শিরোনাম
শুক্রবার, ১২ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

পরকালই আসল ঠিকানা

আল্লামা মাহ্‌মূদুল হাসান

রসুল (সা.) যখন মক্কার মুশরিকদের দীনের কথা শোনাতেন, হেদায়েতের দাওয়াত পেশ করতেন, তখন মুশরিকরা হাসত, বিদ্রƒপ করত। আমাদের দেশেও এমন মানুষ আছে যারা দীনের কথাবার্তা শুনে আমল তো করেই না বরং ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করে নিজের আসল জিন্দেগির সর্বনাশ ডেকে আনে। কোরআন হাদিসের কথা শুনে নিজের উপকারের জন্য আমল করা চাই। কিন্তু তাও যদি না হয় তাহলে অনুতপ্ত হওয়া উচিত যে, আমার দ্বারা আমল করা সম্ভব হলো না, হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আমল করার তৌফিক দান করুন!

গুনাহ হয়ে গেলে বান্দার উচিত অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া, তওবা করা, ইস্তেগফার করা। দুনিয়াতে মানুষের গুনাহ হয়ে যায়, আমলের ত্রুটি হয়ে যায়, এ কারণে আল্লাহপাক তওবার মাধ্যমে মাগফিরাতের রাস্তা খোলা রেখেছেন। যে বান্দা জ্ঞাত- অজ্ঞাতসারে গুনাহ করে ফেলে, সে বান্দাকে আল্লাহ নির্দেশ করছেন, তোমার নাফরমানির জন্য অনুতপ্ত হও, লজ্জিত হও, পরবর্তীতে কখনো সেই গুনাহ না করার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে খাঁটি মনে তওবা কর। খাঁটি মনে তওবা করলে আল্লাহপাক সব গুনাহ মাফ করে দেন। এমন দয়ালু মালিক পাওয়া সত্ত্বেও যদি গুনাহ করে বান্দা অনুতপ্ত না হয়, তাহলে তার দুর্ভাগ্য সে নিজেই ডেকে আনবে। আল্লাহর আজাব দুনিয়া ও আখেরাতে তাকে পাকড়াও করবে। মালিক যদি কোনো কাজে অসন্তুষ্ট হন তাহলে তার কাছ থেকে কোনো প্রকার উপকার ও প্রমোশনের আশা করা যায় না। আল্লাহ রব্বুল আলামিন হলেন সমস্ত সৃষ্টির মালিক। তিনি যখন কোনো বিষয়ের হুকুম করেন তখন তার রহস্য বুজে আসুক বা না আসুক আমল করতে হবে। মনে করতে হবে যে, এই হুকুমের কারণ ও রহস্য না বোঝা একমাত্র আমার জ্ঞানের দুর্বলতা ছাড়া আর কিছুই নয়। মালিকের কথার কারণ ও রহস্য বোঝার দরকার নেই। বোঝা ছাড়াই আমল করতে হবে। কারণ তিনি আদেশ করেছেন, তিনি আমার মালিক এতটুকুই যথেষ্ট। এই বিশ্বাস রাখতে হবে যে, এতে যদি আমার কল্যাণ না থাকত, তাহলে আল্লাহপাক আমাকে এমন কাজের আদেশ করতেন না। যে ব্যক্তি আমল তো করে না আবার উপহাস করে, ঠাট্টা করে, বুঝতে হবে তার এই ঠাট্টাই তার ধ্বংসের আলামত। রসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার মুশরিকদের বলতেন, দেখো, এই দুনিয়া যে স্থায়ী নয় এটা তো তোমরা ভালোভাবেই বোঝ তারপরও কেন সব চেষ্টা-প্রচেষ্টাকে এই দুনিয়ার পেছনে ব্যয় করছ? তোমাদের মনে কি এই জিজ্ঞাসা জাগে না যে, দুনিয়াতে মানুষ আসছে, আবার ফিরে যাচ্ছে; এই মানুষগুলো কোথা হতে আসছে আবার কোথায় যাচ্ছে? এই আসা যাওয়া কেন হচ্ছে? আত্মা কোথায় চলে যায়? তোমরা শুনে রাখো, এই দুনিয়ার জীবনের তুলনায় আখেরাতের জীবনের পরিধি বেশি বিস্তৃত। চিরস্থায়ী জিন্দেগি হবে সেটি। যার শুরু আছে তো শেষ নেই।

