শিরোনাম
সোমবার, ৮ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

দুনিয়ার মোহই সব পাপের উৎস

মো. আমিনুল ইসলাম

দুনিয়ার মোহই সব পাপের উৎস

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন, ‘এই পার্থিব জীবন ছলনাময়ী ও ধোঁকা ছাড়া কিছুই নয়।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১৮৫)। আল্লাহ আরও বলেন, ‘পার্থিব জীবন ক্রীড়া কৌতুক ব্যতীত কিছুই নয়। পারলৌকিক জীবনই তো প্রকৃত জীবন যদি তারা জানত।’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত ৬৪)। আল্লাহ মানুষ সৃষ্টির আগে এই দুনিয়া সৃষ্টি করেন। তাকে মানুষের বসবাসের যোগ্য করে তোলেন। এই প্রকৃতি, নদী, সাগর, জীব জানোয়ার সবই মানুষের জন্য। এই মনোরম দুনিয়ায় আমরা বসবাস করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত এর প্রেমে ডুবে আছি। দুনিয়ার সম্পদের প্রতি লালায়িত হয়ে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছি। অন্যায়, জুলুম করছি। এমনকি সম্পদের জন্য হত্যা করতেও দ্বিধাবোধ করছি না।

ইমাম গাজ্জালি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, মনে রেখো, তুমি যদি একবার দুনিয়ার পেছনে লেগে যাও তবে আর রক্ষা নেই। দরকারের অতিরিক্ত দুনিয়া লাভ করতে গেলে নিশ্চয়ই তুমি নানা কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়বে এবং এতে তোমার দৈনন্দিন ধর্মীয় আচার-আচরণে ব্যাঘাত ঘটবে। দুনিয়ার ধন সম্পদ তুমি যতই লাভ করবে তোমার আরও বেশি পাওয়ার আকাক্সক্ষা আরও তত বেশি বৃদ্ধি পাবে। দুনিয়া এক মরীচিকা। দুনিয়া তার চাকচিক্য, সম্পদ, ছলনা, নারী দিয়ে মানুষকে মোহাবিষ্ট করে রেখেছে। এই দুনিয়া আল্লাহর নির্দেশে একসময় লন্ডভন্ড হয়ে যাবে। হয়ে যাবে চূর্ণবিচূর্ণ। তারপরও আমরা দুনিয়ার পেছনে ছুটছি। আমাদের আরও চাই। সম্পদের পাহাড় গড়তে আমরা মরিয়া। অথচ এই ঘরবাড়ি, সম্পদ, সন্তান, স্ত্রী সবকিছু ছেড়ে পাড়ি দিতে হবে কবর নামক মাটির ঘরে। আল্লাহ রব্বুল আলামিন এই পৃথিবীকে এত মোহনীয় করে তৈরি করেছেন আমাদের পরীক্ষা করার জন্য। আর আমরা এই দুনিয়ার প্রতি এত বেশি ভোগবিলাসে গা ভাসিয়েছি যা বলাই বাহুল্য। আল্লাহ রব্বুল আলামিন তাঁর বান্দাদের দুনিয়ার ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে অনেক সাবধান বাণী উচ্চারণ করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘জেনে রাখো তোমাদের ধন সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি হচ্ছে পরীক্ষা মাত্র।’ (সুরা আনফাল, আয়াত ২৮)। দুনিয়ায় সম্পদ বাড়াতে গিয়ে মানুষ প্রতিনিয়ত গুনাহ ও পাপ করতে দ্বিধা করছে না। যার ফলে আজকে আমাদের সমাজে ঘুষ, দুর্নীতি, সুদ চরম আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষের মধ্যে বেড়েছে হিংসা হানাহানি। কেউ অল্পে তুষ্ট হতে পারছে না। তার আরও চাই। সমাজে বেড়েছে প্রতিযোগিতা। অথচ কেউ মানতেই চায় না এই বাড়ি গাড়ি, সম্পদ, সন্তান, আপনজন সবকিছু ছেড়ে তাকে দুনিয়ার জীবন থেকে বিদায় নিতে হবে। কিছুই তার সাথী হবে না। দুনিয়ার মোহে পড়ে পার্থিব জীবনে আরাম আয়েশে জীবনযাপন করার জন্য মানুষ যা কিছুই করুক না কেন সবই ব্যর্থ। সবই ধ্বংস। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘হে মানবজাতি! তোমাদের অবাধ্যাচরণ তোমাদের বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এটা ক্ষণস্থায়ী জীবনের সুখশান্তি মাত্র। অতঃপর তোমাদের আমার কাছে ফিরে আসতে হবে। তখন আপন কৃতকর্ম সম্পর্কে আমি তোমাদের অবহিত করব।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত ২৩)। প্রত্যেক মানুষের জন্য নেক আমল ছাড়া বিকল্প কিছু নেই। দুনিয়ার সুখ সম্পদের এক কানা কড়িও মূল্য নেই। পরকালের পাথেয় হলো দুনিয়া অর্জিত নেক আমল। আল্লাহ বলেন, ‘প্রাচুর্যের লালসা তোমাদের গাফেল করে রেখেছে। এভাবে এক পর্যায়ে তোমরা কবরের সাক্ষাৎ লাভ করবে।’ (সুরা তাকাসুর, আয়াত ১-২)। সুতরাং দুনিয়ার মোহ আমাদের যতই আবিষ্ট করুক না কেন আমাদের গন্তব্য হলো কবর। সুতরাং কবর ও পরকাল জীবনের কথা চিন্তা করে দুনিয়ার মোহ, সুখ, সম্পদ থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আমার যত বাড়ি, গাড়ি, জমি, টাকা পয়সা থাকুক না কেন সবকিছু ছেড়ে কবর দেশে যেতেই হবে। এর কোনো ব্যত্যয় নেই।

