সোমবার, ২৯ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

দরুদ পাঠের ফজিলত

মুফতি হেলাল উদ্দিন হাবিবী

দরুদ পাঠের ফজিলত

দরুদ শব্দটি ফারসি। এর আরবি হলো সালাত। শরিয়তের পরিভাষায় আস-সালাতু আলান্নাবিয়্যি- অর্থাৎ মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি কল্যাণ কামনা করাকে দরুদ বা সালাত বলে। নবী করিম (সা.)-এর নাম শ্রবণ করা মাত্রই তাঁর প্রতি অগাধ ভক্তি ও ভালোবাসা নিয়ে প্রথমবার দরুদ পাঠ করা ওয়াজিব। এর পরে পড়া মুস্তাহাব। আমাদের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ রসুল। তিনি সমগ্র সৃষ্টিজগতের জন্য রহমত। তাই তাঁর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস ও আনুগত্য ছাড়া আল্লাহতায়ালার নৈকট্য অর্জন করা অসম্ভব। মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বন্ধু হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি অবিরত রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতাগণও নবীজির জন্য রহমতের দোয়া করেন তথা দরুদ পাঠ করেন। এ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ নবীর প্রতি রহমত নাজিল করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর জন্য রহমতের দোয়া করেন। হে মুমিনগণ! তোমরাও নবীর প্রতি দরুদ প্রেরণ কর এবং অধিক পরিমাণে সালাম পাঠাও।’ (সুরা আহজাব, আয়াত ৫৬)। দরুদ পাঠের মাধ্যমে রহমত অর্জিত হয়, গুনাহ মাফ হয় এবং মহান রবের দরবারে মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। এ ব্যাপারে হজরত রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ পাঠ করে, মহান আল্লাহ তার প্রতি ১০টি রহমত নাজিল করেন, ১০টি গুনাহ মাফ করেন এবং তার মর্যাদা দশ গুণ বাড়িয়ে দেন।’ (নাসায়ি)। হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি সবচেয়ে কৃপণ, যার কাছে আমার নাম আলোচনা হয় অথচ সে আমার প্রতি দরুদ পাঠ করে না।’ (তিরমিজি)। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিন ওই ব্যক্তি আমার অধিক নিকটবর্তী হবে, যে আমার প্রতি অধিক পরিমাণে দরুদ পাঠ করে।’ (তিরমিজি)।

পৃথিবীর যে প্রান্ত থেকেই রসুল (সা.)- এর প্রতি দরুদ পাঠ করা হোক, ফেরেশতাগণ তৎক্ষণাৎ তা রসুলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা মোবারকে পৌঁছে দেন। এমনকি যে দোয়ার মধ্যে দরুদ পাঠ করা না হয় সেই দোয়া কবুল হয় না, বরং আসমান-জমিনের মাঝে থেমে থাকে। এ সম্পর্কে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা আমার কবরকে ঈদ অর্থাৎ উৎসবের স্থানে পরিণত করো না। বরং আমার প্রতি দরুদ পাঠ করো। কেননা তোমরা যেখানেই থাক না কেন, তোমাদের দরুদগুলো আমার কাছে পৌঁছে যায়।’ (আবু দাউদ)। হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত নবীর প্রতি দরুদ না পড়বে, ততক্ষণ দোয়া আসমানে যাবে না। বরং আসমান-জমিনের মাঝে থেমে থাকবে। (তিরমিজি)। সম্মানিত পাঠক! আমাদের প্রাণের চেয়েও প্রিয় হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নাম শোনা মাত্র তাঁর প্রতি সর্বোচ্চ ভক্তি শ্রদ্ধা ও আন্তরিকতা নিয়ে দরুদ পাঠ করা প্রত্যেক নবীপ্রেমিক উম্মতের বিশ্বাস ও ভালোবাসার দাবি। তাই আসুন, নবীজি (সা.)-এর নাম শোনা মাত্রই হৃদয়ের সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে তাঁর প্রতি দরুদ পড়ি ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’।

লেখক :  খতিব, মাসজিদুল কোরআন জামে মসজিদ কাজলা, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর