রবিবার, ২১ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

ফাঁস প্রশ্নে পাস এবং গর্তের সাপ

আলম রায়হান

ফাঁস প্রশ্নে পাস এবং গর্তের সাপ

কোটা প্রশ্নে তুলকালাম কাণ্ডে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি অবলোকন করেছে দেশবাসী। তবে শিক্ষার্থীদের দায়িত্বশীল মনোভাবে ধারণা করা হচ্ছে, সরকার এটি প্রশমন করতে সক্ষম হবে। কোটা আন্দোলনকারীদের প্রশ্নবিদ্ধ অনমনীয় প্রবণতা এবং সরকারের তরফ থেকে প্রথমে যথাযথ উদ্যোগ না নেওয়ায় সুযোগ পেয়ে যায় মতলববাজরা। যা বিপুলসংখ্যক প্রাণহানি ঘটিয়েছে। নষ্ট হয়েছে মূল্যবান সম্পদ। সব মিলিয়ে কোটা প্রশ্নকে বিশাল এক আলোচ্য বিষয়ে পরিণত করেছে। এর সঙ্গে সামনে চলে এসেছে পিএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রসঙ্গ এবং ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রে পাস করে অসংখ্য অসৎ লোক সরকারে কর্তা বনে যাওয়ার বিষয়টি টক অব দ্য কান্ট্রি। এটি সরকারের চাকরি প্রদান প্রক্রিয়ায় বিশাল এক কালো বিড়ালের উপস্থিতির জানান দেয়। আর সবচেয়ে ভয়ানক বিষয় হচ্ছে, ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রে পাস করে বিষধর সাপের মতো গর্তে লুকানো একটি ভয়ানক শ্রেণি। এদিকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের দায়ে এখন পর্যন্ত যারা ধরা পড়েছেন তারা মূলত নেংটি ইঁদুর। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কালো বিড়াল কি ধরা পড়বে? ফাঁস প্রশ্নে পাস করে যারা রাসেলস ভাইপার সাপে পরিণত হয়েছেন তাদের কি চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে? এ নিয়ে নানান ধারণা ও বক্তব্য চাউর আছে।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের দায়ে গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করা কঠিন। বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন, এ ধরনের অভিযোগ আদালতে প্রমাণ করা মোটেই সহজ কাজ নয় বরং প্রায় অসম্ভব

