সোমবার, ১ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

ইসলামে কোনো দুর্নীতির স্থান নেই

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি

ইসলামে কোনো দুর্নীতির স্থান নেই

দুর্নীতি শব্দের অর্থ নীতিহীনতা। দুর্নীতির নির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা নেই। নীতিহীন, আইনবহির্ভূত ও অসদাচরণকে দুর্নীতি বোঝায়। ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে কোনো সুবিধা ভোগ করা অথবা কারও ক্ষতিসাধন করাকেও দুর্নীতি বলে। নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালনে ইচ্ছাকৃত অবহেলা করাও দুর্নীতি। বেতনভুক্ত নির্ধারিত কাজে বেতনবহির্ভূত আর্থিক মুনাফা গ্রহণ অথবা কোনো সুযোগ-সুবিধা ভোগ করাও দুর্নীতির অন্তর্ভুক্ত।

দুর্নীতি একটি সামাজিক অভিশাপ। মারাত্মক এক সামাজিক ব্যাধি। আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে এই মহামারি। ছোট, বড়, সরকারি, বেসরকারি, সব ধরনের কর্মক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়েছে এই দুর্নীতির থাবা। ইসলাম কোনো ধরনের দুর্নীতিকে সমর্থন করে না। কোরআন-হাদিসে দুর্নীতির জন্য ইহ ও পরকালে কঠিন শাস্তির ঘোষণা করা হয়েছে। মহান প্রভু উল্লেখ করেন, ‘যারা দেশে সীমা লঙ্ঘন করেছে, আর চরম দুর্নীতিতে লিপ্ত হয়েছে, তাদের ওপর আপনার প্রভু শাস্তির কশাঘাত করেছেন।’ (সুরা আল ফাজর-১১-১৪)। মহান আল্লাহ অন্যের অধিকার নষ্ট করাকে হারাম ঘোষণা করেছেন। প্রত্যেকের প্রাপ্য যথাযথভাবে প্রদান করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দেন যে, তোমরা যেন প্রাপ্য আমানতসমূহ প্রাপকের কাছে পৌঁছে দাও।’ (সুরা আন নিসা ৫৮)। অপর আয়াতে আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, ‘তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের সম্পদ অবৈধভাবে ভোগ করো না।’ (সুরা আল বাকারা-১৮৮)। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে দেহের মাংস অবৈধ সম্পদে গঠিত হয়েছে, তা বেহেশতে প্রবেশ করবে না।’ (আহমদ-সহিহ)। দুর্নীতির একটি বড় সেক্টর হলো, ঘুষ আদান-প্রদান। ঘুষ বলতে সাধারণত কোনো কাজের বিনিময়ে ওই কাজের নির্ধারিত বেতনভুক্ত কর্মচারীকে কোনো সুবিধা প্রদান করাকে বোঝায়। তা অর্থের মাধ্যমে হোক বা অন্য কোনো উপায়ে হোক, স্বেচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক, চাই তা ঘুষ, উৎকোচ, হাদিয়া, বখশিশ, খরচাপাতি, কমিশন অথবা সম্মানি ইত্যাদি কোনো শিরোনামে হোক, সবই নিষিদ্ধ ঘুষ লেনদেনের অন্তর্ভুক্ত। ঘুষ দেওয়া এবং গ্রহণ করা উভয়টিই হারাম ও দুর্নীতির অন্তর্ভুক্ত। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘ঘুষদাতা ও গ্রহীতা উভয়ই জাহান্নামি।’ (তাবরানি)। অপর এক বর্ণনায় ফরমান, ‘ঘুষদাতা ঘুষ গ্রহীতা এবং এর সহায়তাকারীর ওপর রসুলুল্লাহ (সা.) অভিশাপ করেছেন।’ (আহমদ)। ঘুষ গ্রহীতা যার কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ করেছে তা ওই ব্যক্তির কাছে বা তার উত্তরসূরিদের কাছে ফেরত দিতে হবে। তবে তা অসম্ভব হলে ওই মাল সদকা করতে হবে। অতঃপর তওবা করে পাপমুক্ত হতে হবে। তবে ঘুষদাতা কখনো নিরুপায় হয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও তার ন্যায্য প্রাপ্য আদায়ের জন্য অথবা অত্যাচার-নির্যাতন থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য ঘুষ প্রদান করে থাকে। এ অবস্থায় ঘুষ প্রদানের ক্ষেত্রে যদিও ছাড় আছে, কিন্তু এর জন্য ঘুষ প্রদানকারীকেও তওবা করা সমীচীন। ঘুষ এবং দুর্নীতি হলো অন্যায়ভাবে এবং অবৈধ পদ্ধতিতে কারও সম্পদ গ্রাস করার অপকৌশল। আধুনিক বিশ^ উন্নয়নের পথে কঠিন প্রতিবন্ধক এই ঘুষ-দুর্নীতির প্রথা। জাতিসত্তার অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে এই বিপদ। তাই এর প্রতিরোধকল্পে সর্বস্তরের জনগণকে সচেতন হওয়া বর্তমান সময়ের একান্ত দাবি।

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা

সর্বশেষ খবর