বুধবার, ৩১ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

সালাতে রসুল (সা.)-কে অনুসরণ করতে হবে

বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ নজরুল ইসলাম

সালাতে রসুল (সা.)-কে অনুসরণ করতে হবে

সালাতের মধ্যে ইমানের রুকনগুলো নিহিত। সালাত প্রসঙ্গে আল্লাহ সুবহানুতায়ালা বলেন, নিশ্চয় সাফল্য লাভ করিবে, যে পবিত্রতা সহকারে তার প্রতিপালকের নাম স্মরণ করে ও সালাত কায়েম করে (সুরা গাশিয়া-১৪-১৫)। অপর এক আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘বিশুদ্ধচিত্তে তাঁর অভিমুখী হয়ে তাকে ভয় কর। সালাত আদায় কর এবং মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হইও না।’ (রুম-৩১)। এতে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত সালাত হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। হাশরের ময়দানে সর্বপ্রথম সালাতের হিসাব নেওয়া হবে। যে উত্তীর্ণ হবে সে হবে সফলকাম। সালাত হচ্ছে মানুষ এবং তাঁর প্রভুর মধ্যে সংযোগ। যে সালাতে দাঁড়ায় আল্লাহ তাকে তার প্রশংসা করতে এবং তার কাছে চাইতে ডাক দেন। সে যা চাইবে আল্লাহ তাকে তাই দিবেন। আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের জন্য সালাতসহ সব ইবাদতের ক্ষেত্রে রসুল (সা.)-কে হুবহু অনুসরণ করতে বলেছেন। যার প্রমাণ আল্লাহ বলেন ‘যে ব্যক্তি রসুল (সা.)-এর আনুগত্য ও অনুসরণ করল কার্যত সে আল্লাহকে অনুসরণ করল।’ এ প্রসঙ্গে রসুল (সা.) বলেন, ‘সাল্লু কামারাআইতুমুনী উসাল্লি’ তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত পড়তে দেখ, ঠিক সেইভাবে সালাত পড় (সহিহ আল বুখারি)। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে আমরা তো রসুল (সা.)-এর সালাত স্বচখে দেখিনি তাই কীভাবে তাঁর মতো সালাত পড়ব। উত্তর : সহিহ হাদিস অনুসরণে রসুল (সা.)-এর সালাত পড়তে হবে। আমাদের সমাজে আমরা যে সালাত আদায় করছি তার মধ্যে কয়েকটি গুরুত্ব বিষয়াদি যা রসুল (সা.) সালাতের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় কেবলমাত্র ওইগুলো আলোচনা করব। ইনশা আল্লাহ। জায়নামাজের দোয়া-ইন্নি ওজ্জাহাতু... যদি আমরা কেউ পাঠ করে থাকি এখন থেকে উহা পাঠ করব না। যদিও ইহা কোরআনের আয়াত তবুও পাঠ করব না। এ কারণে রসুল (সা.) জায়নামাজের দোয়া পাঠ করেননি। এর প্রমাণ কোনো সহিহ কেন, কোনো জঈফ হাদিসেও নেই। নিয়ত করা ফরজ। কিন্তু সালাতের নিয়ত অন্তরে হবে মুখে উচ্চারণের মাধ্যমে নয়। আমরা যখন যে সালাতে দাঁড়াব তখনই ঐ সালাতের নিয়ত হয়ে যায়। (বুখারি-৭৯৩-৮০৩)। তাকবিরে তাহরিমা অর্থাৎ আল্লাহু আকবার বলার সময় মুখ, বুক ও পায়ের আঙুলগুলো যেমন কেবলামুখী করতে হবে তেমনি দুই হাতের তালুও কেবলামুখী করতে হবে এবং উহা কাঁধ অথবা কানের লতি পর্যন্ত উঠানো যাবে তবে কানের লতি স্পর্শ করা যাবে না) লতি পর্যন্ত উঠিয়ে আল্লাহু আকবার বলে বাম হাতের কবজির ওপর ডান হাত বুকের ওপর অথবা বুকের নিচে বাঁধতে হবে। আমরা যেন হাতের আঙুল ও তালু যেন দুই কানের দিকে না করি। বুখারি ৭৩৮, ৭৪০ পৃ. ৩৫৪ ও ৩৫৭। ছানা পড়ার পর আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ হির রাহমানির রাহিম পাঠ করাসহ ইমামের পেছনে জাহেরি এবং বাতেনি উভয় সালাতে মুক্তাদিদের চুপি চুপি অবশ্যই সুরা ফাতিহা পড়তে হবে নচেত সালাত হবে না। দলিল : সহিহ আল বুখারি আধুনিক প্রকাশনী প্রথম খণ্ড হাদিস নম্বর-৭১২, সহিহ মুসলিম (ইসলামী ফাউন্ডেশন দ্বিতীয় খণ্ড) হাদিস নম্বর- ৭৫৮, ৭৫৯-৭৬১। যারা সুরা আরাফের ২০৪ নম্বর আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে সুরা ফাতিহা ইমামের পিছনে না পড়ে শুনতে বলেন এবং ইমামের পড়াই যথেষ্ট বলেন তাদের জানা উচিত কোরআন নাজিল হয়েছে রসুল (সা.)-এর ওপর তিনিই বলেছেন সালাতে যে সুরা ফাতিহা পড়বে না তার সালাত অসম্পূর্ণ, অসম্পূর্ণ অসম্পূর্ণ। আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণিত হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি যখন জানতে চেয়েছেন ইমামের পিছনেও রসুল (সা.) বলেছেন ইমামের পিছনে চুপি চুপি পড়ে নিবে। সুরা ফাতিহা পাঠের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর সঙ্গে কথা বলবে। বান্দা আল্লাহর প্রশংসা মহত্ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব বলা ও মানার মাধ্যমে তাদের আরজি মহান রবের কাছে পেশ করবে। ইমামের পিছনে সুরা ফাতিহা পাঠের জন্য যে সাহাবিদের উদ্ধৃতিতে হাদিস বর্ণিত হয়েছে তাঁরা হচ্ছেন- (১) আবু হুরাইরা (রা.) (২) ইবাতা ইবনে ছামেত (রা.) (৩) আবু সাঈদ খুদরি (রা.) (৪) আম্মাজান আয়েশা (রা.) (৫) আবু দারদা (রা.) (৬) যাবের (রা.) (৭) আবদুল্লা ইবনে আমর (রা.) (৮) নাফে ইবনে আমর (রা.) (৯) মাহমুদ বিন রাবী (রা.) (১০) জাহবি (রা.) সাহাবিগণ। কাজেই সাহাবিদের অনুসরণ করতে হবে।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

সর্বশেষ খবর