প্রকাশিত খবর অনুসারে পিএসসির ৩০টি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ এসেছে। কিন্তু ‘চোরের মার বড় গলা’- প্রবচনকে আবার মনে করিয়ে দিয়ে বিষয়টি অস্বীকার করেছিল পিএসসি। এ বিষয়ে সাংবিধানিক এ সংস্থাটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ১২ বছরে বিপিএসসিতে অনুষ্ঠিত বিসিএস ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষা সম্পর্কে কোনো মহল থেকে কখনোই কোনো ধরনের অভিযোগ বা অনুযোগ ছিল না বলে এটি প্রমাণিত যে, ওইসব পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করার জন্য পিএসসির বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, প্রশ্নফাঁস রোধ করতে প্রতিটি বিসিএস পরীক্ষায় ন্যূনতম ছয় সেট প্রশ্নপত্র এবং নন-ক্যাডার পরীক্ষায় ন্যূনতম চার সেট প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হয়। কোন সেটে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে, তা নির্ধারণ করতে পরীক্ষা শুরুর ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট আগে লটারি করা হয়। কিন্তু শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো এই কাণ্ডের একদিন পর, ৯ জুলাই প্রশ্নফাঁসের অভিযোগের বিষয়ে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে খোদ পিএসসি। ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে তদন্ত কমিটিকে বলা হয়েছে। কিন্তু এই কমিটির রিপোর্টে কতটা কি বেরিয়ে আসবে, কি আদৌ কিছুই আসবে না তার আর অপেক্ষা খুব একটা করা হচ্ছে বলে মনে হয় না। এ নিয়ে তেমন আলোচনাও নেই। বরং তুমুল আলোচনায় পিএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁস করার অভিযোগে সামান্য একজন ড্রাইভার আবেদ আলীসহ কয়েকজন আটক হওয়ার বিষয়টি। যারা ঘটনার ভয়াবহতার বিচারে নেংটি ইঁদুরের বেশি কিছু নন। আবার বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন, সাপে কিন্তু ইঁদুর খায়।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের দায়ে গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত করা কঠিন। বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন, এ ধরনের অভিযোগ আদালতে প্রমাণ করা মোটেই সহজ কাজ নয় বরং প্রায় অসম্ভব। আর অভিযোগ প্রমাণিত হলেও প্রচলিত আইনে সাজা মাত্র চার বছর। ১৯৮০ সালের পাবলিক পরীক্ষা আইনে পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে প্রশ্নপত্রের প্রকাশনা ও বিতরণ সম্বন্ধে আইনে উল্লেখ আছে, ‘কেউ যদি পরীক্ষার আগে কোনো উপায়ে প্রশ্ন ফাঁস, প্রকাশ বা বিতরণ করেন, তাহলে তিনি চার বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড কিংবা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।’ তবে দুদকের আইনে প্রশ্নফাঁসের সাজা সাত বছর বলে জানা গেছে। এরপরও প্রশ্ন আছে। এ ক্ষেত্রে ৯ জুলাইয়ের সংবাদ সম্মেলনে পিএসসি চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন বলেছেন, এর আগে যারা প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের বিভিন্ন সময়ে বরখাস্ত করেছে পিএসসি। কিন্তু বরখাস্ত হওয়ার পর তারা আবার কোর্টের অর্ডারে ছাড়া পেয়ে গেছে। পিএসসি চেয়ারম্যান আসলে বাস্তবতাই তুলে ধরেছেন। এটি আমাদের রাষ্ট্রের একটি দুর্বলতা। লঘুদণ্ড দিয়ে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না বলে মনে করেন অভিজ্ঞ মহল। এদিকে ‘পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইন ১৯৮০’ থেকে দেখা যায়, প্রশ্নফাঁস হলে পরীক্ষা বাতিল করতে হবে কি না- এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু বলা নেই। পিএসসির সাবেক কর্মকর্তা থেকে শুরু করে আইনজীবী- সবাই বলছেন, নিয়োগ হওয়ার আগ অবধি পরীক্ষা বাতিল করা গেলেও নিয়োগ বাতিল করা অসম্ভব! কারণ নিয়োগ পুরোপুরি বাতিল করলে আরেকটা জটিলতা সৃষ্টি হয়। ইতিপূর্বে যেসব নিয়োগ হয়েছে, সেগুলো বাতিল করার এখতিয়ার পিএসসির নেই। পুরনো সব পরীক্ষা বাতিল করা হলে তবে তা হাই কোর্টে টেকার সম্ভাবনা একেবারে ক্ষীণ। এদিকে ৯ জুলাইয়ের সংবাদ সম্মেলনে পিএসসি চেয়ারম্যান বলেছেন, ‘১২ বছর ধরে যেসব পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে সেগুলোর ব্যাপারে কতটা কী হবে- তা তিনি বুঝতে পারছেন না।’ তিনি বলেন, ‘যখনই কোনো পরীক্ষা হয়, তখন সেখানে কোনো অনিয়ম হলে আপনাদের (সাংবাদিক) মাধ্যমে হোক বা পরীক্ষার্থীদের মাধ্যমে হোক বা বিভিন্নভাবে (অভিযোগ) আসে। ১২ বছর আগের পরীক্ষা নিয়ে এতদিন পরে প্রমাণ কীভাবে হবে?’ সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান বলেন, ‘১০-১৫ বছর আগের পরীক্ষা বাতিলের কোনো সুযোগ এখন নেই।’ প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় প্রধানত যার নাম সামনে আসছে, তিনি হলেন সাবেক গাড়িচালক আবেদ আলী। গণমাধ্যমে খবর আসছে যে যারা প্রশ্ন কিনেছেন, তিনি তার স্বীকারোক্তিতে সেই নামগুলো বলে দিচ্ছেন। এরপরও প্রশ্ন আছে। আবেদ আলীর বক্তব্যও তো যাচাই-বাছাই হবে। এদিকে জানা কথা, গ্রেপ্তারদের স্বীকারোক্তি বিচার পর্বে তেমন গুরুত্ব বহন করে না। ফলে যারা ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রে সরকারি কর্মকর্তা সেজে বসে আছেন তারা ধরা পড়বেন কীভাবে? বিরাজমান বাস্তবতায় তাদের টিকিটিও হয়তো স্পর্শ করা যাবে না!

