বুধবার, ২৬ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

কোরআন অনুযায়ী জীবন পরিচালনার পুরস্কার

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

কোরআন অনুযায়ী জীবন পরিচালনার পুরস্কার

মানবজাতির হেদায়াতের জন্য আল্লাহতায়ালা সর্বশেষ গ্রন্থ কোরআন নাজিল করেছেন। এ কোরআন অনুযায়ী মানুষের ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক জীবনের প্রতিটি অঙ্গন পরিচালনার কথা ছিল। হায় আজ কোরআনের অনুসারীরা কোরআন ভুলে গেছে। তারা কোরআন ছেড়ে এখানে-ওখানে ঠোকর খাচ্ছে। কোরআন অনুযায়ী জীবন পরিচালনাকারী কখনো আখেরাতের ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহর কিতাব তেলাওয়াত করে, নামাজ কায়েম করে এবং আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে গোপনে ও প্রকাশ্যে; তাঁরা এমন ব্যবসার আশাবাদী, যাতে কখনো লোকসান হয় না। যাতে আল্লাহ তাদের পূর্ণ প্রতিফল দেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরও বেশি দান করেন। নিশ্চয়ই তিনি অতি ক্ষমাশীল, অত্যন্ত গুণগ্রাহী। (সুরা ফাতির, আয়াত ২৯-৩০)। কোরআন অনুযায়ী জীবন পরিচালনার মাধ্যমে একজন গোলামও রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে। এ সম্পর্কে হাদিস শরিফে এসেছে, আবু তোফায়েল (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, নাফে ইবন আবদুল হারেস (রা.) ‘উসফান’ নামক জায়গায় ওমর ইবনে খাত্তাবের (রা.) সঙ্গে দেখা করেন। তিনি ছিলেন মক্কার গভর্নর। ওমর (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কাকে নিজের স্থলাভিষিক্ত করে এসেছ? নাফে বললেন, আমার পরিবর্তে ইবনে আবজাকে (রা.) খলিফা বানিয়ে এসেছি। ওমর (রা.) বললেন ইবনে আবজা কে? নাফে বললেন, সে একজন আজাদকৃত গোলাম। ওমর বললেন, তুমি একজন গোলামকে খলিফা বানিয়েছ? তার যোগ্যতা কী? নাফে বললেন, সে তো মহান আল্লাহর কিতাব তেলাওয়াতকারী, ইলমে ফারায়েজ সম্পর্কে অভিজ্ঞ এবং বিচারকাজ সম্পর্কেও বিশেষজ্ঞ। এসব শুনে ওমর (রা.) বললেন রসুল (সা.) সত্যিই বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ কোরআনের মাধ্যমে কতক গোত্রকে উচ্চ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করবেন আর কতককে ডুবিয়ে দেবেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস নম্বর ২১৮)।

কোরআন অনুযায়ী জীবন পরিচালনাকারীর ব্যক্তিত্ব সবাইকে বিমোহিত করে রাখে। বিষয়টি রূপকভাবে বোঝাতে গিয়ে রসুল (সা.) কোরআন তেলাওয়াতকারীকে মিষ্টি কমলার সঙ্গে তুলনা করেছেন। আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন কোরআন পাঠকারীর উদাহরণ কমলার মতো, যার ঘ্রাণও উত্তম আবার স্বাদও উত্তম। আর যে কোরআন পাঠ করে না, তার উদাহরণ খেজুরের মতো, যার কোনো ঘ্রাণ নেই তবে এর স্বাদ আছে।’ (বুখারি শরিফ, হাদিস নম্বর ৫৪২৭)। কোরআন অনুযায়ী জীবন পরিচালনাকারী আল্লাহর পরিবার ও কাছের মানুষ। হাদিস শরিফে উল্লেখ রয়েছে, আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কতক লোক আল্লাহর পরিবার-পরিজন। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রসুলাল্লাহ! তারা কারা? তিনি বললেন, কোরআন তিলাওয়াতকারীরাই আল্লাহর পরিবার-পরিজন এবং তার বিশেষ বান্দা। (ইবনে মাজাহ, হাদিস নম্বর ২১৫)। বিশ্বনবী (সা.) বলেছেন, ‘কোরআনের আয়াতের সংখ্যা পরিমাণ হবে জান্নাতের সিঁড়ি। আর কোরআনের পাঠককে বলা হবে, ‘তুমি যতটুকু কোরআন পড়েছ ততটুকু সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠ। যে ব্যক্তি সম্পূর্ণ কোরআন পড়েছে সে আখেরাতে জান্নাতের সর্বশেষ সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে যাবে। যে ব্যক্তি কোরআনের কিছু অংশ পড়েছে সে সমপরিমাণ ওপরে উঠবে। আর তার কোরআন পড়ার সীমানা যেখানে শেষ হবে সেখানে তার সওয়াবের সীমানাও শেষ হবে। (আবু দাউদ, হাদিস ১৪৬৪)।

কোরআন অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে পারলে আখেরাতে কোরআনের সুপারিশ ভাগ্যে জোটবে। তাবেয়ি জুবায়েদ (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ (রা.) বলেছেন, কোরআন এমন সুপারিশকারী যার সুপারিশ কবুল করা হবে। এমন বিতর্ককারী যার বিতর্ক মেনে নেওয়া হবে। অতএব যে কোরআন অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করবে কোরআন তাকে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাবে। আর যে কোরআন অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করবে না তাকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাবে।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নম্বর ১২৪)। মৃত্যুর পরও কোরআনওয়ালার লাশের মর্যাদা অনেক বেশি হয়। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজি (সা.) উহুদের শহীদদের দুজনকে একই কাপড়ে একত্র করতেন। এরপর জিজ্ঞেসা করতেন, তাদের মধ্যে কে কোরআন সম্পর্কে অধিক জানত? দুজনের মধ্যে একজনের দিকে ইশারা করা হলে তাকে কবরে আগে রাখতেন এবং বলতেন, আমি কেয়ামতের দিন এদের ব্যাপারে সাক্ষী হব। তিনি রক্তমাখা অবস্থায় তাদের দাফন করার নির্দেশ দিলেন, তাদের গোসল দেওয়া হয়নি এবং তাদের জানাজার নামাজও আদায় করা হয়নি।’ (বুখারি শরিফ, হাদিস নম্বর ১৩৪৩)।

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি

পীর সাহেব, আউলিয়ানগর

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর