শনিবার, ২০ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

তওবার অসিলায় মাফ পাওয়া যায়

আল্লামা মাহ্‌মূদুল হাসান

বুখারি শরিফের এক হাদিসে এসেছে, এক লোক মৃত্যুর আগে বলে গিয়েছিল, আমার মৃত্যুর পর তোমরা আমাকে আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে বাতাসে উড়িয়ে দিও। কারণ আল্লাহ যদি আমাকে পাকড়াও করে তাহলে আমার অবস্থা হবে খুবই দুঃখজনক। বস্তুত তার বুদ্ধি এতটুকুই ছিল। নিয়ত তার ভালো ছিল। অনেক সময় ভালো নিয়তের কারণে লাভ হয়ে যায়। তাই হাদিসে এসেছে তোমরা খাঁটি নিয়ত করো। সুতরাং অসিয়ত মোতাবেক তার মৃত্যুর পর ছেলেরা তাকে আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে প্রচণ্ড বাতাসে উড়িয়ে দিল। এদিকে আল্লাহতায়ালা সব ছাইকে হুকুম করলেন জমা হয়ে যাওয়ার জন্য। কী আশ্চর্য! কী মহিমা! ছাইয়ের সূক্ষ্ম দানাগুলো জমা হয়ে মানুষের আকৃতি ধারণ করে আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে কাঁপতে আরম্ভ করল। আল্লাহতায়ালা প্রশ্ন করলেন, তুমি সারা জীবন পাপ করেছ, সবই করেছ, কিন্তু মৃত্যুর সময়ও কেন এমন পাপকর্মের অসিয়ত করে এসেছিলে? উত্তরে লোকটি বলল, হে আল্লাহ! একমাত্র আপনার আজাবের ভয়ে এমনটি করেছি, অন্য কোনো কারণে নয়। আমি ভেবেছিলাম, এভাবে আপনার পাকড়াও ও দোজখের কঠিন আজাব থেকে বেঁচে যাব। আল্লাহতায়ালা তার এ কথা শুনে বললেন, হে ফেরেশতারা! তাকে মুক্ত করে জান্নাতে নিয়ে যাও। এ ঘটনায় শিক্ষা হলো, গুনাহ হয়ে গেলে ভীত-লজ্জিত হয়ে তওবা করা উচিত। কারণ, হতে পারে আল্লাহ এর অসিলায় মাফ করে দিতে পারেন।

মানুষ মৃত্যুর পর হাড্ডি মাটি যা হোক আল্লাহ যখন পুনরায় জীবিত করতে চাইবেন, তখন মাত্র একটি আহ্বানে সবকিছু পলকের মধ্যে সৃষ্টি হয়ে যাবে। যেমন সুইচে টিপ দিলে সেকেন্ডের মধ্যে সমস্ত লাইট ও ফ্যান একসঙ্গে চালু হয়ে যায়। তেমন আল্লাহতায়ালা যখন ইচ্ছা করবেন মানুষকে পুনরায় সৃষ্টি করতে, তখন হজরত ইসরাফিল (আ.)-কে নির্দেশ দেবেন শিঙায় ফুঁ দিতে। শিঙায় ফুঁ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেকেন্ডের মধ্যে সারা পৃথিবীর কোটি কোটি মৃতজীব জীবিত হয়ে যাবে। তখন নিজেরাই দেখতে পারবে যে তারা সৃষ্টি হয়ে গেছে। এরপর তারা একে অন্যের প্রতি তাকিয়ে বলবে, এটা তো ওই দিন যে দিনের কথা আলেম-ওলামারা বলতেন। মৃত্যুর পর যে পুনরায় জীবিত হতে হবে সেটা কি এই দিন? মনে হয় তাদের কথা সত্য। তখন ফেরেশতারা তাদের কথার পরিপ্রেক্ষিতে বলবে, হ্যাঁ, এটাই সেই বিচারের দিন। দুনিয়ার ভোগবিলাসে মত্ত হয়ে যেদিনের হিসাবনিকাশ সম্পর্কে তোমরা ভুলে গেছ, অস্বীকার করেছ আজ সেই দিন।