আলমে আরওয়াহ থেকে আমরা মায়ের পেটে এসেছি। মায়ের পেট ছিল আমাদের জন্য এক কবর। এরপর সেখান থেকে দুনিয়ার জগতে বের হয়ে এসেছি। আবার আমি কবরে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাব, তারপর আমাকে পুনরায় নতুন করে তৈরি করে হাশরের মাঠে উঠানো হবে। সেখান থেকে পুলসিরাত হয়ে জান্নাত বা জাহান্নামে যেতে হবে। একমাত্র মানুষের স্থায়ী ঠিকানা দুটি, জান্নাত বা জাহান্নাম। মানুষ যেমন ছয় মাস কাজ করে ছয় মাস বসে খায়, ঠিক তেমনি দুনিয়ার চল্লিশ পঞ্চাশ বছর ভালোভাবে কাজ করলে অনির্দিষ্টকালের জীবনের জন্য আল্লাহপাক কল্পনাতীত শান্তিময় জান্নাতের ব্যবস্থা করে রেখেছেন।

আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কাবাসীদের এত দয়া-মায়ার সঙ্গে বোঝাতেন, কিন্তু তারা উপহাস ও বিদ্রƒপের সঙ্গে বলত- হে নবী, কেমন অবুঝের মতো কথা বলো? আমরা যখন মৃত্যুবরণ করে মাটি হয়ে যাব, হাড্ডিতে রূপান্তরিত হয়ে যাব, তখনো কি পুনরায় জীবিত হয়ে যাব? এ কেমন কথা বল?

কাফেররা তাদের স্থূল বুদ্ধি অনুযায়ী এ প্রশ্ন করেছে। বিষয়টি একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে বুঝে আসে যে, মাটির মধ্যে রাখলে জিনিস অস্তিত্বহীন হয় না। বরং অস্তিত্ব আরও স্থায়ী হয়। যেমন- পানি। এটাকে যদি মাটিতে রাখা হয় তাহলে তা কিছুক্ষণ পর গড়াগড়ি করে মাটিতে মিশে যায়। যে স্থানে পানি ঢুকেছে সে স্থানটি ভিজে রয়েছে। বাকি জায়গা শুকনো রয়ে গেছে। ওই ভিজে জায়গায় পানি নিজেকে বিলীন করে আত্মগোপন করে আছে। বস্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, যে বস্তু একবার অস্তিত্ব লাভ করেছে সে বস্তু আর বিলীন হয় না, অস্তিত্বহীন হয় না। কিন্তু রূপ বদলে যেতে পারে। বাতাসে, পানিতে, মাটিতে আত্মগোপন করে থাকতে পারে। যেমন, বরফ পানির মধ্যে, পানি বরফের মধ্যে আত্মগোপন করে থাকে। মানুষ যে মাছ, ভাত ইত্যাদি খায় তা শরীরে রক্ত, হাড্ডি হয়ে জমে আছে। মানুষ যখন কবরে যাবে, তখন তার শরীর মাটিতে মিশে যায়। আল্লাহপাকের যখন মনে চায় তখন আবার কবরে পূর্বের আকৃতিতে সৃষ্টি করবেন। আল্লাহর কুদরতের কোনো শেষ নেই। যাহোক, তাদের সেই বিদ্রƒপাত্মক প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহতায়ালা বললেন, ‘হে নবী! আপনি তাদের পরিষ্কার ভাষায় বলে দিন, হ্যাঁ আল্লাহতায়ালা তোমাদের অবশ্যই একত্রিত করবেন, তোমরা যেখানেই থাক না কেন।

লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর