সোমবার, ২৯ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

তিস্তায় ধু-ধু বালুচর

পরিকল্পিত নদীশাসনের বিকল্প নেই

চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে টানা বৃষ্টি আর উজানের ঢলে ভয়ংকর রূপ ধরেছিল তিস্তা নদী। ফলে ভাটি এলাকার কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। মাত্র কদিনের ব্যবধানে শ্রাবণের ভরা বর্ষা মৌসুমে সেই তিস্তার বুকে জেগে উঠেছে অসংখ্য ধু-ধু বালুচর। মূল গতিপথ হারিয়ে হাঁটুপানি নিয়ে সরু নালার মতো বয়ে চলেছে তিস্তা। নাব্য হ্রাস এমন উৎকণ্ঠার পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, আসন্ন রবি মৌসুমে সেচ প্রকল্পের কাজ চালানোই হয়তো বেশ কঠিন হয়ে পড়বে। স্বভাবতই শঙ্কা দানা বেঁধেছে কৃষকের মনে। ২০১১ সালে ভারতের সঙ্গে তিস্তা চুক্তির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও শেষ মুহূর্তে চুক্তিটি হয়নি। প্রায় ২৪০ বছরের পুরনো নদী তিস্তা। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে আরও প্রায় ২৫ নদীর প্রবাহ। ভারত পানি প্রত্যাহার করলে শুষ্ক মৌসুমে নদীটি প্রায় শুকিয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় উত্তরের অনেক জেলার বেশকটি উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। বিরূপ প্রভাব পড়ে কৃষকের জীবন-জীবিকার ওপর। তিস্তা এ কারণে জনপদের মানুষের জন্য হয়ে উঠেছে শাঁখের করাত। বর্ষা মৌসুমে যেমন ডুবিয়ে, ভাসিয়ে, ভাঙনে সর্বস্বান্ত করছে; শুষ্ক মৌসুমে আবার শুকিয়ে মারছে। এ দ্বিমুখী পীড়ন থেকে রক্ষা পেতে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা। পরিকল্পিত নদীশাসনের প্রক্রিয়ায়, নাব্য বৃদ্ধির মাধ্যমে পর্যাপ্ত পানি প্রবাহ ও ধারণের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। আশার বিষয় যে, ভারতের সঙ্গে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্সা ও সুষ্ঠু বণ্টনের লক্ষ্যে মহাপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে সরকার। কূটনৈতিক তৎপরতায় অগ্রগতি স্পষ্ট। দিল্লির অঙ্গীকার এবং প্রচেষ্টাও দৃশ্যমান। আমরা আশাবাদী যে, নানা বাধা অতিক্রম করে উভয় পক্ষের সদিচ্ছা সহসাই প্রত্যাশিত সুফল বয়ে আনবে। আর তার মাধ্যমে হোয়াংহো যেমন ‘চীনের দুঃখ’- এই নেতিবাচক তকমা থেকে মুক্ত হয়ে আশীর্বাদে পরিণত হয়েছে; আজকের ‘গলার কাঁটা’ তিস্তাও তেমনি আমাদের জন্য শস্য, সম্পদ, সমৃদ্ধির সহায়ক উৎস হয়ে উঠবে। জাতির ঐকান্তিক কামনা সেটাই।

সর্বশেষ খবর