সোমবার, ১ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

হোলি আর্টিজান জঙ্গি হামলা-পরবর্তী বাংলাদেশ

এ কে এম শহীদুল হক

হোলি আর্টিজান জঙ্গি হামলা-পরবর্তী বাংলাদেশ

হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা হয়েছিল ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে। জঙ্গিরা দুজন পুলিশ অফিসারসহ দেশি-বিদেশি সর্বমোট ২২ জনকে আগ্নেয়াস্ত্র, ধারালো অস্ত্র ও বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে হত্যা করে। তারা রেস্টুরেন্টের কয়েকজন কাস্টমারকেও জিম্মি করে রেখেছিল। নিহত পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে একজন ডিএমপি গোয়েন্দা বিভাগের সিনিয়র সহকারী কমিশনার রবিউল এবং অন্যজন বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাউদ্দিন।  নিহতদের মধ্যে ১৭ জনই ছিলেন বিদেশি নাগরিক।

জঙ্গিদের উদ্দেশ্য ছিল বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দেওয়া, বাংলাদেশে আইএসআই নামধারী জঙ্গি আছে এবং তারা তৎপর আছে। এ ঘটনার মাধ্যমে তাদের উদ্দেশ্য প্রাথমিকভাবে সফল হয়েছিল। সব আন্তর্জাতিক ও জাতীয় মিডিয়া ফলাও করে জঙ্গি হামলার সংবাদ পরিবেশন করে। এমন দুর্ধর্ষ ঘটনায় দেশের সব মহল হতভম্ব হয়ে পড়েছিল। জনগণের মধ্যে ব্যাপক ভীতির সঞ্চার হয়। সেনাবাহিনীর অভিযানে জঙ্গিরা নিহত হয়।  নিহত জঙ্গিরা ভালো পরিবারের সন্তান, ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া আধুনিক সংস্কৃতিমনা হলেও তারা জঙ্গি আদর্শে দীক্ষা নিয়েছিল।

জঙ্গিরা হলো তথাকথিত ধর্মীয় আদর্শের উগ্রপন্থি। তারা তাদের নিজস্ব ধর্মীয় আদর্শ বা Ideologyধারণ করে। তাদের Ideology হলো মুসলিম বিশ্বে খেলাফত প্রতিষ্ঠা করে মানুষের তৈরি আইন বাতিল করে আল্লাহর আইন বলবৎ করা। তারা বিশ^াস করে খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে হলে জিহাদ করতে হবে। সন্ত্রাসী কর্মকা-ের মাধ্যমে নিরীহ মানুষকে হত্যা করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করাই তাদের জিহাদ। জিহাদের মাধ্যমে জাতীয় সরকারের পতন ঘটিয়ে খেলাফত প্রতিষ্ঠা করা তাদের লক্ষ্য।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুসলিম সংখ্যালঘুরা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তারা ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। আফগানিস্তানের কমিউনিস্ট সরকারের পক্ষে ১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসন এবং কমিউনিস্টবিরোধী মুসলিম গেরিলাদের (তালেবান) সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়া, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা জোট কর্তৃক ইরাক আক্রমণ এবং ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্যাতনের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে সংকট সৃষ্টি ইত্যাদি কারণেই ইসলামী চরমপন্থি সংগঠন আল-কায়েদা ও পরবর্তীতে আইএসআই (ইসলামী স্টেট অব ইরাক) সৃষ্টি হয়।

আল-কায়েদা আত্মপ্রকাশ করে ১৯৮৮ সালে। পাকিস্তানের পেশোয়ারে সিরিজ অব মিটিংয়ের পর আল-কায়েদা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। প্রতিষ্ঠাকালে আল-কায়েদার নেতৃত্বে ছিলেন সৌদি বংশোদ্ভূত ওসামা বিন লাদেন, ড. আবদুল্লাহ আজ্জাম ও আইমান আল জাওয়াহিরি। আল-কায়েদা মুসলিম বিশ্বে খেলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলে। তারা আফগানিস্তানে সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। তখন সোভিয়েত ইউনিয়নবিরোধী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের জোটবদ্ধ দেশগুলো আফগানিস্তানের তালেবান ও আল-কায়েদাকে সমর্থন এবং সহায়তা করেছিল। পরবর্তীতে এসব জঙ্গি সংগঠন তাদের জন্য বুমেরাং হয়েছিল।

