শুক্রবার, ৫ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

ছাগলকাণ্ড ও ইহুদিদের গরুকাণ্ড

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি

ছাগলকাণ্ড ও ইহুদিদের গরুকাণ্ড

হজরত মুসা (আ.)-এর সময়ে একটি গাভির মাধ্যমে বনি ইসরাইল বা ইহুদিদের মধ্যে সংঘটিত একটি হত্যারহস্য উন্মোচন হয়েছিল। তদানীন্তন মিসরে অবস্থানরত বনি ইসরাইল নামক গোত্রের এই কাহিনি কোরআনে কারিমে স্থান পেয়েছে। এ ঘটনায় বর্তমান প্রজন্মের জন্য বহু শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। রয়েছে মানব জাতির ন্যায়-অন্যায়জনিত কিছু অভ্যাসের বিবরণ। বনি ইসরাইলের জনৈক সম্পদশালী ব্যক্তির ঘটনা। তার কোনো ছেলে সন্তান ছিল না। ছিল একটি প্রাপ্তবয়স্ক কন্যাসন্তান। তাড়াতাড়ি সম্পদ পাওয়ার আশায়, মতান্তরে সম্পদ ভোগ করা ও মেয়েকে বিয়ে করার লক্ষ্যে ওই ব্যক্তিকে তার ভাতিজা হত্যা করে, রাতে এক ব্যক্তির ঘরের পাশে লাশ ফেলে রাখে। পরদিন ওই ব্যক্তির ওপর হত্যার অপবাদ দেয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে মারামারি ও খুনোখুনির উপক্রম হয়। এক পর্যায়ে তারা নবী মুসা (আ.)-এর শরণাপন্ন হলে আল্লাহ একটি গাভির মাধ্যমে ওই হত্যারহস্য উন্মোচন করেন। যে সুরায় এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে তার নামকরণই হয়েছে সুরা আল বাকারা। বাকারা অর্থ-গাভি। মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘স্মরণ করো, যখন মুসা (আ.) তার সম্প্রদায়কে বললেন, আল্লাহ তোমাদের একটি গরু জবাই করতে বলেছেন’ (সুরা আল বাকারা-৬৭)।

ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ হলো, হত্যারহস্য উন্মোচনের জন্য মহান আল্লাহ তাদের একটি গরু জবাই করতে বলেছেন। জবাইকৃত গরুর একটি গোশতখণ্ড দ্বারা নিহতের গায়ে স্পর্শ করা হলে সে জীবিত হয়ে যাবে এবং হত্যাকারীর নাম বলে দেবে। নবী মুসা (আ.)-এর মাধ্যমে আল্লাহর এ নির্দেশনা শোনার পর বনি ইসরাইলের ইহুদিরা হত্যার ঘটনা চাপা রাখার লক্ষ্যে গরু জবাই না করার বহু ছলচাতুরী ও বিভিন্ন অজুহাতের আশ্রয় নেয়। অবশেষে সব অজুহাতের অবসান ঘটে। একটি নিখুঁত গরু জবাই করে তারা ওই জবাইকৃত গরুর একখণ্ড গোশত মৃত ব্যক্তির গায়ে স্পর্শ করে। তখন ওই ব্যক্তি দাঁড়িয়ে যায়। লোকজন তাকে জিজ্ঞাসা করে, তোমাকে কে হত্যা করেছে? সে বলল, আমাকে আমার ভাতিজা হত্যা করেছে। অতঃপর সে পুনরায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এই একটি গরুর মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা বনি ইসরাইলের অনিচ্ছা সত্ত্বেও একটি পাপ ও এর রহস্য উন্মোচন করেন। আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘অতঃপর তারা জবাই করল, যদিও তারা জবাই করতে আগ্রহী ছিল না। স্মরণ করো, যখন তোমরা এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলে এবং পরস্পর দোষারোপ করছিলে আল্লাহ তা প্রকাশ করেছিলেন। আমি বললাম গরুর একটি খণ্ড দ্বারা মৃতকে আঘাত কর। এভাবেই আল্লাহ মৃতকে জীবিত করেন এবং তাঁর নির্দেশনা তোমাদের দেখিয়ে দেন, যাতে তোমরা অনুধাবন করতে পারো’ (সুরা আল বাকারা ৭১-৭৩)। উল্লিখিত ঘটনায় বিশ্ব মানবতার জন্য অনেক উপদেশ রয়েছে। রয়েছে মহান প্রভুর শক্তি এবং ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় হলো, অন্যায়-অনাচার করে সর্বদা পার হওয়া যায় না।

দুর্নীতি ইচ্ছা করলেই গোপন করা যায় না। মহান প্রভু কখন কীভাবে প্রকাশ করে দেবেন তা কল্পনা করা যায় না। সম্প্রতি বাংলাদেশে একটি ছাগলকাণ্ডে ধরা পড়ল কত রাঘববোয়াল। কেঁচো ধরতে বেরিয়ে এলো সাপ। লাখ টাকার ছাগলে খেল কোটি টাকার ফসল। ছাগলকাণ্ডে বেরিয়ে এলো দুর্নীতিবাজদের থলের বিড়াল। বারবার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান, এইবার ঘুঘু তোমার বধিব পরান। অতএব আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে প্রকাশ্য ও গোপন সবই আল্লাহ জানেন। তিনি ইচ্ছা করলেই যে কোনোভাবে তা প্রকাশ করতে পারেন। শাস্তির মুখোমুখি করতে পারেন। তাই তাঁকে ভয় করা এবং তাঁর নির্দেশনা পালন করা আমাদের একান্ত প্রয়োজন। প্রয়োজন তাঁর ভয়ে সব ধরনের অন্যায় ও দুর্নীতি পরিহার করা।

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা

সর্বশেষ খবর