বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

চিকিৎসা ব্যয়

যৌক্তিক ও সহনীয় করার পদক্ষেপ নিন

স্বাস্থ্যসেবা এখন  রীতিমতো বাণিজ্যে পরিণত হয়েছে। স্বার্থান্বেষী মহলের কারসাজিতে, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই মৌলিক মানবিক প্রয়োজনটি জনসাধারণকে অর্থনৈতিক নিষ্পেষণের অস্ত্রে পরিণত হয়েছে। তারই উদ্বেগজনক চিত্র ফুটে উঠেছে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণায়। তাতে দেখা যাচ্ছে- চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে হিমশিম দেশের মানুষ। ব্যক্তির বার্ষিক আয়ের মোটা অংশ চলে যাচ্ছে চিকিৎসার পেছনে। সবচেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে ওষুধ কিনতে ও ডায়াগনসিস করাতে। এতে বছরে ৬১ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাচ্ছে। অথচ প্রতি বছরই জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা পর্যাপ্ত নয়। আবার যা বরাদ্দ হচ্ছে, তার সুষ্ঠু ব্যবহারও হচ্ছে না। অনিয়ম-দুর্নীতি-নয়ছয় হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালগুলোর লেজেগোবরে ব্যবস্থাপনার কারণে অনেক রোগীকেই বিমুখ হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে যেতে হয়। সেখানে চিকিৎসা ও ডায়াগনস্টিকের ব্যয় অযৌক্তিকভাবে অধিক। নানা অসিলায় রোগীর পকেট কাটার জন্য তারা মুখিয়ে থাকে। পাশাপাশি দেশের বাজারে সব ওষুধের দাম বাড়ছে লাগামছাড়া। চিকিৎসা খরচ মেটাতে মানুষের আর্থিক সক্ষমতা কমে বহু মানুষ নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশে জনগণের জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে না পারলে প্রচেষ্টা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। এ জন্য কঠোর তদারকির মাধ্যমে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনার মানোন্নয়ন অপরিহার্য। পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতাল এবং ওষুধ কোম্পানিগুলোকে সুষ্ঠু নিয়মনীতি ও জবাবদিহির কাঠামোয় বেঁধে রাখতে হবে। চিকিৎসা ব্যয় এবং ওষুধের দাম অরাজকতার পর্যায়ে পৌঁছতে দেওয়া যাবে না। শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আইনের মাধ্যমে রোগী ও চিকিৎসক উভয় পক্ষকে সুরক্ষা দেওয়া সরকারের দায়িত্ব। এ ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন, সর্বজনীন স্বাস্থ্যবীমা ইত্যাদি কল্যাণ ভাবনা ও পদক্ষেপগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন আবশ্যক। সংশ্লিষ্ট সবার প্রচেষ্টায় দেশে চিকিৎসা ব্যয় যুক্তিসংগত ও সহনীয় হোক-এটা সময়ের জরুরি দাবি।

সর্বশেষ খবর