শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

দুর্নীতি রুখতে হবে শক্তভাবে

মাজহারুল ইসলাম

দুর্নীতি রুখতে হবে শক্তভাবে

দুর্নীতি রুখতে হবে শক্ত হাতে। দুর্নীতিবাজ রাজনীতিক হোক আর আমলা হোক কাউকেই ছাড় দেওয়া ঠিক হবে না। এ প্রসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, অসাধু সরকারি আমলা ও কর্মকর্তাদের অসামঞ্জস্য সম্পদ ও অর্থের উৎস নিয়ে অভিযোগ থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। দুর্নীতিবাজদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় তারা সুরক্ষা পেয়ে যাচ্ছে। চাকরিতে যোগদানের সময় সরকারি কর্মচারীদের আয়-ব্যয়ের হিসাব দেওয়ার নিয়ম রয়েছে এবং প্রতি বছর সেটা হালনাগাদ করতে হয়। দুর্নীতির অভিযোগ এলে রয়েছে নানা আইনি প্রক্রিয়া, বিভাগীয় ব্যবস্থা। কিন্তু এসব আইন কাগজে থাকলেও বাস্তবায়ন নেই। সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমানের দুর্নীতির টাকায় গড়ে তোলা সম্পদের পাহাড় দেখে মনে হতে পারে দুর্নীতি সম্প্রতি শুরু হয়েছে। দুর্নীতির ঘটনা আগেও ঘটেছে কিন্তু বিচার না হওয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে তা এখন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। দুদকের তদন্ত, ব্যাংক হিসাব জব্দ করা দেখে মনে হতে পারে দুর্নীতি ঠেকাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পরে দেখা যায় আইনের ফাঁকে গলে ঠিকই বের হয়ে যায় দুর্নীতিবাজরা। উপযুক্ত শাস্তি ও কঠোর ব্যবস্থা না নিলে দুর্নীতির লাগাম টানা সম্ভব হবে না।

সবারই জানা, আমলারা এ দেশে অনেক বেশি ক্ষমতার অপচর্চা করেন। ক্ষমতা আর দুর্নীতি অনেকটা অঙ্গাঙ্গিভাবে থাকে। নিরঙ্কুশ ক্ষমতা হলে দুর্নীতিও নিরঙ্কুশ হয়। ক্ষমতার চর্চা যেখানে বেশি হয় সেখানে দুর্নীতিতে জড়ানোর সম্ভাবনাও বেশি থাকে। দুর্নীতিবাজদের শক্তভাবে দমন করে শাস্তির আওতায় না আনলে দেশ ও সমাজের জন্য শুভকর হবে না।

আমলারা দেশে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছেন, দেশের নীতি বাস্তবায়নে তাদের যতটুকু দায়িত্ব চাকরির আওতায় দেওয়া হয়েছে তার চেয়েও অনেক বেশি ক্ষমতার চর্চা করছেন তারা। দেখে শুনে মনে হচ্ছে, দেশ রাজনীতিবিদরা পরিচালনা করছেন না, দেশ পরিচালনা করছেন দুর্নীতিবাজ আমলারা। এদের সম্পদের পাহাড় সামনে আসছে। এখানে যেমন রয়েছে সিভিল ব্যুরোক্রেটস, তেমন রয়েছেন অন্যরাও। এসব দেখে সাধারণ মানুষও নিরাপদ বোধ করছেন না। আমলারা সংবিধানের ভাষায় প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা নয়, কর্মচারী। তারা কর্মচারী- এই ধারণাটি ফিরিয়ে আনতে হবে। আমলাদের টাকা পাচার, অর্থ লোপাটসহ নানান অনৈতিক কর্মকাণ্ডে মানুষের অন্তরে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এটি দূর করার জন্য সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে, ন্যায় প্রতিষ্ঠায় সাহসী ও উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে। দুর্নীতির শাস্তি দিতে হবে সরকারকে। যারা টাকা পাচার করেছে, যারা ব্যাংক লুট করেছে, যারা ক্ষমতা দেখিয়ে মানুষের ওপর অন্যায় অত্যাচার করেছে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।

ঈদুল আজহার সময় মতিউর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাদ ১৫ লাখ টাকা দামের ছাগল কিনতে গিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হিরো হয়ে ওঠেন। ব্যাপক আলোচিত হয় তাকে নিয়ে। ছেলের বিলাসী জীবনযাপনের সূত্র ধরেই মতিউরের সম্পদের বিষয়টি আলোচনায় আসে। একপর্যায়ে নিজের ছেলেকেই অস্বীকার করেন মতিউর। তবে তাতেও পার পাননি দুর্নীতির এই মহারাজ। এখন পর্যন্ত তার দুই স্ত্রী, ছেলে মেয়ে, ভাই-বোনসহ নিকটজনদের নামে ছয় জেলায় জমি, ফ্ল্যাট, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, রিসোর্টসহ নানা সম্পত্তির খোঁজ মিলেছে। এর বাইরে পুঁজিবাজারেও তার কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে আত্মগোপনে চলে যান মতিউর রহমান ও তার পরিবার। শোনা যাচ্ছে মতিউরের দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী ও ১৫ লাখ টাকার ছাগল খ্যাত পুত্র ইফাদ দেশ ছেড়ে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছেন।

মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নতুন নয়। এর আগেও মতিউরের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে চারবার অভিযোগ উঠেছিল। ২০০৪, ২০০৮, ২০১৩ ও ২০২১ সালে সেগুলোর পরিসমাপ্তি টানা হয় তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণের অভাবে। এ বিষয়ে দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন গণমাধ্যমকে বলেছেন, এর আগে মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে চারবার করা অনুসন্ধানগুলো এখন আবার পর্যালোচনা করে দেখা হবে। অভিযোগ রয়েছে মতিউর দুর্নীতি করেছেন বেপরোয়াভাবে। নিজেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে ভাবতেন তিনি। ওয়ান-ইলেভেনের সময় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। তবে সে দুর্নীতির তদন্ত থেকে তিনি রেহাই পান ওয়ান-ইলেভেনের সময়কার শাসক সেনাপ্রধান জেনারেল মঈন ইউ আহমেদের হস্তক্ষেপে। মতিউরদের মতো যারা দেশের প্রশাসনকে দুর্নীতিগ্রস্ত করে তুলছে তাদের ঠেকাতে সরকারকে কড়া হতে হবে।

লেখক : নিবন্ধকার

সর্বশেষ খবর