এই কঠিন বাস্তবতার মধ্যে কোটা বৈষম্য নিরসনে এবারের আন্দোলনে সারা দেশে বিপুলসংখ্যক ছাত্রছাত্রীর অংশগ্রহণ নানান ধরনের বাস্তবতার ইঙ্গিত দেয়। এটি নানান দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয়েছে। সরকার এবং বিরোধী পক্ষ সম্পূর্ণ বিপরীত ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এই দুই দৃষ্টিভঙ্গি একবারে দুই মেরুতে বিরাজমান। রেললাইনের মতো সমান্তরাল। এক সরলরেখায় আনা তো দূরের কথা, কাছাকাছি আনারও উপায় নেই। এর ফাঁকে একটি মৌলিক বিষয় চাপা পড়ে গেছে। তা হচ্ছে, কোটা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বিপুল অংশগ্রহণের নেপথ্যে রয়েছে বিরাজমান নানান অব্যবস্থাপনা ও বঞ্চনার পুঞ্জীভূত ক্ষোভ। টাকা ছাড়া চাকরি নেই- এটি অনেকটাই প্রতিষ্ঠিত। এর মধ্যেও একটি ধারণা ছিল, বিসিএস পরীক্ষায় মেধার মূল্যায়ন হয়। কিন্তু নানান কোটায় ৫৬ শতাংশ পদ সংরক্ষিত থাকায় যে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়েছে তারই প্রকাশ ঘটেছে গত কয়েকদিনের ঘটনাবলিতে। এ প্রসঙ্গে একটি বিষয় বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন, দেশে যে শিক্ষাব্যবস্থা বিরাজমান তাতে চেয়ার-টেবিলে বসে ফাইলওয়ার্ক করা ছাড়া অন্য কাজের লোক পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেন ব্রিটিশ আমলের কেরানিকুলের অন্য সংস্করণ। ফলে বাংলাদেশ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিদেশিদের কর্মের উর্বর জমিন। এক পরিসংখ্যান মতে, আমাদের প্রবাসীরা যে রেমিট্যান্স পাঠান তার চেয়ে বেশি বৈধ বেতন হিসেবে নিয়ে যায় বিদেশিরা। এদের সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ। যাদের মধ্যে ভারতীয়দের সংখ্যাই সিংহভাগ। অতিউচ্চ মানের কাজ নয়, সাধারণ কাজের জন্যও উপযুক্ত প্রার্থী পাওয়া দুষ্কর- এমনটাই বলা হচ্ছে বেসরকারি নিয়োগকারীদের তরফ থেকে। এ অবস্থায় পঙ্গপালের স্রোত সৃষ্টি হয়েছে সরকারি চাকরিতে। যে কারণে কোটার বিরুদ্ধে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের এত ক্ষোভ, কোটাবিরোধী আন্দোলনে এত অংশগ্রহণ। গভীরের এ বিষয়টি অনুধাবন না করে অথবা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়ে নানান কিসিমের বাতকে বাত কথা বলা হচ্ছে। বিরাজমান বাস্তবতা অনুধাবন করে বাগাড়ম্বর করার বদলে সংশ্লিষ্ট কর্তা মহলের উচিত মূলে নজর দেওয়া। এটি খুবই জরুরি। এটি প্রমাণিত সত্য, বাংলাদেশ বাড়তি শ্রমশক্তিকে ব্যবহার করতে পারছে না। এর মূল কারণ হচ্ছে শিক্ষার ধরন এবং দেশে যথেষ্ট কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হওয়া। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব মতে, দেশে এখন বেকারের সংখ্যা ২৫ লাখ ৯০ হাজার। যদিও বাস্তবে এ সংখ্যাটা আরও বেশি বলে অর্থনীতিবিদদের অভিমত। এ ছাড়া বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) তথ্যানুযায়ী দেশে বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। এর মধ্যে যুব বেকারত্বই প্রায় ৮০ শতাংশ। এ পরিস্থিতিতে প্রয়োজন ব্যাপক কর্মসংস্থান। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না। এর প্রধান কারণ হচ্ছে কর্মমুখী শিক্ষার অভাব। ফলে গতানুগতিক শিক্ষা শেষে কাজ পাচ্ছে না তরুণরা। এদিকে বাজারে যেসব কাজের চাহিদা, দেশের শিক্ষা পদ্ধতিতে তরুণদের মধ্যে সে দক্ষতা তৈরি করা হয় না। দ্বিতীয়ত, বিদেশে প্রত্যাশিত মাত্রায় ধরা যাচ্ছে না নতুন শ্রমবাজার। ফলে বেকাররা সেখানেও সুবিধা করতে পারছে না। আবার যারা বিদেশে যাচ্ছেন, তাদের দক্ষতায় ঘাটতি থাকায় নিম্ন মজুরির কাজ করতে হয়। এর ফলে রেমিট্যান্সও কম আসছে। এদিকে দেশে উদ্যোক্তা এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ প্রয়োজনীয় মাত্রায় উন্নত নয়। ফলে এখানে কোনো চাকরিতে না গিয়ে যারা উদ্যোক্তা হতে চান, তারা যথেষ্ট পুঁজি ও পরিবেশ পাচ্ছেন না। এর দায় চূড়ান্ত বিচারে রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে না অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কর্মসংস্থান। ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ, বৈদেশিক বিনিয়োগ আশানুরূপ হচ্ছে না। তরুণদের শিক্ষাগত যোগ্যতা চাকরি প্রাপ্তিতে কাজে লাগছে না, সবাই গতানুগতিক অনার্স, মাস্টার্সের পড়াশোনা করছে। অথবা বিবিএ-এমবিএ করছে। চাকরির বাজারে এদের চাহিদা নেই। তবে এ সমস্যা রাতারাতি দূর করা কঠিন। এ অবস্থায় নিশ্চিত করতে হবে, হেনতেন কথামালার আড়ালে যেন কম যোগ্যতাসম্পন্ন শ্রেণি চাকরিতে প্রবেশ করতে না পারে। নিয়োগ পরীক্ষা যেন ত্রুটিমুক্ত হয়। যে কাজ দেশরক্ষা বাহিনীগুলো পারে, তা কেন পিএসসি করতে পারবে না। এ প্রশ্ন উঠতেই পারে।

