রবিবার, ১৪ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

জনসংখ্যা সমস্যা

আফতাব চৌধুরী

জনসংখ্যা সমস্যা

বাংলাদেশ নিম্নমধ্য আয়ের উন্নয়নশীল দেশ। এ দেশের হাজারো সমস্যার বড় সমস্যা জনসংখ্যা বৃদ্ধি। এ সমস্যা প্রতিদিন এত ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে যে, আগামী ২০৩০ সালে এ দেশের জনসংখ্যা দাঁড়াবে ২২ কোটিতে, যা ভাবতেই শরীর শিউরে ওঠে। দুঃখজনক হলেও সত্য, উন্নয়নশীল এ দেশে শিক্ষিতের হার মাত্র ৭৫ শতাংশের কাছাকাছি।  তার চেয়েও দুঃখজনক হলো এদের মাঝে খুব কম পরিবারই পরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। আবার এটাও ঠিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধে সরকার অনেক পন্থাই অবলম্বন করছে। কিন্তু কোনোভাবেই আশানুরূপ ফল লাভে সক্ষম হচ্ছে না। তাই জনসংখ্যার চাপে সমাজে অস্থিরতা বিরাজ করছে প্রতিনিয়ত। বাড়ছে অন্যায়, রাহাজানি, দুর্নীতি, চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই। চারদিকে বাড়ছে কেবল অবক্ষয়। নৈতিকতাবোধ মানুষের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছে। সমাজে হানাহানি, দ্বন্দ্ব বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মায়া মমতা, স্নেহ ভ্রাতৃত্ববোধে ভালোবাসা বিলুপ্তি আসছে। শিক্ষিতরা বলতে গেলে হয়রানির শিকার হচ্ছে-অশিক্ষিতের কাছে ধনী-গরিবের কাছে আর দুর্বল মার খাচ্ছে সবলের কাছে। অস্ত্রের ঝনঝনানিতে নিরস্ত্ররা হচ্ছে দিশাহারা। তাই তারা আজ শঙ্কিত, তারা আতঙ্কিত। এক হিসাবে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রতিটি পরিবার যদি দুটি করে সন্তান জন্ম দেয় তাহলে জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে একটা স্থিরতা চলে আসবে। আর প্রতিটি পরিবার যদি একটি করে সন্তান জন্ম দেয় তাহলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার দাঁড়াবে শূন্যের কোঠায়। অর্থাৎ জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাবেই না বরং তার ফলে ক্রমান্বয়ে জনসংখ্যার পরিমাণ নিচের দিকে নামতে থাকবে।

পৃথিবীর জনবহুল দেশ চীনে এ নীতিকে বাধ্যতামূলক করার ফলে বেশ সফলতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। আর আমাদের ক্ষুদ্র দরিদ্র দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধিতেই যেন সার্থকতা। সাধারণ মানুষ মুখে ভাত, শরীরে কাপড়, ভালো স্বাস্থ্য আর শিক্ষা দিতে পারুক আর না পারুক মানুষ জন্মাতেই আছে। এ যেন এক বিরাট প্রতিযোগিতা। অভাবগ্রস্ত কুসংস্কারাচ্ছন্ন একশ্রেণির মানুষের একগুঁয়েমি কথা-মুখ যিনি দিয়েছেন-তিনি ভাতও দেবেন। এ যেন এক স্বাভাবিক কথা। যেখানে বিশ্বে প্রতিটি দেশ আজ উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছানোর জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত, সেখানে আমাদের হেরে যাওয়াতেই যেন সুখ আর আনন্দ। আমরা জানি আমাদের দেশে মূলত জনসংখ্যা বৃদ্ধির মূল কারণ কুসংস্কার, অশিক্ষা, অজ্ঞানতা সর্বোপরি বিনোদন ও জানাজানির অভাব। এসব সমস্যা চিহ্নিত করে সরকার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে সত্য কিন্তু তাতে কতটা সফলতা অর্জিত হয়েছে তা আজকের সমাজের দিকে তাকালে সহজে অনুমান করা যায়।

এ ব্যাপারে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লক্ষণীয় যে, শিক্ষিত সমাজ পরিকল্পিত পরিবার গঠনে খুবই সচেতন কিন্তু অশিক্ষিত সমাজ তার ঠিক বিপরীত। ফলে দেশে দিন দিন অশিক্ষিতের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক শিক্ষিত পরিবার তার মাত্র এক বা দুই সন্তানকে শিক্ষিত মানুষ করে গড়ে তোলার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছে তার বিপরীতে অশিক্ষিত এক দম্পতি ১০-১২টি সন্তান জন্ম দিয়ে ক্ষান্ত হচ্ছে না, আবার নতুন করে বিয়েশাদি করে নতুন করে সন্তানদের জন্ম দিচ্ছে। এদের এসব সন্তান না হচ্ছে শিক্ষিত না হচ্ছে স্বাস্থ্যবান ও সচেতন। তারা সমাজ ও জাতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সৃষ্টি করছে সামাজিক সমস্যা। এদের সচেতনতা আর দূরদর্শিতার অভাবে দেখা দিচ্ছে খাদ্য, বাসস্থান ও কর্মসংস্থানের অভাব।

আমাদের দেশের প্রতিটি মানুষকে যদি কুসংস্কার, অশিক্ষা, অজ্ঞানতা ইত্যাদির করাল গ্রাস থেকে মুক্ত করা যেত তাহলে জনসংখ্যা অভিশাপ না হয়ে আশীর্বাদ হয়ে ধরা দিত। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আজ শুধু সেটা স্বপ্ন হয়েই কাজ করছে ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি বিপৎসীমা ছাড়িয়ে যেতে চলেছে। এ ছাড়া জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ ছাড়া গণতন্ত্র আর সুন্দর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন কিছুতেই বাস্তবে রূপ নেবে না।

দেশের শতকরা ৯০ ভাগ লোকই জন্মহার বৃদ্ধি রোধে নিয়মনীতি মেনে চলছে না। তাই অনুরোধ, অনুনয়, বিনয় আর অপেক্ষা না করে সরকারকে কঠিন হাতে এগিয়ে আসতে হবে। অধিক সন্তান জন্মদান যে একটা বড় সমস্যা তা প্রয়োজনে আইনের মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। স্বেচ্ছায় যেমন কেউ আইন অমান্য করে অপরাধ করতে পারে না-করলে আইনের কাছ থেকে শাস্তি পেতে হয়-তেমনি দুটি সন্তানের অধিক সন্তান জন্মদাতা পিতা-মাতার শাস্তির বিধান চালু করার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করতে হবে। ছেলে হোক মেয়ে হোক দুটি সন্তানই যথেষ্ট- এর পরিবর্তন ও সংশোধন করে বলতে হবে দুটি সন্তানই যথেষ্ট।

সরকারকে সবার সহযোগিতায় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আইন প্রণয়ন করতে হবে আর এ আইন হবে জনস্বার্থে।

এ পথে পা বাড়ালে সমাজে আসবে স্থিরতা, দেশে আসবে শান্তি ও সমৃদ্ধি।  সবাইকে অনুধাবন করতে হবে যে, দেশের খাদ্য সমস্যা সমাধানকল্পে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই।

♦ লেখক : প্রাবন্ধিক

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর