শিরোনাম
রবিবার, ৩০ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

নেক আমল কী ও করণীয়

মো. আমিনুল ইসলাম

নেক আমল কী ও করণীয়

আমরা যারা মুসলমান তাদের প্রতিদিনই কিছু কিছু নেক আমল করা উচিত। আমাদের অবসর সময়টুকু অলসভাবে না কাটিয়ে নেক আমল করার মাধ্যমে কাটালে যেমন সওয়াব অর্জন করা সম্ভব তেমনি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করাও সহজ। আমাদের জানতে হবে কী কী নেক আমল করা আমাদের জন্য সহজ।

প্রতিদিন কোরআন তেলাওয়াত করা : রসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সে-ই, যে কোরআন শিখে ও অন্যকে শিক্ষা দেয়।’ (তিরমিজি শরিফ, ২৯০৯)।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘নিঃসন্দেহে যারা আল্লাহতায়ালার ওপর ইমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে তাদের জন্য রয়েছে নেয়ামতের সমাহার জান্নাতসমূহ।

সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে, আল্লাহতায়ালার প্রতিশ্রুতি অতীব সত্য, তিনি মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা লোকমান, আয়াত ৮-৯)।

আল্লাহ আরও বলেন, ‘যারা আল্লাহতায়ালার ওপর ইমান এনেছে এবং সে অনুযায়ী নেক আমল করেছে তাদের মেহমানদারির জন্য রয়েছে জান্নাতুল ফেরদৌস।’ (সুরা কাহফ, আয়াত ১০৭)।

সুতরাং নেক আমল করার অন্যতম হলো- প্রতিদিন কোরআনের কিছু আয়াত তেলাওয়াত করা। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা সুললিত কণ্ঠে কোরআন শরিফ তেলাওয়াত করো। কেননা তা কোরআনের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দেয়।’ কোরআন শিখতে গিয়ে যে ভুলত্রুটি করার পরও তা অব্যাহত রাখে সে দ্বিগুণ সওয়াবের অধিকারী হবে। সুবহানাল্লাহ।

আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রত্যেককেই তার প্রতিটি কাজের হিসাব দিতে হবে। তা গোপন হোক কিংবা প্রকাশ্য। নেক কাজের জন্য রয়েছে পুরস্কার আর মন্দ কাজের জন্য রয়েছে শাস্তি। আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি এক অণু পরিমাণ কোনো ভালো কাজ করবে, সেদিন সে তাও দেখতে পাবে, ঠিক তেমনি কোনো মানুষ যদি অণু পরিমাণ খারাপ কাজও করে, তাও সেদিন সে দেখতে পাবে।’ (সুরা জিলজাল, আয়াত ৭-৮)।

প্রতিদিন কিছু দান-সদকা করা। দান-সদকা উত্তম ইবাদত। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যা দান-সদকা করো তা তোমাদের জন্যই কল্যাণকর; কারণ তোমরা তো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই খরচ করো। তোমরা আজ যা কিছু দান করবে আগামীকাল তার পুরোপুরি বিনিময় তোমাদের আদায় করে দেওয়া হবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ২৭২)। ‘যারা দিন-রাত গোপনে, প্রকাশ্যে নিজেদের মালসম্পদ ব্যয় করে তাদের মালিকের দরবারে তাদের এ দানের প্রতিফল সুরক্ষিত রয়েছে, তাদের ওপর কোনোরকম ভয়ভীতি থাকবে না, তারা সেদিন চিন্তিতও হবে না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ২৭৪)। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা খেজুরের এক টুকরো দান করে হলেও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচো।’ (বুখারি শরিফ)।

প্রতিবেশীর খোঁজ নেওয়াও একটি নেক আমল। আমরা এ ব্যাপারটাকে খুবই হেলাফেলা হিসেবে মনে করি। রসুল (সা.) বলেন, ‘জিব্রাইল (আ.) আমাকে প্রতিবেশীর হক সম্পর্কে এত বেশি তাগিদ করতেন যে, এক পর্যায়ে আমার মনে হয়েছে হয়তো অচিরেই প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকারী হিসেবে সাব্যস্ত করা হবে।’ (বুখারি শরিফ, ২/৮৮৯)। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কসম ওই ব্যক্তি মুমিন নয়, ওই ব্যক্তি মুমিন নয়, ওই ব্যক্তি মুমিন নয়। উপস্থিত সাহাবায়ে কেরাম জানতে চাইলেন, ইয়া রসুলুল্লাহ কোন ব্যক্তি মুমিন নয়? উত্তরে তিনি বললেন, যার হাত ও অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়।’ (বুখারি শরিফ, ২/৮৮৯)।

মানুষের কষ্ট দূর করাও অন্যতম নেক আমল। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো- সাধারণ মানুষের চলাচলে যাতে রাস্তায় কোনো বাধার সৃষ্টি না হয় সেদিকে যত্নবান হওয়া।

কোনো গর্ত থাকলে তা ভরাট করে দেওয়া। আবর্জনা পড়ে থাকলে তা সরিয়ে দেওয়া। মনে রাখতে হবে যে ব্যক্তি আল্লাহর কোনো বান্দার দুঃখ-কষ্ট দূর করবে, কেয়ামতের ময়দানে আল্লাহতায়ালা তার বিপদ দূর করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখবে, আল্লাহ ও কেয়ামতের দিন তার দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখবেন। (বুখারি শরিফ, ২৪৪২)।

আমানতকারীদের আমানত খেয়ানত না করা অন্যতম নেক আমল। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা জেনেশুনে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের সঙ্গে বিশ্বাস ভঙ্গ করো না এবং তোমাদের পরস্পরের আমানত সম্পর্কেও বিশ্বাস ভঙ্গ করো না।’ (সুরা আনফাল, আয়াত ২৭)।

ওয়াদা করলে ওয়াদা যেন ভঙ্গ না করি। আল্লাহ বলেন, ‘যখন তোমরা নিজেদের মধ্যে আল্লাহর নামে অঙ্গীকার করবে, তখন তোমরা তা পূর্ণ করবে এবং একবার পাকাপোক্ত করার পর সে অঙ্গীকার আর ভঙ্গ করবে না।’ (সুরা নাহল, ৯১)।

আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে প্রতিদিনই কিছু নেক আমল করার তৌফিক দান করুন।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর