শিরোনাম
শুক্রবার, ২৮ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

জীবনের সবচেয়ে বড় সফলতা

আল্লামা মাহ্‌মূদুল হাসান

বান্দার সবচেয়ে বড় কামিয়াবি ও সফলতা হলো তার মালিকের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক হয়ে যাওয়া। সম্পর্ক স্থাপিত হওয়ার আলামত হলো, সব দুঃখ-কষ্ট ও বিপদাপদে ধৈর্য ধারণ করা, অস্থির ও বিচলিত না হওয়া। ভালো-মন্দ সবকিছুই আল্লাহর থেকেই হয়, এ কথা বিশ্বাস করা এবং বাস্তবে তথা বাহ্যিক কাজে-কর্মে সে বিশ্বাসের প্রমাণ দেওয়া।

গভীর সম্পর্কের অর্থ হলো, একে-অপরকে আন্তরিকভাবে চাওয়া। অর্থাৎ বান্দা আল্লাহকে মোহাব্বত করবে, আর আল্লাহও বান্দাকে মোহাব্বত করবেন। আল্লাহ তো তাঁর সব বান্দাকে মোহাব্বত করেনই, তিনি সবারই মঙ্গল চান। বাকি শুধু বান্দার দিকটা। আল্লাহ যে বান্দাকে মোহাব্বত করেন তার প্রমাণ অসংখ্য। তিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন, সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। অন্য সব সৃষ্টিকে তার উপকারের নিমিত্ত প্রস্তুত রেখেছেন, তাকে হাত, পা, চোখ, নাক ইত্যাদি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করেছেন, তাকে সুস্থ রাখেন, তার রিজিকের ব্যবস্থা করেন, এরকম অগণিত নেয়ামত তাকে কোনো আবেদন-নিবেদন ছাড়াই, কোনো বিনিময় ছাড়াই দিয়ে থাকেন। এখন বান্দাকে প্রমাণ দিতে হবে, সে তার প্রতিপালক, তার একমাত্র মালিককে ভালোবাসে কি না।

যে কোনো সম্পর্কের পেছনে একটা মাধ্যম থাকবেই। যেমন- স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মাধ্যম হলো বিবাহ, পীর-মুরিদের সম্পর্কের মাধ্যম হলো বায়াত, ওস্তাদ-সাগরেদের সম্পর্কের মাধ্যম হলো, জ্ঞানের আদান-প্রদান। এভাবে সব সম্বন্ধ ও সম্পর্কের একটি মাধ্যম পাওয়া যাবে। তাহলে এবার জানতে হবে, বান্দা ও আল্লাহর মধ্যকার সম্পর্কের মাধ্যম কী। কোরআন হাদিস থেকে জানা যায়, সে মাধ্যম হলো ‘আমল’। অর্থাৎ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর আদেশ ও নিষেধ মেনে চলা। আদেশসমূহের মধ্যে মর্যাদাগত স্তর রয়েছে। কোনো আদেশ অবশ্য পালনীয় আবার কোনোটি আবশ্যকীয় না হলেও উভয় জীবনে উপকারী। বান্দার দায়িত্ব হলো, স্তরের দিকে না তাকিয়ে সব আদেশ মান্য করা। কারণ সে তো গোলাম। মালিকের সব আদেশ পালন করে যতই মালিকের নিকটবর্তী হওয়া যায় ততই গোলামের লাভ। প্রেমিক যেমন তার প্রেমাস্পদকে কাছে পাওয়ার জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত থাকে, তেমন বান্দাকেও প্রস্তুত থাকতে হবে মাওলাকে কাছে পাওয়ার জন্য।