যখন দ্বিতীয়বার শিঙায় ফুঁ দেবে তখন সমস্ত মানুষ জীবিত হয়ে একজন অন্যজনকে দেখতে থাকবে। তাদের তখন বিশ্বাস হবে, আজ বিচারের দিন। আল্লাহ ফেরেশতাদের বলবেন, তোমরা কয়েকটি কাজ করো। (১) হাশরের ময়দানে সবাইকে আমার সামনে জমা করো (২) সাথীসহ জোড়ায় জোড়ায় জমা করো। যাতে সবাই শনাক্ত হয়। সেই দিনটা বড়ই পরিতাপের হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন! এখানে কেউ প্রশ্ন করতে পারে যে, আল্লাহতায়ালা তো বলেছেন, একই ধরনের নাফরমানদের জোড় জোড় করে দাঁড় করাও। দেখা যায় একজনই বহু গুনাহ করছে, এখন তাদের কেমন করে দাঁড় করাবেন? এরও জবাব আছে। হাদিসের মধ্যে আছে, রসুল (সা.) বলেছেন, কাফেরদের যেমন দল হবে তেমন নেক লোকদেরও দল হবে। বলা হবে, যারা কাফের তারা জাহান্নামে যাও, আর যারা জান্নাতি তারা জান্নাতে চলে যাও। এটা বলার সময় হুজুর (সা.) বললেন, জান্নাতিরা যখন জান্নাতে যাবে তখন তারা দেখবে জান্নাতে গেট বা দরজা বানানো আছে। একেকটির একেক নাম যেমন বাবুসালাত, বাবুসসিয়াম, বাবুররাইয়ান, বাবুততাবাররায়াত, বাবুল ইলম, বাবুদদায়ি। হুজুর (সা.) এ কথা বলার পর হজরত আবুবকর (রা.) বললেন, হুজুর! যদি কোনো মানুষ এমন হয়, সে সমস্ত নেক কাজ করেছে, তাহলে সে কোন দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে? হুজুর (সা.) বললেন, সমস্ত দরজা দিয়ে তাকে আহ্বান করা হবে।

এয়ারপোর্টে হাজিদের এস্তেকবাল করার জন্য অনেক মানুষ যায়-চাচা-ভাতিজা, ভাই-বোন অনেকেই থাকে। প্রত্যেকেই চায় আমার সঙ্গে আগে দেখা করুক। কিন্তু বেচারা তো একজন, সবার কাছে তো একসঙ্গে যাওয়া সম্ভব নয়। এখন কথা হলো, কার কাছে সে আগে যাবে? যদি সে ব্যক্তি বুদ্ধিমান হয়, তাহলে মা থাকলে প্রথমে মায়ের কাছে যাবে, স্ত্রীর কাছে যাবে না। বেশির থেকে বেশি এটা করতে পারে যে, ছোট বাচ্চাকে আগে গিয়ে চুমা দেবে তারপর সবার সাঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। এখন যদি মাকে রেখে স্ত্রীর কাছে যায় তাহলে কাজটা কেমন হবে? দুনিয়ার মানুষে কী বলবে? তবে সে কাজটি যে অন্যায় হিসাবে বিবেচিত হবে তা নয়। কারণ এরূপ করা গর্হিত কিছু হয়নি বরং একটি অনুত্তম কাজ হয়েছে মাত্র। এমনিভাবে জান্নাতিকে সমস্ত দরজা দিয়ে ডাকা হবে। সে ইচ্ছামতো একটি দিয়ে প্রবেশ করবে। হজরত আবুবকর (রা.) আবার জানতে চাইলেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! তারা কারা, যাদের সমস্ত দরজা দিয়ে আহ্বান করা হবে? রসুল (সা.) উত্তর দিলেন, হে আবুবকর! আমি জানি তুমিও তাদের একজন (বুখারি)। এ হাদিস থেকে আমরা বুঝে ফেললাম, হজরত আবুবকর (রা.) সমস্ত আমলের অধিকারী ছিলেন। প্রতিটি মানুষের একটি স্বভাব আছে যে, কোনো বিশেষ কাজের প্রতি তার মন লাগে বেশি। যেমন কেউ ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত আদায় করে, তাহাজ্জুদের প্রতিও মন আছে। আবার কেউ এমন আছে, শুধু ফরজ, সুন্নত আদায় করে কিন্তু নফলের প্রতি মন যায় না। তবে প্রতি বছরই হজ করে। এটার জন্য সে পাগল। মহিলারা তো রোজার মধ্যে এক নম্বর; অন্যান্য আমলে অতটা উৎসাহী নয়। কিছু মানুষ দানখয়রাত করে খুব বেশি। নামাজ-রোজার প্রতি অতটা আগ্রহ দেখায় না। আল্লাহ বড় দয়ালু। তিনি সব ধরনের রাস্তা বানিয়ে রেখেছেন।

লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া, বাংলাদেশ

সর্বশেষ খবর