মঙ্গলবার, ২ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

কোরআনে নেককার শাসকের গুণাবলি

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

কোরআনে নেককার শাসকের গুণাবলি

ক্ষমতা ও রাজত্বও আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে। তবে রাজত্ব কারও হাতে আসে নেয়ামত হয়ে, কারও জন্য আসে অভিশাপ হয়ে। ক্ষমতা যদি আল্লাহর ভয়, জবাবদিহি ও সেবার মনোভাব জাগ্রত করে এবং সেভাবেই ব্যবহার হয়, তাহলে বুঝতে হবে সেটি অবশ্যই আল্লাহর নেয়ামত। কিন্তু ক্ষমতা যদি হয় জুলুম ও শোষণের হাতিয়ার, নির্ঘাত তা নিজের জন্য এবং সংশ্লিষ্ট সবার জন্যই বিপদ ও অভিশাপ। কোরআনে নেককার শাসকের সফলতা ও সুখবরের কথা যেমন এসেছে, এসেছে জালেম শাসকদের প্রতি অভিশাপ ও করুণ পরিণতির কথাও। কোরআনের আলোকে একজন নেককার শাসকের কী কী গুণাবলি থাকতে হবে সংক্ষেপে জেনে নিই চলুন। নেককার শাসকের প্রথম গুণ হতে হবে আল্লাহ ও পরকালের ভয়। এমন শাসক ছিলেন হজরত দাউদ (আ.) এবং তাঁর পুত্র হজরত সুলাইমান (আ.)। বাবা ও ছেলে দুজনই একাধারে নবী ও বাদশাহ ছিলেন। সুলাইমান (আ.)-কে আল্লাহতায়ালা নবুয়াতের পাশাপাশি সুবিশাল রাজত্বও দান করেছিলেন। তাঁর প্রজাদের মধ্যে মানুষের পাশাপাশি জিন জাতি ও পাখিকুলও শামিল ছিল। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘সুলাইমানের জন্য তার বাহিনীগুলো সমবেত করা হলো, যাতে ছিল জিন, মানুষ ও পাখিকুল। তাদের বিভিন্ন দলে বিন্যস্ত করা হতো। (সুরা নামল, আয়াত ১৭) রাজত্ব পেয়ে সুলাইমান (আ.) কোনো ধরনের অহংকার করেননি। বরং তিনি বিনয়ী ভাষায় বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই এটি আল্লাহতায়ালার সুস্পষ্ট অনুগ্রহ। (সুরা নামল, আয়াত ১৬) অর্থাৎ এমন রাজত্ব পাওয়ার পরও আল্লাহমুখিতা ও আল্লাহর প্রতি ভালোবাসাই ছিল তাঁদের পুঁজি। একজন নেককার বাদশাহর দ্বিতীয় গুণ হবে ইনসাফ কায়েম করা। হজরত দাউদ (আ.)-কে নসিহত করে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে দাউদ! আমি পৃথিবীতে তোমাকে খলিফা বানিয়েছি। সুতরাং তুমি মানুষের মধ্যে ন্যায়বিচার করো এবং খেয়াল-খুশির অনুগামী হয়ও না। অন্যথায় তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে। নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয় তাদের জন্য আছে কঠিন শাস্তি, যেহেতু তারা হিসাবের দিনটি ভুলে ছিল। (সুরা ছদ, আয়াত ২৬)। ন্যায় ইনসাফ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি একজন নেককার শাসক শিষ্টের লালন ও দুষ্টের দমন করবেন। অতীতে ‘জুলকার নাইন’ নামে একজন দীনদার বাদশাহ ছিলেন। কোরআনে তাঁর কিছু ঘটনা ও গুণাবলি উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি একবার সফরে বের হলেন। যেতে যেতে এমন স্থানে পৌঁছলেন, যে এলাকা খুব দুর্গম জায়গা। সেখানে সচরাচর বাদশাহ বা তার বাহিনী আসা-যাওয়া করে না। সে জনপদের বাসিন্দাদের ব্যাপারে জুলকার নাইনকে আল্লাহ নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘হে জুলকার নাইন! এখন তোমার দুটো করণীয়। হয় তুমি তাদের শাস্তি দেবে, নতুবা তাদের ব্যাপারে উত্তম ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’ এর পরিপ্রেক্ষিতে জুলকার নাইন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তার সারমর্ম হলো, ‘আমি তাদের সরল পথে চলার দাওয়াত দেব, যারা দাওয়াত কবুল না করে এভাবে জুলুমের পথ অবলম্বন করবে আমি তাদের শাস্তি দেব। যারা দাওয়াত কবুল করে ইমান আনবে এবং সৎকর্ম অবলম্বন করবে, তাদের প্রতি আমি সহজ ও সদয় আচরণ করব।’ (বিস্তারিত দেখুন- সুরা কাহফ, আয়াত ৮৪-৮৬)। রাজা-বাদশাহদের যেমন ভালো-মন্দ দুটোই করার ক্ষমতা থাকে, তেমনি জুলকার নাইনকে দুই বিষয়েই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে রাষ্ট্রে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালন সহজ হয়। দেশের সম্পদ ও জনগণের জীবনমান রক্ষার জন্য পরিপূর্ণ যোগ্যতা অর্জন করা নেককার শাসকের চতুর্থ গুণ। আল্লাহর নবী ইউসুফ (আ.) দেশের পরিস্থিতি দেখে এবং আসন্ন ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের কথা চিন্তা করে নিজ থেকে আবেদন করে দেশের অর্থ বিভাগের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিলেন। নিজের গুণকীর্তন বা ক্ষমতার লোভে নয়; বরং দেশ ও জাতির কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্যেই নিজের মধ্যে নিহিত দুটো গুণের কথা বাদশাহকে জানিয়ে দিয়েছিলেন। কোরআনের ভাষায় তিনি বলেছিলেন, ‘আপনি আমাকে দেশের অর্থ-সম্পদ ব্যবস্থাপনার কাজে নিযুক্ত করুন। নিশ্চিত থাকুন, আমি রক্ষণাবেক্ষণে পারদর্শী ও সুবিজ্ঞ।’ (সুরা ইউসুফ, ৫৫)।

♦ লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি

পীরসাহেব, আউলিয়ানগর

সর্বশেষ খবর