আল-কায়েদা বিভিন্ন দেশে তাদের অনুসারী ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য নিয়োগ দেয়। তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের জঙ্গি তৎপরতা ও হামলা চালায়। কেনিয়া ও তানজানিয়ায় ১৯৯৮ সালে মার্কিন দূতাবাসে হামলা করে ২২৪ জনকে হত্যা করে। ২০০০ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারে বিমান হামলার দায়ও আল-কায়েদার। এ হামলায় প্রায় ৩ হাজার লোক নিহত হন। বিশ্বব্যাপী শেয়ারবাজারে পতন হয়।

আল-কায়েদায় বেশকিছু সংখ্যক অতিবিপ্লবী নেতা ছিলেন। তারা দুর্ধর্ষ প্রকৃতির। তারা আল-কায়েদার ধীরে চলা নীতি পছন্দ করছিলেন না। তারা মনে করতেন পৃথিবীর মুসলিম জনতা খেলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য প্রস্তুত। তারা মনে করেন ব্যাপক অভিযানের মাধ্যমে তাদের সংগঠনের সদস্যদের অনুপ্রেরণা দিতে হবে। বিশ্বে জিহাদিদের একত্রিত করতে হবে। এ লক্ষ্য নিয়ে অতিবিপ্লবীরা ২০১৩ সালের এপ্রিলে আল-কায়েদার নায়েবে আমির আবু বকর আল বাগদাদির নেতৃত্বে আইএসআই এল (ইসলামী স্টেট ইন ইরান অ্যান্ড লেভান্ট) প্রতিষ্ঠা করে। পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করে আইএস বা আইএসআই রাখা হয়। আইএসআই ইরাক ও সিরিয়াতে পুরোদমে কাজ শুরু করে। ইরাকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনীর বিরুদ্ধে এবং সিরিয়াতে বাদশাহ আসাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকে। তারা বেশকিছু সাফল্য অর্জন করে। আইএসআই ইরাকের গুরুত্বপূর্ণ শহর ফালুজা দখল করে। কতিপয় ইসলামী রাষ্ট্র আইএসকে প্রকাশ্যে ও গোপনে সহায়তা করে। আইএস ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাকা দখল করে এবং উত্তর ইরাকের তেল ক্ষেত্রের ওপর নিয়ন্ত্রণ লাভ করায় আর্থিকভাবে সমৃদ্ধশালী হয়ে ওঠে।

আইএসআই ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে তাদের আদর্শিক ভাষণ, বিবৃতি, প্রতিবেদন ও প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে এবং বৃহৎ শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বিশ^ব্যাপী এক ধরনের দুঃসাহসিক উন্মাদনা(adventureous craze) সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিল। তারা বিশ্ববাসীকে তাদের সঙ্গে যোগ দিতে আহ্বান জানান। তাদের সৃষ্ট দুঃসাহসিক উন্মাদনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এবং তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে তরুণ-তরুণী ও যুবক-যুবতীরা আইএসে যোগ দিতে ইরাক ও সিরিয়াতে যায়। মুসলিম দেশ ছাড়াও ইউরোপীয় দেশ, অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি দেশ থেকে যুবকরা আইএসআইতে যোগ দেয় এবং তাদের বলা হতো আইএসআইয়ের foreign fighterবা বিদেশি যোদ্ধা।

আইএসআই বিশ্বব্যাপী প্রচারণার মাধ্যমে যে উন্মাদনা(craze)তৈরি করেছিল মার্কিন জোটের হামলায় ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে পড়ে। আইএস তাদের দখলকৃত অনেক ভূখ- হারিয়ে ফেলে এবং দুর্বল হয়ে যায়।

আইএসআইয়ের প্রভাব ও উন্মাদনা বাংলাদেশেও বিস্তার লাভ করে। আফগানিস্তানে সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশে ফিরে আসার পর মাওলানা শায়েখ আবদুর রহমান জেএমবি (জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ) এবং মুফতি হান্নান হুজি (হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী) প্রতিষ্ঠা করেন। এ ছাড়া মুহাম্মদ জসিমউদ্দিন রহমানীর নেতৃত্বে আনসার উল্লাহ বাংলা টিম বা আনসার আল ইসলাম এবং আবদুল মতিন মেহেদীর নেতৃত্বে আল্লাহর দল নামেও জঙ্গি সংগঠন আত্মপ্র্রকাশ করে। তামিম চৌধুরী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক। তিনি সিরিয়াতে আইএসআইয়ের যোদ্ধা হিসেবে কাজ করেছেন। ২০১৩ সালের শেষের দিকে তিনি বাংলাদেশে এসে অতি সঙ্গোপনে সারা দেশে জেএমবির নিষ্ক্রিয় সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিয়ে সক্রিয় করে ও নিউ জেএমবি গঠন করেন। তারা এই সংগঠনকে বাংলাদেশের আইএসআই দাবি করতেন। আইএসআইয়ের আদলেই নিউ জেমবি তৈরি করেন। তারাই হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা করে বিশ^বাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