আল্লাহ বলেন, ‘যা কিছু সম্পদ তোমাদের কাছে আছে তা এক দিন নিঃশেষ হয়ে যাবে, অন্যদিকে আল্লাহর কাছে এর যা বিনিময় আছে তা হামেশাই বাকি থাকবে।’ (সুরা নাহল, আয়াত ৯৬)। সুতরাং পরকালীন জীবনে সুখ ও অনাবিল শান্তির কথা চিন্তা না করে যারা দুনিয়ার মোহে ধন-সম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে দুর্নীতি, ঠগবাজি, প্রতারণা করছে তারা বুঝতে চায় না এ জীবন, সন্তান-সন্ততি, অর্থ-সম্পদ সবই আল্লাহর পরীক্ষা মাত্র। অতএব এর মোহ শুধু ধ্বংসেরই নামান্তর। সুতরাং দুনিয়ার সম্পদের প্রতি মোহ না বাড়িয়ে প্রত্যেক বান্দার একমাত্র প্রধান কর্তব্য আল্লাহর বাণীসমূহ মেনে জীবন পরিচালনা করা। আজকে যারা হাসি, তামাশা, আনন্দ, খেলায় মত্ত তারাই সেদিন (কেয়ামত দিবসে) কঠিন সময়ের মুখোমুখি হবে এবং এই পার্থিব জীবনকে অতি তুচ্ছ ও ক্ষুদ্র মনে করবে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা দুনিয়াতে অল্প সময়ই অবস্থান করেছিলে, যদি তোমরা জানতে।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত ১১৪)। মানুষ যদি একটু আন্তরিকতার সঙ্গে চিন্তা করত তাহলে সে কখনো দুনিয়ার জীবনের প্রতি মোহগ্রস্ত হতো না। অন্যায়, অবিচার, হানাহানি, মিথ্যার আশ্রয় নিত না। কাউকে কষ্ট দিত না। সৎ জীবনযাপন করে এই দুনিয়া থেকে বিদায় নিত। পরকালের সুখ-শান্তি লাভের আশায় সাধারণভাবে জীবনযাপন করত। আল্লাহ বলেন, ‘হে মানুষ, তোমরা জেনে রাখো আল্লাহর ওয়াদা নিশ্চিতরূপে সত্য। সুতরাং পার্থিব জীবন যেন তোমাদের ধোঁকায় ফেলে না রাখে।’ (সুরা ফাতির, আয়াত ৫)। আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে দুনিয়ার মোহ থেকে মুক্তি দান করুক এবং আখেরাতের জীবনের কথা স্মরণ করে বেশি বেশি নেক আমল করার তৌফিক দান করুন।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার

সর্বশেষ খবর