বছরের পর বছর যায়, ঢাকা মহানগরীর জলাবদ্ধ চিত্রের কোনো পরিবর্তন হয় না। অল্প বৃষ্টিতেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা পানিতে ডোবা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক পশলা বৃষ্টিতেই রাস্তা-অলিগলি সয়লাব হয়ে যাওয়া দেখে আসছেন ঢাকাবাসী সুদীর্ঘ দিন ধরে। সেখানে ভারী বৃষ্টিতে কতটা অসহনীয় অবস্থার উদ্ভব হয় সেটাই বুধবার প্রত্যক্ষ করেছেন নগরবাসী। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টায় নগরীতে ৬১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। ডুবে যায় বিভিন্ন সড়ক, অলিগলি, কাঁচাবাজার। পানি ঢোকে নিচু এলাকার বাড়িঘরে। স্যুয়ারেজ লাইন আর বৃষ্টির জমা পানি একাকার হয়ে দূষণ ও দুর্গন্ধের এক নারকীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এর মধ্যেই নাক চেপে, দাঁত কামড়ে, কপালে মহাবিরক্তির ভাঁজ ফেলে নাগরিকদের চলাচল করতে হয়। এ থেকে কি নিস্তার নেই? ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের দুর্বল পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং পয়ঃনিষ্কাশনে অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার কারণে বছরের পর বছর অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছে না। নগরীর খাল-ডোবা-জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়ায় অল্প বৃষ্টিতেই পানি জমে যাচ্ছে। নিয়মিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে নর্দমাগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির পানি ধারণ ও নিষ্কাশন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই পাড়া-মহল্লার নর্দমাগুলো সঠিকভাবে পরিষ্কার করা হলে, সুফল পাওয়া যেত। এক্ষেত্রে ওয়ার্ড কাউন্সিলররা তদারকির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও লাগসই পরিকল্পনার অভাবও জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ। ঢাকার চারপাশের নদীগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টিতে জমা পানি দ্রুত নেমে যেতে পারে না। সেই সঙ্গে রয়েছে নগরবাসীর দায়িত্বহীনভাবে পলিথিন ও প্লাস্টিক ব্যবহার করে যথেচ্ছ ফেলে দেওয়ার প্রবণতা। সংকটের এসব নেতিবাচক দিকগুলোর সমাধান প্রয়োজন। মহানগরীর জলাবদ্ধতা রোধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে এখনই। নগরবিদ ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে দুই সিটি করপোরেশন এবং ওয়াসাসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। এর মাধ্যমে জলাবদ্ধতার নৈমিত্তিক দুর্ভোগ থেকে রাজধানীবাসীর মুক্তির কাক্সিক্ষত সুফল আসতে পারে।