শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

সুসম্পর্ক রক্ষায় যত্নবান হতে হবে

আবদুর রশিদ

রসুল (সা.) মুমিনদের পারস্পরিক সুসম্পর্ক বজায় রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন। ইরশাদ করেছেন, সম্পর্কের প্রতি যত্নশীল হওয়াও ইমানের অংশ। সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হলে অনেক সময় ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। অন্যের ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখতে হয়। এ কারণে রসুল (সা.) বলেছেন, ‘মুমিনের পায়ে একটা কাঁটা বিঁধলেও সে সওয়াব পায় এবং তার জান্নাতের দরজা বৃদ্ধি হয়।’ সুতরাং কারও থেকে কষ্ট পেলে সবর করতে হবে। রসুল (সা.)-এর এ হাদিসের ওপর আমল করলে সুন্নতের ইত্তেবা করার কারণে আরও বেশি সওয়াব পাওয়া যাবে। অন্য এক হাদিসে ইশরাদ হয়েছে, ‘কিয়ামতের দিন আল্লাহ যখন সবরকারীদের আপন দয়ায় ভূষিত করবেন তখন অন্যরা আফসোস করবে আর বলবে, হায়! দুনিয়ায় যদি কাঁচি দ্বারা আমাদের চামড়া কর্তন করা হতো, আর আমরা সবর করতাম তাহলে আমরাও এদের মতো এত সওয়াব লাভ করতাম।’ মানুষ এমনভাবেই আফসোস করতে থাকবে।

সম্পর্ক বজায় রাখার অর্থ হলো, যার সঙ্গে সম্পর্ক আছে তার সব হক ও অধিকার আদায় করা এবং তার সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন না করা। সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য অন্তরের সম্পর্ক জরুরি নয় এবং তার সঙ্গে ওঠা-বসা, খাওয়া-দাওয়া, গল্প-গুজব করাও জরুরি নয়। বরং সম্পর্ক ঠিক রাখার জন্য শরয়ি হক আদায় করাই যথেষ্ট। সুতরাং কারও সঙ্গে আপনার মনের মিল না থাকলে কেউ আপনাকে তার সঙ্গে দেখা করতে বাধ্য করতে পারবে না, কিংবা কারও সঙ্গে আপনার সম্পর্ক না থাকলে তার কাছে বসতে এবং তার সঙ্গে সম্পর্ক করতেও কেউ বাধ্য করতে পারবে না। শুধু তার হক আদায় এবং সম্পর্ক ছিন্ন করা থেকে বিরত থাকলে সেটাই যথেষ্ট। মানুষের পরস্পরের মধ্যে বিদ্বেষ ও শত্রুতা সৃষ্টি করা হলো শয়তানি। হাদিস থেকে জানা যায়, শয়তান অন্য কোনো কাজে এত আনন্দিত হয় না, মানুষের অন্তরে বিদ্বেষের দানা বাঁধিয়ে যে পরিমাণ আনন্দিত হয়। হাদিসে এসেছে, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দেওয়াকে শয়তান নিজের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব মনে করে। তাই এর বিপরীতে দুজন মুসলমানের পরস্পরের, বিশেষ করে স্বামী-স্ত্রীর ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে তাদের সম্পর্ককে সৌহার্দপূর্ণ ও মধুময় করার প্রচেষ্টা চালানো অত্যন্ত সওয়াবের কাজ।

ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে পবিত্রতার গুরুত্ব অপরিসীম। কুফর থেকে ইসলামে প্রবেশের মাধ্যমে মানসিক অপবিত্রতা দূর হয়। একইভাবে শারীরিক অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হওয়ারও নির্ধারিত পদ্ধতি ইসলাম সুস্পষ্ট করে বলে দিয়েছে। তবে ইসলাম শারীরিক অপবিত্রতাকে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করেছে। যে ধরনের অপবিত্রতা থেকে অজু করেই পবিত্র হওয়া যায়, গোসল আবশ্যক নয় এ ধরনের অপবিত্রতাকে নাজাসাতে খফিফাহ বলে। আর যে ধরনের অপবিত্রতা থেকে গোসল ছাড়া পবিত্র হওয়ার উপায় নেই এ ধরনের অপবিত্রতাকে ফকিহদের পরিভাষায় নাজাসাতে গালিজাহ বলে। প্রস্রাব-পায়খানা ইত্যাদি জাতীয় অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হওয়ার জন্য অজু করে নেওয়াই যথেষ্ট। কিন্তু পুরুষ-নারীর এমন কিছু একান্ত ব্যাপার আছে, যেসব কারণে অপবিত্র হলে গোসল না করা পর্যন্ত শরীর পবিত্র হয় না। এ ধরনের অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হওয়ার জন্য গোসল করা ফরজ। জানার বিষয় হলো, ফরজ গোসল কী দেরি করে করা যায় নাকি সঙ্গে সঙ্গেই করে নিতে হয়? গোসল ফরজ অবস্থায় অনেকের মনেই এক ধরনের পাপবোধ কাজ করতে থাকে। এমন কথাও শোনা যায়, যতক্ষণ ফরজ গোসল করা না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত আমলনামায় ফেরেশতারা গুনাহ লিখতে থাকে। কোনো কোনো সুফি এ কথাও বলেছেন, ফরজ গোসল অবস্থায় মাটিতে পা রাখলে মাটি অভিশাপ দিতে থাকে। আসুন জেনে নিই এ বিষয়ে শয়িরত কী বলে- ১. ফরজ গোসল যথাসম্ভব দ্রুত করে নেওয়া মুসতাহাব বা ভালো, ওয়াজিব বা আবশ্যক নয়। ২. ফরজ গোসল এত দেরি করে করা উচিত নয় যে, পরবর্তী ওয়াক্তের নামাজ কাজা হয়ে যায়। নামাজ কাজা করা নিঃসন্দেহে কবিরা গুনাহ। ফরজ গোসল করতে না পারার জন্য নামাজ কাজা করার অজুহাত শরিয়তে গ্রহণযোগ্য নয়। ৩. ফরজ গোসল দেরি করেও করা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে সুন্নত হলো, ভালো করে অজু করে নেওয়া। হজরত আয়শা (রা.) বলেন, ‘রসুল (সা.)-এর গোসল ফরজ হলে তিনি যদি পরে গোসল করতে চাইতেন, কিংবা কিছু খেতে অথবা ঘুমাতে চাইতেন, তাহলে নামাজের অজুর মতো অজু করে নিতেন।’ মুসলিম। ৪. গোসল ফরজ অবস্থায় মনে মনে যে পাপবোধ আসে তা ঠিক নয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘একবার আমার গোসল ফরজ হলে রসুল (সা.) আমাকে ডেকে তাঁর সঙ্গে খেতে বললেন। তিনি আমার হাত ধরতে চাইলেন। আমি হাত গুটিয়ে নিয়ে বললাম, হে আল্লাহর রসুল! আমি তো অপবিত্র। তিনি বললেন, মুমিন কখনো অপবিত্র হয় না।’ তিরমিজি। হাদিসটি বুখারি ও মুসলিমেও বর্ণিত হয়েছে। ৫. অপবিত্র অবস্থায় থাকার সময়টুকু গুনাহ লেখা হয়, ওই সময় মাটিতে পা রাখলে মাটি অভিশাপ দেয় এ ধরনের কথা প্রসিদ্ধ হাদিসের কিতাবগুলোয় পাওয়া যায় না।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

সর্বশেষ খবর