যে বান্দা দিলে কালিমার ইয়াকিন বসিয়ে নিল, তার দিলের সঙ্গে আল্লাহর সম্পর্ক স্থাপিত হলো। এরপর আকল ও চিন্তাশক্তি ব্যবহার করে ইলম শিখল তো তার আকলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপিত হলো। এরপর ‘জিসমি আমাল’ তথা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা যেসব আমল সম্পাদন করা হয়, সেসব আমল দ্বারা আল্লাহর সঙ্গে জিসমি সম্পর্ক হবে। এভাবে যত ধরনের নেক আমল আছে সেগুলো করার দ্বারা সম্পর্ক গভীর থেকে গভীরতর হবে। তবে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, সম্পর্ক যতই গভীর হোক তা যদি স্থায়ী না হয় তাহলে সব শ্রম বৃথা হয়ে যাবে। তাই সম্পর্ককে স্থায়ী করার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। সে ব্যবস্থা হলো, গুনাহ থেকে বিরত থাকা। গুনাহ থেকে বিরত থাকাটাই আসল। কারণ, সামান্য সম্পর্কও যদি স্থায়ী করে রাখা যায় তাতেই কামিয়াবি এসে যেতে পারে। পক্ষান্তরে গভীর সম্পর্কের উঁচু টাওয়ারও গুনাহর ঝড়ে যে কোনো সময় বিধ্বস্ত হয়ে মাটির সঙ্গে মিশে যেতে পারে। তখন সামান্য মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও থাকবে না।

উপরোক্ত পদ্ধতিতে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক করতে পারলে উভয় জীবনে তার পক্ষ থেকে অজস্র পুরস্কার ও প্রতিদান পাওয়া যাবে। শুধু আখেরাতে পাওয়া যাবে তা নয় বরং দুনিয়াতেও পাওয়া যাবে। অনেক সময় আমরা কোনো আমল সম্পর্কে অন্যকে বলে থাকি, ‘আপনার এই আমলের বিনিময় দুনিয়াতে না পেলেও আখেরাতে অবশ্যই পাবেন।’ এ কথাটা ঠিক নয়। কেননা আল্লাহপাক মানুষকে হুকুম করেছেন, শ্রমিকের শ্রমের বিনিময় তার ঘাম শোকানোর আগেই দিয়ে দাও। অথচ তিনি আমাদের আমলের বিনিময় বাকি রাখবেন এবং লক্ষ-কোটি বছর পরে দেবেন, এটা অযৌক্তিক মনে হয়। কারণ তিনি আমাদের তো ফেরেশতাদের মতো জীবন দান করেননি যে, আমাদের খাওয়া, পরা, চিকিৎসা, ঘরবাড়ি ইত্যাদির প্রয়োজন হবে না। আমাদের তো এমন জীবন দান করেছেন যেখানে একের পর এক অসংখ্য প্রয়োজন সামনে এসে দাঁড়ায়। দুনিয়াবি জিন্দেগির এসব প্রয়োজন মিটিয়ে আমরা কি সুখী জীবন কামনা করি না? অবশ্যই করি। তাহলে আল্লাহ আমাদের আমলের সুখকর প্রতিদান শুধু পরকালের জীবনের জন্য বরাদ্দ রাখবেন, এটা কেমন করে মেনে নেওয়া যায়? তাই বলছিলাম যে, আল্লাহর ওপর নির্দয়তার অভিযোগ আরোপ করে এরূপ বলা ঠিক হবে না যে, নেক আমলের প্রতিদান দুনিয়ায় না দিলেও তিনি আখেরাতে অবশ্যই দেবেন। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহপাক বান্দার প্রতিটি নেক আমলের বদলা দুনিয়াতেও দেন। কিন্তু অনুধাবনযোগ্যতার দৈন্য হেতু অনেকেই সে প্রতিদান বুঝে নিতে পারে না।

দুনিয়াতেও যে প্রতিদান পাওয়া যায়, তার প্রমাণ হাদিসেই রয়েছে। হাকিম ইবনে হিযাম সাহাবি (রা.) মুসলমান হওয়ার আগে কাফের থাকাবস্থায় বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজ করতেন। একজন জনদরদি ও সমাজসেবী হিসেবে তাঁর পরিচিতি ছিল এলাকাজুড়ে। তাঁর সেবার মধ্যে ছিল রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি মেরামত, দরিদ্রকে অন্ন ও বস্ত্র প্রদান ইত্যাদি। তবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বের সঙ্গে যে কাজটি তিনি করতেন তা হলো, কন্যাসন্তানকে মেরে ফেলা বা জীবন্ত দাফন করার যে বর্বর প্রথা জাহেলিয়া যুগে ছিল, তিনি সে প্রথার অবসানকল্পে উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর