শনিবার, ৬ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

কোরআনের দৃষ্টিতে পারিবারিক বন্ধন

মুফতি মাহমুদুল হক জালীস

কোরআনের দৃষ্টিতে পারিবারিক বন্ধন

জীবন চলার পথে সঙ্গী হিসেবে স্বামী-স্ত্রী যে কত বড় নিয়ামত, তা আমরা কিছুটা অনুমান করতে পারি কোরআনে বর্ণিত বিভিন্ন বিবরণ থেকে। যেখানে আল্লাহ পারিবারিক বন্ধনের তাৎপর্য তুলে ধরেছেন। জানিয়ে দিয়েছেন পারিবারিক জীবনের মূল্য। সে জন্য পারিবারের জন্য সব সময় দোয়া করার কথা কোরআনে বর্ণিত হয়েছে। এরশাদ হচ্ছে, হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের এমন জীবনসংগী ও সন্তান-সন্ততি দান করুন, যাদের দেখে আমাদের চোখ জুড়াবে। আর আপনি আমাদের মুত্তাকিদের জন্য ইমাম বানিয়ে দিন (সুরা ফুরকান-৭৪)। বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর ভিতরে যে বন্ধন ও ভালোবাসা তৈরি হয়, তা আল্লাহর এক অসামান্য সৃষ্টি। কোনো ধরনের পূর্ব পরিচয় ছাড়াই, সম্পূর্ণ অপরিচিত একটি ছেলে ও মেয়ে যখন বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে একে অন্যকে জীবনসঙ্গী রূপে বরণ করে নেয়; তখন আল্লাহ তাদের মধ্যে কুদরতিভাবে সৃষ্টি করে দেন এক স্বর্গীয় আকর্ষণ ও ভালোবাসা। একবার ভেবে দেখুন, আল্লাহ যদি নিজ অনুগ্রহে এ আকর্ষণ সৃষ্টি করে না দিতেন, তবে একসঙ্গে দুজন অপরিচিত মানুষের বসবাস করাই দুষ্কর হয়ে পড়ত। এ প্রসঙ্গে কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, তিনি তো সেই সত্তা, যিনি তোমাদের এক প্রাণ থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকে তার স্ত্রীকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে সে তার নিকট শান্তি পায় (সুরা আরাফ-১৮৯)। পুরুষদের উদ্দেশ্য করে কোরআনে আল্লাহ এ প্রসঙ্গে আরও বলেছেন- ‘তিনি তোমাদের থেকে তোমাদের স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করে দিয়েছেন’ (সুরা রুম-২১)।

স্বামী-স্ত্রী দুজনের মাধ্যমে সন্তান নামের এক নিয়ামত দান করেন আল্লাহ। ঔরসজাত এ সন্তানের প্রতি বাবা-মায়ের ভালোবাসার কোনো কমতি থাকে না। কারণ সন্তান ছাড়া সংসারে পূর্ণতা আসে না। শুধু সাংসারিক পূর্ণতাই নয়, নিজের জীবনও যেন অপূর্ণ থেকে যায়। নিঃসন্তান দম্পতি যারা আছে কেবল তারাই অনুভব করতে পারবে, নিয়ামত হিসেবে সন্তান যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ! কোরআনে আল্লাহ এমনই এক নিঃসন্তান দম্পতির আকুতির বিবরণ তুলে ধরেছেন। ঘটনাটি আমাদের নবী হজরত জাকারিয়া আলাইহিস সালামের। নিঃসন্তান অবস্থাতেই কেটে গিয়েছিল তার যৌবনের সোনালি দিনগুলো। সময় অতিবাহিত হতে হতে তার জীবনে এসে হানা দেয় বার্ধক্য। ক্রমে মাথার কালো চুলগুলো ধবধবে সাদা হয়ে যায়। বয়সের ভারে শরীর হয়ে পড়ে দুর্বল। এমন পরিস্থিতিতেও তিনি সন্তানের আকাক্সক্ষা উপেক্ষা করতে পারেননি। ভুলতে পারেননি নিঃসন্তানের যাতনা। তাই বাধ্য হয়ে রবের দরবারে ফরিয়াদ জানিয়ে ছিলেন একজন সন্তানের। কোরআনে যেটা বর্ণিত হয়েছে এভাবে- “(এটি) স্বীয় বান্দা জাকারিয়ার প্রতি তোমার প্রতিপালকের রহমতের বিবরণ : যখন সে স্বীয় প্রতিপালককে মৃদুস্বরে ডাকল। সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমার হাড়গুলো দুর্বল হয়ে গেছে, চুলগুলো সাদা হয়ে গেছে; কিন্তু হে আমার প্রতিপালক! আপনার নিকট প্রার্থনা করে আমি কখনো বিফল হইনি। আমি আমার পরে আমার ভাই-বেরাদারদের ব্যাপারে ভয় করি, অথচ আমার স্ত্রী বন্ধ্যা। তবুও আপনি আমাকে আপনার পক্ষ থেকে একজন উত্তরাধিকারী দান করুন, যে আমারও উত্তরাধিকারী হবে এবং ইয়াকুবের বংশধরের উত্তরাধিকারও লাভ করবে। হে প্রতিপালক! তাকে এমন বানান, যে আপনার সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত হবে। (আল্লাহ বললেন, হে জাকারিয়া! আমি তোমাকে এক পুত্রের সুসংবাদ দিচ্ছি, যার নাম হবে ইয়াহইয়া। আমি আগে এ নামে আর কাউকে সৃষ্টি করিনি। (সুরা মারইয়াম-২-৭)।

লেখক : ভাইস প্রিন্সিপাল, খাদিমুল ইসলাম মাদরাসা কামরাঙ্গীরচর, ঢাকা

সর্বশেষ খবর