‘মাছে ভাতে বাঙালি’-এ প্রবচন আমাদের অহংকারের অনুষঙ্গ। অনন্তকাল ধরে প্রয়োজনীয় পুষ্টির বড় অংশের জোগান দিচ্ছে মাছ। এর চাষাবাদ ও আহরণ কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্ব হ্রাস, রপ্তানি আয় বৃদ্ধিসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখছে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত হিসেবে মৎস্য সম্পদের অবদান অনস্বীকার্য। সঙ্গত কারণেই ‘শাদা সোনা’ অভিধা পেয়েছে চিংড়ি। বিশ্বের অর্ধ-শতাধিক দেশে আমাদের মাছ রপ্তানি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা অনুযায়ী মানসম্পন্ন মাছ চাষ ও প্রক্রিয়াকরণের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার বিস্তীর্ণ এলাকা। মাছ উৎপাদনে উদ্বৃত্ত এই তিন জেলায় বাগদা ও গলদা চিংড়িসহ ব্যাপকভাবে তেলাপিয়া, কাঁকড়া এবং কুচিয়ার চাষ হয়। সদ্যবিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দক্ষিণাঞ্চল থেকে ২ হাজার ১৪৬ কোটি টাকার মাছ ও মাছজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। কিন্তু এই অঙ্ক আগের অর্থবছরের তুলনায় ৬৭৭ কোটি টাকা কম। যা চিংড়ি চাষের ওপর নির্ভরশীলদের জন্য দুশ্চিন্তার বিষয়। এই নেতিবাচক পরিসংখ্যান সামনে রেখেই গতকাল জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ শুরু হয়েছে। এবার এ সপ্তাহের প্রতিপাদ্য ‘ভরবো মাছে মোদের দেশ, গড়বো স্মার্ট বাংলাদেশ’। বিশেষজ্ঞদের ধারণা- বিশ্ববাজারে উচ্চমূল্যের গলদা ও বাগদার চাহিদা কমে যাওয়া, তুলনামূলক কম দামি ভেনামির দাপট এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চিংড়ি রপ্তানিতে কালো ছায়া ফেলেছে। তবে এ ছাড়াও কোথাও কোনো বিশেষ ঘাটতি থাকলে তা চিহ্নিত করে, পূরণের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। জাতীয় অর্থনীতির স্বার্থে সব প্রতিকূলতা মোকাবিলা করেই মৎস্যসম্পদ উৎপাদন, আহরণ ও বাজারজাতকরণের সুষ্ঠু প্রক্রিয়া গতিশীল রাখতে হবে। সংশ্লিষ্ট মহল এ ব্যাপারে অংশীজনদের অনুকূলে প্রণোদনা ও পৃষ্ঠপোষকতাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন এমনটিই প্রত্যাশিত।