শনিবার, ২০ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

আধুনিক জুয়া খেলার বিভীষিকা

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি

আধুনিক জুয়া খেলার বিভীষিকা

জুয়াড়িরা সর্বদাই নতুনত্বের জন্য ক্ষুধার্ত থাকে। থাকে জুয়া খেলার নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কারের অপেক্ষায়। তাই এদের জন্য আধুনিক জুয়া ক্লাবগুলো প্রচুর পরিমাণে থিমযুক্ত ভিডিও শ্লট, জ্যাকপট মেশিন, কার্ড টেবিল মডেল, লাইভ ক্যাসিনো ও ক্র্যাশ গেম ইত্যাদি ক্রমাগতভাবে সরবরাহ করে যাচ্ছে। দিয়ে যচ্ছে নতুন নতুন অফারের নামে ভয়াবহ মরণফাঁদ। এসব পদ্ধতিতে জুয়া খেলার সঙ্গে সঙ্গে রয়েছে আকর্ষণীয় বিনোদনের ব্যবস্থা। ফলে শিশু, কিশোর ও যুবশ্রেণি ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট হচ্ছে এসব জুয়া প্রতারণার প্রতি। অনলাইন ক্যাসিনোতে ঝুঁকে পড়ছে জাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। শহর-গ্রাম সর্বত্র বিস্তৃত হচ্ছে এ নতুন সমস্যা। দেশি-বিদেশি জুয়াড়িদের মাধ্যমে গড়ে উঠছে অসংখ্য সিন্ডিকেট। হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। বাংলাদেশে এখনো কোনো মোবাইল বা অনলাইনভিত্তিক ক্যাসিনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে বিদেশি বিভিন্ন জুয়া খেলার ওয়েবসাইট এবং মোবাইল ক্যাসিনো গেম ব্যবহার করা যায়। তারাই আবিষ্কার করছে জুয়া খেলার নিত্যনতুন ফাঁদ। ইসলামের দৃষ্টিতে এসব পদ্ধতি নিষিদ্ধ জুয়া খেলার অন্তর্ভুক্ত। মহান আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে ঘোষণা করেন, ‘হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নির্ণয়ক শর, ঘৃণ্য বস্তু শয়তানের কাজ। সুতরাং এসব বর্জন কর, যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হতে পার।’ (সুরা আল মায়িদাহ-৯০)

ইসলাম ধর্মে মদ ও জুয়া দুটিই হারাম। মদ-নেশা মানুষকে অন্যায় কাজে প্ররোচিত করে। নেশার কারণে মানুষের জীবন, পরিবার, সমাজ ও দেশ ধ্বংস হয়। মদ ও জুয়ার নেশায় মানুষ নিঃস্ব হয়ে যায়। পরিবার, সমাজ ও দেশে বিস্তৃত হয় অশান্তি, অরাজকতা।

জুয়া এমন ধরনের খেলা ও বিনোদনকে বলা হয়, যা লাভ ও ক্ষতির মধ্যে আবর্তিত থাকে। জুয়ার ইতিহাস বেশ প্রাচীন। বর্তমানে প্রাচীন পদ্ধতি ছাড়াও নতুন নতুন বহু পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী চলছে অনলাইন জুয়া ও ক্যাসিনোর ভয়াবহ ফাঁদ। মোবাইলে মোবাইলে জুয়ার আসর। ক্রিপ্টোকারেন্সির জুয়ায় মত্ত এখন আধুনিক প্রজন্ম। পড়ালেখা ও কর্মব্যস্ততা ধুলায় মিশিয়ে জমছে তাদের এই জুয়ার আড্ডা। রাস্তার মোড়ে মোড়ে, বিভিন্ন দোকানে ও ক্লাবে একটি মোবাইলের চারপাশে জোঁকের মতো কয়েকজনকে মত্ত থাকতে দেখা যায়। এরই মধ্যে নষ্ট হচ্ছে সময়, পড়ালেখা, কাজকর্ম। ধ্বংসের পথে এগোচ্ছে পরিবার ও সামাজিক অবস্থান। অবক্ষয় হচ্ছে নীতি ও নৈতিকতা। খোয়া যাচ্ছে অপরিমিত মাল-সম্পদ। পারিবারিক ও সামাজিকভাবে সবাই সচেতন না হলে সামনের দিন হবে অনেক ভয়াবহ। ইসলামে সব ধরনের জুয়াবাজি অবৈধ। এই জুয়া ব্যবস্থাপনা ও সহযোগিতা সবই হারাম। জুয়া খেলার মাধ্যমে অর্জিত যাবতীয় সম্পদ হারাম। হারাম সম্পদ ভোগ করে ইবাদত করলে তা আল্লাহর কাছে কবুল হয় না। তাই প্রতিটি মুসলমানের সব ধরনের জুয়াবাজি থেকে দূরে থাকা আবশ্যক। বাংলাদেশে ইন্টারনেটের প্রসার জুয়া খেলায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই জুয়ার পরিণতি অনেক ভয়াবহ। তাই সংশ্লিষ্ট মহলের শুভ উদ্যোগ বর্তমান সময়ের একান্ত দাবি। এ পরিসরে লক্ষণীয় আরেকটি বিষয় হলো অনলাইনে জুয়া খেলা এখনো কোনো আইনের আওতায় নেই। তাই এই জুয়ার মাধ্যমে অর্জিত অর্থে কোনো কর আদায়ের ব্যবস্থা নেই। নেই এক দেশ থেকে অন্য দেশে অর্থ পাচার নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা। অনলাইনে জুয়ার মাধ্যমে বিদেশি জুয়াড়িরা হাতিয়ে নিচ্ছে দেশের বিশাল সম্পদ। আর দেউলিয়া হচ্ছে অসহায় পরিবার। ফলে অভাবের তাড়নায় জড়িয়ে যাচ্ছে চুরি, সন্ত্রাস ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডে। অতএব আমাদের সচেতন হওয়ার এখনই চূড়ান্ত সময়।

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা, ঢাকা

সর্বশেষ খবর