শিরোনাম
শুক্রবার, ১২ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

সুন্দরবনে প্রাণোচ্ছ্বাস

সুরক্ষায় চাই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা

সুন্দরবনের কাছে আমাদের ঋণ অপরিশোধ্য। দেশের উপকূলীয় এলাকার মানুষ ও সম্পদের নিরাপত্তা রক্ষায় সুন্দরবন কতটা দৃঢ়তায় বুক পেতে দেয়, তার প্রমাণ পাওয়া যায় প্রতিটি প্রলয়ংকরী টর্নেডো ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাসে। সুন্দরবনের বাধার শক্ত দেয়াল ডিঙিয়ে জনপদে পৌঁছতে সিডর, আইলা, আম্ফান বা রিমালের মতো ঘূর্ণিঝড়ের ধ্বংসাত্মক তাণ্ডবের শক্তি অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়ে। রক্ষা পায় ঘরবাড়ি, প্রাণ, শস্য ও সম্পদ। এজন্যই বাংলার ‘প্রাকৃতিক প্রাচীর’ সুন্দরবন রক্ষা আমাদের অস্তিত্বের স্বার্থেই জরুরি। আশার বিষয় যে, সাম্প্রতিক প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় রিমালের ধ্বংসলীলা কাটিয়ে প্রাণ ফিরছে সুন্দরবনে। কয়েক সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে গাঢ় সবুজে ছেয়ে গেছে বনভূমি। বনের আয়তন টিকিয়ে রাখতে নতুন বন সৃজনের উদ্যোগও নিয়েছে বন বিভাগ। লক্ষ্য ১০০ বছর আগের চেহারা ফিরিয়ে আনা। ফরাসি উন্নয়ন সংস্থার অর্থায়নে প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক আন্তর্জাতিক জোট এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। আমরা এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই এবং কামনা করি যেন এ লক্ষ্য শতভাগ অর্জিত হয়। প্রকৃতির বিস্ময়, বঙ্গোপসাগর উপকূলের বিস্তীর্ণ বনভূমি সুন্দরবন। প্রায় ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের সাড়ে ৬ হাজারই বাংলাদেশের। এ ম্যানগ্রোভ বনে রয়েছে নদী-নালা-বিল মিলিয়ে জলাকীর্ণ অঞ্চল। বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও মায়াবী চিত্রাহরিণ ছাড়াও রয়েছে কুমির, বানর, সাপসহ কয়েক শ প্রজাতির প্রাণী, পাখ-পাখালি, মাছ এবং রকমারি উদ্ভিদ। এসব জাতীয় সম্পদ শুধু রক্ষা নয়, বৃদ্ধিতেও পৃষ্ঠপোষকতা জোগাতে হবে। বাংলাদেশের ফুসফুস-খ্যাত এ বন অক্সিজেনের বিশাল ফ্যাক্টরি হিসেবে কাজ করে। অসংখ্য বনজীবী মানুষ ও পরিবারের রুটি-রুজিরও উৎস সুন্দরবন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্যে ভরপুর বলে পর্যটন মূল্যও অসীম। জাতীয় অর্থনীতিতে এর ভূমিকা ব্যাপক। ফলে সুন্দরবনের গায়ে কোনো ঘাতকের হাত লাগুক-তা কাম্য নয়। ভবিষ্যতের হাজারটা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মহাবিপদ থেকে রক্ষা পেতে সুন্দরবন সুরক্ষায় যত্নবান হতে হবে। নিজেদের স্বার্থেই তা করতে হবে গভীর মমতা ও সততায়।

 

সর্বশেষ খবর