কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউনে’ থমকে যায় সারা দেশের যোগাযোগব্যবস্থাও। স্থবিরতা গ্রাস করে প্রাত্যহিকতার গতি। এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে জনসাধারণের জীবন এবং নিত্যপণ্যের বাজারে। বৃহস্পতিবার দূরপাল্লার কোনো পরিবহন চলেনি। কার্যত রাজধানীর সঙ্গে সারা দেশের সড়ক ও রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকে। গাড়ির চাকা ঘোরে না আঞ্চলিক সড়কগুলোতেও। রাজধানীর প্রধান সড়কে জনপরিবহন ছিল না বললেই চলে। দুর্ভোগ পোহান বিভিন্ন কাজে বের হওয়া মানুষ। বিপাকে পড়েন অনেক মুমূর্ষু রোগী। জরুরি কাজে মানুষ যেমন ঢাকায় আসতে পারেনি, ঢাকার বাইরে যাওয়াও সম্ভব হয়নি। অনেকে উড়োজাহাজে ঢাকায় এলেও বিমানবন্দর থেকে গন্তব্যে পৌঁছতে মহাবিড়ম্বনার শিকার হন। অন্যদিকে যাত্রীরা সময়মতো বিমানবন্দরে পৌঁছতে না পারায় অনেক ফ্লাইট বিলম্বে ছাড়ে। ফ্লাইট শিডিউল ওলট-পালট হয়ে যায়। নাশকতার আশঙ্কায় বিকালের পর মেট্রোরেলও বন্ধ হয়ে যায়। গতি হারিয়ে স্থবির নগরীতে পরিণত হয় রাজধানী। এসবের ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের জীবনে। আঁচ লেগেছে নিত্যপণ্যের বাজারে। এমনিতেই বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে চলেছে। পরিবহন বন্ধে সরবরাহ সংকটে দাম আরও বেড়েছে। সব মিলে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, অবিলম্বে যার অবসান হওয়া জরুরি। গোঁয়ার্তুমি, হঠকারিতা বা নাশকতা নয়- আলোচনা, সুবিবেচনা, সংযম ও সমঝোতার মাধ্যমে যে কোনো কঠিন সমস্যারও সমাধান সম্ভব। এ প্রক্রিয়ায় যুক্তিসংগত সিদ্ধান্ত গ্রহণই উত্তম পন্থা। সে আলোর আভা এখন দেখাও যাচ্ছে। এই পথটা অবলম্বন করা উচিত ছিল পরিস্থিতি জটিল হওয়ার আগেই। তাহলে এতগুলো তাজা তরুণের প্রাণহানি, সম্পদ-সম্পত্তির ক্ষতি, জনদুর্ভোগ এড়ানো যেত। সরকারের অভিজ্ঞ নীতিনির্ধারক এবং তরুণ শিক্ষার্থীদের মধ্যকার দাবি মানা-না-মানার টানাপোড়েন অবিলম্বে মতৈক্যে পৌঁছাক- এটাই কাম্য। আর তাতে সড়কসহ সব ক্ষেত্রের জট খুলুক, দেশবাসী স্বাভাবিক জীবনের স্বাচ্ছন্দ্য গতি ফিরে পাক- প্রত্যাশা সবার। আশা করি, সব মহলের আন্তরিক সদিচ্ছায় তা আর বিলম্বিত হবে না।