এর উত্তর তেমন কঠিনও নয়। হয়তো যোগ্যতা ও সততার বাইরে অন্য বিবেচনায় পিএসসিতে নিয়োগই প্রতিষ্ঠানটিকে অকার্যকর করে তুলেছে। এই পিএসসিকে সঠিক অবস্থানে প্রতিস্থাপন জরুরি। আর যারা ফাঁস প্রশ্নপত্রে পাস করে সরকারি আমলা-কামলা বনে গেছেন তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। আবার এক্ষেত্রে নজর রাখতে হবে যাতে কেউ কারও প্রতিহিংসার শিকার না হয়। এটি আইনের মারপ্যাঁচে কঠিন হলেও গোপন অনুসন্ধানে খুব কঠিন বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। স্বীকার করতেই হবে, রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সক্ষমতা অনেক উচ্চপর্যায়ে আছে। একটি কমিশন গঠন করে হলেও ফাঁস প্রশ্নে পাস কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। তবে এ ব্যাপারে ১০০ ভাগ স্বচ্ছ হতে হবে। তা না করে ‘মাই ম্যান’ বাদ দিয়ে অন্যদের ধরার কাণ্ড হলে তা অরাজকতা ডেকে আনতে পারে। একটি বিষয় বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন, কোটা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্তর্নিহিত শক্তিকে অবজ্ঞা করলে তা আত্মঘাতী হয়ে যেতে পারে। আর জনসংখ্যা ও কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী নিয়ে ভাবার সময় কিন্তু খুব বেশি নেই। সরকারি হিসাবে বাংলাদেশের জনসংখ্যা এখন ১৭ কোটি ১৫ লাখেরও বেশি। আয়তনে ছোট একটি দেশের জন্য এ জনসংখ্যা বিশাল। তবে এখনো আমরা সুবিধাজনক অবস্থানে আছি। কারণ আমাদের জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশই বয়স বিবেচনায় কর্মক্ষম। কিন্তু জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০৩৫ সালের পর বাংলাদেশের এই কর্মক্ষম জনশক্তির হার কমতে থাকবে। বিপরীতে বাড়বে শিশু, বৃদ্ধদের মতো নির্ভরশীল জনসংখ্যা। অতীতে চীন-জাপানের মতো দেশগুলো তাদের বাড়তি কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে সাফল্যের সঙ্গে ব্যবহার করতে পারলেও বাংলাদেশ সেটা কতটা কাজে লাগাতে পারছে তা নিয়ে প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। ফলে মাত্র এক যুগ পরের পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে শিক্ষার ধরন ও কর্ম পদ্ধতি নির্ধারণ করার জনপ্রত্যাশা কি খুব বেশি হয়ে যাবে? নিশ্চয়ই না!

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক

সর্বশেষ খবর