রবিবার, ২১ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

বয়স্কদের কোরআন শিক্ষার গুরুত্ব ও ফজিলত

মুফতি মুজিবুর রহমান ফরাজী

বয়স্কদের কোরআন শিক্ষার গুরুত্ব ও ফজিলত

মানুষের মুখ থেকে যা উচ্চারিত হয়, তার মধ্যে কোরআন তেলাওয়াত সর্বাধিক উত্তম। কোরআনে কারিম বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পঠিত পবিত্র ধর্মগ্রন্থ। কোরআন মাজিদ তেলাওয়াত ও শিক্ষার গুরুত্ব অনেক। কোরআনের আয়াত ও হাদিসের একাধিক জায়গায় এর ফজিলতের কথা আলোচনা করা হয়েছে। নিম্নে কোরআন-হাদিসের আলোকে বর্ণনা করা হলো-

প্রত্যেক হরফের জন্য সওয়াব লাভ কোরআনে কারিম তেলাওয়াতের মাধ্যমে বিরাট সওয়াব অর্জন করার সুযোগ রয়েছে। এর সঙ্গে অনেক উপকারিতাও রয়েছে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআনের একটি হরফ পাঠ করে, তাকে একটি নেকি প্রদান করা হয়। প্রতিটি নেকি ১০টি নেকির সমান। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মিম একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ, মিম একটি হরফ’ (তিরমিজি)।

পবিত্র কোরআন শিক্ষার মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা যায়। হজরত উসমান (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই, যে নিজে কোরআন শিক্ষা করে ও অপরকে শিক্ষা দেয়’ (সহিহ বুখারি)।

এই হাদিস দ্বারা কোরআন শিক্ষার্থীর মর্যাদা বলা হয়েছে এবং এর দ্বারা বোঝা যায়, যেই কোরআন শিখুক না কেন তার মর্যাদা বাড়বে, চাই সে কিশোর হোক অথবা বৃদ্ধ, তবে আমাদের সমাজের কিশোররা তো মাদরাসা থেকে কোরআন শিখে কিন্তু বৃদ্ধরা এক্ষেত্রে পেছনে পড়ে যায়, অথচ অধিকাংশ সাহাবিই বৃদ্ধ বয়সে কোরআন শিখেছেন, তাই আমাদের সমাজের বয়স্কদের এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া উচিত। নিচে কোরআন শিক্ষার ফজিলত সম্পর্কে আরও কিছু হাদিস উল্লেখ করা হলো :

কেয়ামতের ভয়াবহ অবস্থার সময় কোরআন তেলাওয়াতকারীর পক্ষে সুপারিশ করবে। এটা বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়। হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা কোরআন তেলাওয়াত করো। কারণ কোরআন কেয়ামতের দিন তেলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে’ (সহিহ মুসলিম)।

কোরআন তেলাওয়াত ইমান বাড়ায়। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত বান্দার জন্য এমন উপকারী যে, তা তেলাওয়াত করলে ইমান বৃদ্ধি পায়। এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন, ‘যারা ইমানদার, তারা এমন যে, যখন আল্লাহর নাম নেওয়া হয় তখন ভীত হয়ে পড়ে তাদের অন্তর। আর যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয় কালাম, তখন তাদের ইমান বেড়ে যায় এবং তারা স্বীয় পরওয়ারদিগারের প্রতি ভরসা পোষণ করে’ (সুরা আনফাল-২)।

কোনো ব্যক্তি পবিত্র কোরআনের জ্ঞানে সমৃদ্ধ হয়ে তার হক আদায় করে তেলাওয়াত করলে তার সঙ্গে ঈর্ষা কিংবা তার মতো হওয়ার আকাক্সক্ষা করা যাবে।

ইসলামী শরিয়তে একমাত্র দুই ব্যক্তির ওপর ঈর্ষা করা যায়। এক ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ কোরআনের ইলম দান করেছেন, সে দিবা-রাত্রি ওই কোরআন তেলাওয়াতে ব্যস্ত থাকে। দ্বিতীয় সে ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ ধন-সম্পদ দান করেছেন। সে তা দিনরাত (বৈধ কাজে) খরচ করে (সহিহ বুখারি)।

কোরআন পড়া উত্তম সম্পদ অর্জন। কোরআন পড়া বা শিক্ষা দেওয়ার কাজে নিয়োজিত থাকা উত্তম সম্পদ অর্জন করার অন্তর্ভুক্ত। এ বিষয়ে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ কেন সকালে মসজিদে গিয়ে আল্লাহর কোরআন হতে দুটি আয়াত পড়ে না বা শিক্ষা দেয় না?

তাহলে সেটি তার জন্য দুটি উট লাভ করার চেয়ে উত্তম হবে। তিনটি আয়াত তিনটি উট অপেক্ষা উত্তম। চারটি আয়াত চার উট অপেক্ষা উত্তম। অনুরূপ আয়াতের সংখ্যা অনুপাতে উটের সংখ্যা অপেক্ষা উত্তম (সহিহ মুসলিম)।

ওই হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, মসজিদে গিয়ে কিছু কোরআন শিখা উট পাওয়ার থেকেও বেশি ফজিলতপূর্ণ। তাই আমাদের সমাজের মসজিদগুলোতে সকাল এবং বিকাল শিশু ও বয়স্কদের কোরআন শিক্ষার ব্যবস্থা করার প্রতি সুনজর দিতে হবে। তবেই সমাজের প্রত্যেকটি মুসলিম কোরআন শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠবে এবং নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বর্ণিত সর্বোত্তম ছাত্র ও শিক্ষকে পরিণত হবে। আল্লাহ আমাদের প্রত্যেককে কোরআন তেলাওয়াতের ফজিলত ও গুরুত্ব বুঝে তেলাওয়াত করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : গবেষক ও ইসলামী চিন্তাবিদ, পীর সাহেব, সূর্যপুর

সর্বশেষ খবর