নিউ জেএমবি দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি জঙ্গি হামলা চালিয়ে নিরীহ লোককে হত্যা করে। মসজিদ ও ঈদগাহতে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মানুষ হত্যা করে। হোলি আর্টিজান বেকারি হামলার পর পুলিশের ব্যাপক অভিযান ও গোয়েন্দা তৎপরতার কারণে জঙ্গিরা সংগঠিত হয়ে আর কোনো হামলা করতে সক্ষম হয়নি। পুলিশের বিশেষ গোয়েন্দা টিম ও ডিএমপির সিটিটিসির চৌকশ কর্মকর্তারা একটির পর একটি জঙ্গি আস্তানা শনাক্ত করে সফল অভিযান পরিচালনা করেন। ওইসব অভিযানে অনেক জঙ্গি গ্রেফতার হয়। কেউ অভিযানে নিহত হয়। অনেক জঙ্গি আত্মাহুতি দেয়। নিউ জেএমবি বেশ কয়েকটি আত্মঘাতী স্কোয়াড তৈরি করেছিল। পুলিশ অভিযান চালিয়ে সব ধ্বংস করে দেয়।

পুলিশ কর্তৃক পরিচালিত জঙ্গিবিরোধী অভিযান ও কাউন্টার নেরেটিভে (counter narrative), পুলিশ সরকার, বিভিন্ন সংস্থা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সামাজিক সংগঠন অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা পেয়েছিল। দেশব্যাপী জঙ্গিবিরোধী প্রচারণা থাকায় জঙ্গি নেতারা নতুন করে আর নিয়োগ করতে পারেনি। জঙ্গিদের শক্তি ও সাহস কমে যায়। এভাবে গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর জঙ্গিবিরোধী সফল অভিযান ও তৎপরতার কারণে বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। তারা আর তেমনভাবে সংগঠিত হতে পারেনি। শক্তি সঞ্চয় করতে পারেনি।

জঙ্গি সংগঠনের নতুন নিয়োগে দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যরা অত্যন্ত চৌকশ ও জ্ঞানসমৃদ্ধ। তারা যুবকদের টার্গেট করে নানা কৌশলে তাদের সংগঠনের মন্ত্র ও আদর্শের প্রতি অনেকটা হিপনোটাইজড করে জিহাদি মনোভাবাপন্ন করে তুলে। আস্তে আস্তে তারা দুর্ধর্ষ জঙ্গিতে রূপ নেয়। সাধারণত যারা নানা প্রচারণায় জঙ্গি সংগঠনগুলো তথাকথিত আদর্শ (Ideology) বা দর্শন (philosophy) অন্ধভাবে বিশ্বাস করে তারাই জঙ্গিতে রূপান্তরিত হয়। যেমন তারা বলে জিহাদে এসে কেউ নিহত হলে তিনি সরাসরি জান্নাতে চলে যাবেন। তাকে হাশরের মাঠে বিচারের জন্য হাজির হতে হবে না। এ প্রচারণায় বিশ্বাস করে যে ব্যক্তি জঙ্গি সংগঠনে যোগদান করে তাকে দিয়ে যে কোনো অমানবিক, বর্বর ও দুর্ধর্ষ কাজ করানো সম্ভব।

মাদকে নেশাগ্রস্ত ব্যক্তিরা যেমন মাদক ত্যাগ করতে পারে না, তদ্রƒপ জঙ্গি আদর্শে যারা দীক্ষা নেয় তারা অন্ধ হয়ে যায়। তারা সত্য-মিথ্যা যাচাই করতে পারে না বা করতে চায় না। এরা তখন ভয়ংকর রূপ ধারণ করে। তাদের মধ্যে মানবিকতা ও যৌক্তিকতার দর্শন কাজ করে না।

