বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

ওদের দল নেই দেশ নেই

মো. মাজহারুল ইসলাম

ওদের দল নেই দেশ নেই

জাতির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল এক সাগর রক্তের বিনিময়ে। অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার পর পলাশীর প্রান্তরে হারানো স্বাধীনতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলার মাটিতে পুনরায় কায়েম হয়েছিল। একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন জাতিকে পুনর্গঠনের জন্য বঙ্গবন্ধু যখন ব্যতিব্যস্ত তখন স্বাধীনতাবিরোধী এবং নিজ দলেরই কতিপয় মিরজাফর চক্রান্ত করে বঙ্গবন্ধু সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিল।

রংপুরের বাসন্তীকে জাল পরিয়ে তার লজ্জা নিবারণের দৃশ্য তৎকালীন বিভিন্ন পত্রিকা ফলাও করে প্রকাশ করেছিল। তখন একটি শাড়ির দাম ছিল ২০ টাকা এবং একটি জালের দাম ছিল ১০০ টাকা। ২০ টাকা দিয়ে শাড়ি না কিনে ১০০ টাকা দিয়ে জাল কিনে কীভাবে বাসন্তী তার লজ্জা নিবারণ করল এ প্রশ্ন অনেকের মনে জাগেনি। বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যার পর জাতির ললাটে নেমে এসেছিল চরম দুর্ভোগ। গণতন্ত্র নামক শব্দটি বন্দি হয়েছিল ক্যান্টনমেন্টে। সেনাশাসক জিয়াউর রহমান খুনি খন্দকার মুশতাকের হাত ধরে বাংলাদেশের শাসনভার গ্রহণ করে পরবর্তীতে রাজনৈতিক দল গঠন করে রাজনীতিকে ডিফিক্যাল্ট করে ফেলেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীকে একের পর এক বন্দি করে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। আমি ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলাম। তখন একমাত্র বোস প্রফেসর ড. আবদুল মতিন চৌধুরী ছাড়া অন্য কোনো বুদ্ধিজীবীকে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করতে শুনিনি। টকশোতে এখন দেখি বুদ্ধিজীবীদের ইতিহাস চর্চা। আওয়ামী লীগের সেই দুঃসময়ে এরা কোথায় ছিলেন? সেটা অনুধাবন করতে হবে বর্তমান আওয়ামী লীগকেই।

বিশ্ববিদ্যালয় দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। যে শিক্ষক জাতির গৌরব সেই শিক্ষকই যখন নিজেদের স্বার্থে লেলিয়ে দেন ছাত্রসমাজকে তখন জাতির আশা-ভরসার আর কিছু থাকে না। তথ্য প্রমাণসহ পত্রিকার হেডলাইনে দুর্নীতির চালচিত্র লিখতে লিখতে সাংবাদিকরাও ক্লান্ত। কে শোনে কার কথা? সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। সরকারের প্রতিটি অঙ্গ দুর্নীতির ক্যান্সারে আক্রান্ত। এটা আজ জাতীয় ব্যাধি।

দেশে দেড় দুই দশক আগেও যারা ধারদেনা করে সংসার চালাত যারা সরকারি চাকরি করে কিংবা রাজনীতি করে তাদের অনেকেই এখন শত শত কোটি টাকার মালিক। এদের কি আলাদিনের চেরাগ আছে? আমার জানা মতে, সরকারের এমন কোনো প্রতিষ্ঠান নেই, যেটা দুর্নীতিমুক্ত। কোনো কোনো দফতরে অফিস সহায়ক পদে চাকরি পেতেও ১০-১২ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়। দুর্ভাগ্য হলো সরকার বদল হতে সময় লাগে; কিন্তু আমাদের মন বদল হতে সময় লাগে না। আমরা রাতারাতি লেবাস পাল্টে ফেলি। শুধু বর্তমান নয়, অতীতের সরকারগুলোর চেহারা একই। তথাকথিত বহিরাগত কাউয়াদের প্রভাব আধিপত্যে প্রকৃত নেতা-কর্মীরা আত্মসম্মান রক্ষার জন্য নিজগৃহে বসে থাকেন আর আত্মগ্লানিতে ভোগেন। এটাই দেশের সার্বিকচিত্র। জাতি এর অবসান চায়। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্যকন্যা এখন দেশের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর ধমনিতে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর রক্ত। শেখ হাসিনার হাত দিয়েই বাংলার জমিনে কায়েম হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ। শেখ হাসিনাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শেষ ঠিকানা। তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছে। যদি অসৎ রাজনীতিক ও অসৎ আমলাদের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট ঘুষ-দুর্নীতি না হতো দেশ ইতোমধ্যেই পৌঁছে যেত আরও উচ্চ সোপানে। দুর্নীতিই জাতিকে তার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে বারবার বাধাগ্রস্ত করছে। ইংরেজিতে একটি কথা আছে, “Late is better then never” বিলম্বে হলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কঠোর হতে বাধ্য হয়েছেন দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। খুঁজে খুঁজে বের করতে হবে দুর্নীতিবাজদের। প্রমাণ সাপেক্ষে প্রতিটি দুর্নীতিবাজকেই আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, দুর্নীতিবাজ যেই হোক, সে শুধু ব্যক্তি বা দলের নয়, জাতির শত্রু। একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত করতে পারবেন সেটা জাতি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে।

দল-মত-নির্বিশেষে এ দেশের প্রতিটি সচেতন নাগরিককেই দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। তাদের অসৎভাবে উপার্জিত অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করে ইতিহাসে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। কাউকে কোনো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীল পদে বসানোর আগে তার অতীত এবং পারিবারিক ইতিবৃত্ত গভীরভাবে অনুসন্ধান করতে হবে। প্রশাসনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের প্রবণতা কমাতে হবে। মনে রাখা দরকার, কোনো ব্যক্তিই কোনো বিশেষ চেয়ারের জন্য অপরিহার্য নয়। প্রকৃত রাজনীতিবিদদের হাতে রাজনীতির পতাকা তুলে দিতে হবে। সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিকে পদোন্নতি দিতে হবে। অসৎ ব্যক্তিদের বিদায় দিতে হবে। কাজগুলো খুব কঠিন কিন্তু অসম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিরোধের যাত্রা শুরু করেছেন। এ অভিযানে কে হারবে, কে জিতবে সেটা দেখার জন্য জাতি গভীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।

আমরা একটি সোনালি ভবিষ্যতের সুন্দর স্বপ্ন দেখি। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই। বাঙালি খুবই অকৃতজ্ঞ জাতি। আপনকে পর করে দিতে আমাদের বিবেক বাধে না। নিজের স্বার্থের জন্য আমরা মানুষ খুন করতেও দ্বিধাবোধ করি না। বাংলার জমিনে আর যাতে কোনো ১৫ আগস্ট সংঘটিত না হয়, সে দিকে সতর্ক থাকতে হবে। ষড়যন্ত্রকারীরা চিরদিনই ষড়যন্ত্রকারী। তাদের কোনো দল নেই, গোত্র নেই, দেশ নেই।

লেখক : প্রাবন্ধিক

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর