২৮৯২)। আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে হজ আদায় করার তৌফিক দান করুন এবং হজ-পরবর্তী জীবন ইবাদত বন্দেগি করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে জীবন পরিচালনা করারও তৌফিক দান করুন।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার

সর্বশেষ খবর