শিরোনাম
শুক্রবার, ১২ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

মহররম মাসে করণীয় ও বর্জনীয়

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি

মহররম মাসে করণীয় ও বর্জনীয়

মহররম মাসের ১০ তারিখ পবিত্র আশুরা। আশুরার দিনটি যুগ যুগ ধরে অনেক তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ও মর্যাদার সঙ্গে পালন হয়ে আসছে। এই দিনের সর্বাপেক্ষা আলোচিত বিষয় হলো, কারবালার ইতিহাস। মূলত এ দিনের তাৎপর্য, ইতিহাস-ঐতিহ্য আরও প্রাচীন। আশুরার ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য এবং স্মরণীয় বরণীয় ঘটনার শীর্ষে স্থান পায় হজরত মুসা (আ.)-এর একটি ঘটনা। এই দিনে তিনি অত্যাচারী শাসক ফেরাউনের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। মহাপরাক্রমশালী প্রভু আল্লাহপাক সেদিন চিরকালের জন্য নীল দরিয়ায় ডুবিয়ে শিক্ষা দিয়েছিলেন ভ্রান্ত খোদা দাবিদার ফেরাউন ও তার বিশাল বাহিনীকে। ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘মহানবী (সা.) হিজরত করে মদিনায় পৌঁছে মদিনার ইহুদিদের আশুরার দিনে রোজা পালন করতে দেখেন। রসুলুল্লাহ (সা.) তাদের জিজ্ঞেস করেন, এই দিনে কী ঘটেছে যে, তোমরা এতে রোজা পালন করো? তারা বলে এ দিনটি অনেক বড় দিন, এই দিনে আল্লাহতায়ালা মুসা (আ.) ও তাঁর সাথীগণকে ফেরাউন থেকে মুক্ত করেছিলেন এবং ফেরাউন ও তার বাহিনীকে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। কৃতজ্ঞতাস্বরূপ হজরত মুসা (আ.) রোজা রাখতেন। তাই আমরাও আশুরার রোজা পালন করে থাকি। ইহুদিদের উত্তর শুনে রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, হজরত মুসা (আ.)-এর কৃতজ্ঞতার অনুসরণে আমরা তাদের চেয়ে অধিক যত্নশীল হওয়ার অধিকারী। অতঃপর তিনি নিজেও আশুরার রোজা রাখেন এবং মুসলমানদের তা পালন করতে নির্দেশ প্রদান করেন।’ (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) যখন আশুরার দিনে রোজা রাখেন এবং অন্যদেরও রোজা রাখার নির্দেশ প্রদান করেন তখন সাহাবিগণ অবাক হয়ে বলেন, ইয়া রসুলুল্লাহ (সা.) বিধর্মীরা তো এই দিনটিকে বড় দিন মনে করে। এই দিনে তারাও রোজা পালন করে। আমরা যদি এই দিনে রোজা রাখি তাহলে তো এদের সঙ্গে সামঞ্জস্য হবে। উত্তরে রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন (তারা যেহেতু এদিন একটি রোজা পালন করে) ‘আগত বছরে আমি, ইনশাআল্লাহ এই ১০ তারিখের সঙ্গে নবম তারিখ মিলিয়ে দুই দিন রোজা পালন করব।’ (সহিহ মুসলিম) অপর বর্ণনায় রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন- ‘তোমরা আশুরার দিনে রোজা রাখো, তবে এক্ষেত্রে ইহুদিদের সঙ্গে মিল না হওয়ার জন্য ১০ তারিখের আগের দিন অথবা পরের দিন আরও একটি রোজা রেখে নিও।’ (মুসনাদে আহমাদ)

উপরোক্ত হাদিসগুলোর আলোকে প্রমাণ হয় যে, আশুরার রোজা হবে দুটি : মহররমের ১০ তারিখে একটি আর ৯ তারিখে অথবা ১১ তারিখে আরও একটি। উল্লিখিত হাদিসে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লক্ষণীয়। সাহাবায়ে কেরাম এবং রসুলুল্লাহ (সা.) বিধর্মীদের সঙ্গে কোনো ক্ষেত্রে মিল হোক তা মোটেও সমর্থন করতেন না। তাই যে দিনে বিধর্মীরা রোজা রাখত সে দিনে তারা রোজা রাখার মতো বড় একটি ইবাদত হওয়াকেও পছন্দ করেননি। তাই এদের সঙ্গে গরমিল হওয়ার সুন্দর একটি উপায় নির্ণয় করা হলো। তারা রোজা রাখবে এক দিন আর মুসলমানরা রোজা রাখবে দুই দিন। কিন্তু আমরা যারা আজ চলাফেরা, পোশাক-পরিচ্ছদ, আচার-ব্যবহার, শিক্ষা-দীক্ষা তথা সর্বক্ষেত্রে বিধর্মীদের অনুকরণ করে চলেছি, এ পরিসরে বিষয়টা আমাদের চিন্তা ভাবনার সময় এসেছে। আশুরার দিনে রোজা ব্যতীত অন্য কোনো নির্দিষ্ট আমলের অস্তিত্ব কোরআন হাদিসে নেই। তাই খানাপিনার নামে হালুয়া রুটির হৈহুল্লোড়, তাজিয়া-মরসিয়া বা শোক মিছিল করা, আতশবাজি ও আলোকসজ্জা করা, উৎসব মেলা, ক্রীড়া-কৌতুক ইত্যাদির আয়োজন সবই অপসংস্কৃতি ও কুসংস্কার। এগুলো আশুরার কোনো কর্ম নয়, নয় ইসলামের কোনো আদর্শ।

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা, ঢাকা

সর্বশেষ খবর