দেশের অগ্রসরমান অর্থনীতি বিরাট ধাক্কা খেল নতুন অর্থবছরের শুরুতেই। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে হামলা, ভাঙচুর, সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগের নজিরবিহীন নাশকতা গুরুতর আঘাত করেছে অর্থনীতির স্বাভাবিক গতিধারায়। রাজধানীসহ সারা দেশে সপ্তাহব্যাপী সহিংসতায় ব্যাংক-বিমা, শিল্প-বাণিজ্য, বন্দর, বহির্বাণিজ্যসহ সামগ্রিক অর্থনীতির যে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে- এ হোঁচট সামলে উঠতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে, অনেক দিন লাগবে। এমনিতেই কয়েক বছর ধরে ডলারের উচ্চমূল্যে নাজেহাল অর্থনীতি। মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্ক ছুঁইছুঁই। আর্থিক সংকটে বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানে টানাপোড়েন চলছে। আইএমএফসহ উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তা সত্ত্বেও নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা রিজার্ভের। এমন একটা সংকট সময়ে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো আঘাত হানল- শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ঢুকে সুযোগসন্ধানীদের চালানো চরম নৈরাজ্য ও ভয়ংকর ধ্বংসযজ্ঞ। ষড়যন্ত্রকারীদের তাণ্ডবে দেশের যেসব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, ভবন, সড়ক অবকাঠামো, যানবাহন ধ্বংস হয়েছে- তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে। এগুলো পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনতে অনেক সময় লাগবে, ব্যয় হবে বিপুল অর্থ। হতাশাজনক ছায়া পড়বে বৈধ পথের রেমিট্যান্সে। বিশ্ববাণিজ্য এবং ফ্রিল্যান্সিং খাতে এর মধ্যেই হুমকি সৃষ্টি হয়েছে। বন্দরে আটকে পড়েছিল কয়েক হাজার চালান। এতে বিদেশি ক্রেতাদের কাছে ক্ষতিকর বার্তা যাওয়াই স্বাভাবিক। রাজস্ব আদায়ে অশনিসংকেত দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে এ খাতে ১৮ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি দেখা দিয়েছে। দৈনন্দিন খেটে খাওয়া মানুষ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা চরম দুর্ভোগে দিন পার করেছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে। এসব অযুত-নিযুত নেতিবাচকতা মোকাবিলা করেই ঘুরে দাঁড়াতে হবে জাতীয় অর্থনীতিকে। এর কোনো বিকল্প নেই। আশার বিষয় হচ্ছে, বাঙালি অদম্য এক জাতি। কোনো কিছুতেই এদের দাবিয়ে রাখা যায় না। এক্ষেত্রেও তেমনটিই হতে হবে। ধ্বংসস্তূপের ওপরই মাথা তুলে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। তার জন্য চাই সুচিন্তিত পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ। সময়ের কঠিন বাস্তবতা বিবেচনা করে সর্বোচ্চ সক্রিয় হতে হবে দায়িত্বশীলদের।