জঙ্গিবাদ পুরোপুরি নির্মূল করা কঠিন। শুধু পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্বারা অভিযান, গ্রেফতার, তদন্ত ও বিচারের জন্য আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের মাধ্যমেই জঙ্গিবাদ নির্মূল বা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। যেমন-এক শ্রেণির লোকের ধর্মান্ধতা, ধর্ম নিয়ে অহেতুক বাড়াবাড়ি, কোরআন হাদিসের খ-িত ও মনগড়া ব্যাখ্যা, জান্নাতে যাওয়ার ভুল ও অবাস্তব প্রচারণা বিশ^াস করে জিহাদি হওয়া, ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে জঙ্গিবাদের যে ব্যাপক প্রপাগান্ডা হচ্ছে তা বন্ধ করতে না পারা, এক শ্রেণির শিক্ষক, আলেম, বিদ্বান ব্যক্তিদের প্রচ্ছন্ন এবং কৌশলগত ও পরোক্ষভাবে জঙ্গিবাদের পক্ষে বক্তব্য রাখা ও গোপনে জঙ্গিবাদের পক্ষে কাজ করা, মদত দেওয়া ও প্রচার করা, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ব্যর্থতা, জঙ্গিদের ব্যবহৃত বিভিন্ন অ্যাপস সম্বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সম্যক জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ না থাকা, আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব, জঙ্গিদের বেপরোয়া ভেবে কেউ কেউ নিজ নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে কৌশলগত অবস্থানে থাকে, অপর্যাপ্ত সোর্সমানি, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযানকে নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলের বিতর্কিত ও বিভ্রান্তমূলক মন্তব্য, বিচারকার্য অস্বাভাবিক বিলম্ব, গ্রেফতারকৃত জঙ্গিদের জামিনে বাইর হওয়া, তদন্তে ত্রুটিবিচ্যুতি থাকা, জেলে জঙ্গিদের মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকা বা দুর্বল থাকা, জেলে থাকা অবস্থায় জঙ্গিরা গোপনে বাইরের জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ করার সুযোগ পাওয়া, জঙ্গি ও জঙ্গি তৎপরতা সম্বন্ধে জনগণের সচেতনতার অভাব, ইত্যাদি।

তবে বিভিন্ন পদক্ষেপ ও উদ্যোগের মাধ্যমে জঙ্গিবাদের প্রসার নিয়ন্ত্রণ এবং নতুন নিয়োগ বন্ধ বা হ্রাস করা সম্ভব। এজন্য সব মহলের আন্তরিক অংশগ্রহণ ও সহায়তা প্রয়োজন। জঙ্গিবাদের অপপ্রচারের বিপরীতে কাউন্টার নেরেটিভ (Counter Narrative)তৈরি করে তা ব্যাপকভাবে প্রচার করতে হবে। পরিবারের কর্তা এবং জ্যেষ্ঠ সদস্যদের তরুণ ও অল্প বয়সি সদস্যদের নিবিড় নজরে রাখতে হবে। তারা কোথায় যায়, কার সঙ্গে মিশে, তাদের মধ্যে কোনো পরিবর্তন দেখা যায় কি-না ইত্যাদি লক্ষ্য করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও জঙ্গিবাদের বিরদ্ধে শিক্ষার্থীদের সচেতন করে তুলবে। স্কুল-কলেজের পাঠ্যপুস্তকের পাঠ্যসূচিতে জঙ্গিবাদ এবং জঙ্গিবাদের কুফল ও ভয়াবহতা সম্পর্কিত বিষয়াবলি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সুশীল সমাজ, এনজিও, বিভিন্ন পেশাদার সংগঠন, মসজিদের ইমাম, মাদরাসার শিক্ষক, স্কুল, কলেজ ও ইউনিভার্সিটির শিক্ষক, আলেম ওলামা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি তথা সব শ্রেণি ও মতের জনগোষ্ঠীকে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সচেতন হয়ে সামাজিক বিপ্লব ঘটিয়ে জঙ্গিবাদকে নির্মূল করার বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ অব্যাহত রাখতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারকে জরিপ ও গবেষণালব্ধ জ্ঞানের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক, স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।  পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি, অবকাঠামো নির্মাণ, দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবল তৈরি, লজিস্টিক সাপোর্ট এবং মোটিভেশনাল ও প্রো-অ্যাকটিভ কার্যাবলিকে সচল ও গতিশীল রাখা, পরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রসেসে সব স্টেকহোল্ডারের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার বিষয়ে জোর দিতে হবে।  একই সঙ্গে যারা জঙ্গিবাদে দীক্ষা নিয়েছে তাদের সংশোধন করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে প্রতি প্রশাসনিক বিভাগে ডি-রেডিক্যালাইজড প্রোগ্রাম(De-radicalised program) চালু করে তা কার্যকর ও টেকসই (sustainable)করতে হবে।

লেখক : সাবেক ইন্সপেক্টর জেনারেল, বাংলাদেশ পুলিশ

সর্বশেষ খবর