সোমবার, ৫ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

গুনাহগার বান্দার প্রতি আল্লাহর মমতা

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

গুনাহগার বান্দার প্রতি আল্লাহর মমতা

শূন্য। মহাশূন্য। আরও শূন্য। একেবারেই শূন্য। যখন শূন্য বলতেও কোনো কিছু সৃষ্টি হয়নি সে সময়ের কথা। তখন শুধু আল্লাহ ছিলেন। আল্লাহর সত্তা ছাড়া কিছুই ছিল না। কোনো এক রহস্যময় কারণে আল্লাহর ইচ্ছা হলো তিনি জগৎ সৃষ্টি করবেন। শূন্যের মাঝে সুন্দর দুনিয়া সৃষ্টির পরিকল্পনার শুরুতে আল্লাহ কী ভেবেছেন? খুব চমৎকার চিন্তা ছিল মাওলানা পাকের। দয়াল নবীজি (সা.)-এর মুখে সে কথা জেনেছি আমরা। বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইবনে মাজাহ (রহ.) হজরত আবু হুরায়রা সূত্রে বর্ণনা করেছেন, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন আল্লাহতায়ালা শূন্য থেকে পূর্ণ দুনিয়া সাজানোর ইচ্ছা করলেন, তখন তিনি সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করেন। সে কলমে এক অমোঘ নীতি লেখা হয়। না, অন্য কারও জন্য নয়; আল্লাহ নিজে নিজের জন্য নীতি প্রণয়ন করেছেন। সে নীতি হলো - ‘আমি আল্লাহর রাগের চেয়ে মায়া বেশি হবে। আমি শাস্তির চেয়ে ক্ষমা বেশি করব। আমি শাসনের চেয়ে সোহাগ বেশি করব। আমি আল্লাহ! আমি দয়াময়! করুণাময়! পরমদাতা।’ (ইবনে মাজাহ, তিরমিজি ও দারা কুতনি)। একই ভাবার্থের আরেকটি হাদিস ইমাম আহমদ (রহ.) তার মুসনাদে উল্লেখ করেছেন। এটিও হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, ‘রসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা যখন প্রথম কোনো কিছু সৃষ্টির ইচ্ছা করলেন, তিনি সর্বপ্রথম আরশের ওপর সংরক্ষিত এক কিতাবে নিজের জন্য এই নীতি লিখে নেন - অবশ্যই আমার রাগের চেয়ে মায়া বেশি।’ (মুসনাদে আহমাদ, বুখারি ও মুসলিম)। সৃষ্টির শুরুতে যে নীতি আল্লাহ নিজের জন্য ঠিক করেছেন, হাজার লক্ষ কোটি বছর পর সে নীতির প্রতিফলনই দেখতে পাচ্ছি আমাদের জীবনে। আমরা গুনাহ করি, আল্লাহ ক্ষমা করেন। আমরা জুলুম করি আল্লাহ ইহসান করেন। আমরা ছিনিয়ে নিই, আল্লাহ বিলিয়ে দেন। আল্লাহর দয়া সম্পর্কে ইমাম তিরমিজি একটি চমৎকার হাদিস বর্ণনা করেছেন। সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘আমার রাগের চেয়ে রহমত বেশি এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ হলো, কোনো বান্দা যখন নেক আমলের নিয়ত করে, সঙ্গে সঙ্গে তার আমল নামায় সওয়াব লেখা শুরু করে দিই; অথচ কাজটি সে তখনো বাস্তবায়ন করেনি। যখন সে নেক আমলটি বাস্তবায়ন করে তখন আমি তার ওপর এত খুশি হই যে, তার জন্য দশ থেকে সাত শ গুণ পর্যন্ত সওয়াব লেখার নির্দেশ দিই। কিন্তু গুনাহর বেলায় ভিন্ন নিয়ম। কোনো বান্দা যখন গুনাহর নিয়ত করে, নিয়তের জন্য তার আমল নামায় কোনো গুনাহ লেখা হয় না। যদি সে পাপ কাজটি বাস্তবায়ন না করে তাহলে তার গুনাহের খাতা শূন্যই থাকে। কিন্তু নফসানিয়তের কারণে গুনাহ যদি সে করেই ফেলে তাহলে তার আমলনামায় কেবল একটি গুনাহই লেখা হয়। আমার বান্দাকে অতিরিক্ত গুনাহ দিয়ে কষ্ট দেওয়ার কোনো ইচ্ছাই আমার নেই।’ (তিরমিজি, বুখারি ও মুসলিম)। ইবনে হিব্বানের বর্ণনায় আরও দারুণ কথা বলেছেন আল্লাহতায়ালা। এ হাদিসটিও আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি বান্দার প্রতি এত দয়ালু - যখন সে কোনো গুনাহর ইচ্ছা করে, কিন্তু গুনাহটি তখনো বাস্তবায়ন করেনি; ফেরেশতাদের ডেকে বলি, হে ফেরেশতারা! যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দা গুনাহটি করবে না ততক্ষণ পর্যন্ত তার আমলনামায় নেকি লিখতে থাক। আর যখন বান্দা গুনাহটি করে ফেলে তখন ফেরেশতাদের বলি তার জন্য একটি গুনাহ লেখ। পরবর্তীতে বান্দা যদি তওবা করে তাহলে ফেরেশতাদের বলি গুনাহটি মুছে ফেল। অন্যদিকে বান্দা যখন কোনো নেক কাজের নিয়ত করে, শুধু নিয়ত করার কারণেই ফেরেশতাদের বলি তার আমলনামায় দশ থেকে সাত শ গুণ পর্যন্ত সওয়াব লিখে দাও’ (ইবনে হিব্বান)।

বান্দার প্রতি আল্লাহর মমতার শেষ নেই। কোনো বান্দা যখন গুনাহর নিয়ত করে তখনো আল্লাহতায়ালা বান্দার প্রতি রহমতের নজরে তাকিয়ে থাকেন। মুসলিম শরিফের হাদিসে হজরত আবু হুরায়রার বর্ণনায় এসেছে, কোনো বান্দা যখন গুনাহর পথে পা বাড়ায় তখন আল্লাহ ফেরেশতাদের ডেকে বলেন, আমার বান্দা না বুঝে গুনাহর দিকে পা বাড়াচ্ছে। তোমরা অপেক্ষা কর হয়তো সে গুনাহ থেকে ফিরে আসবে। যদি সে ফিরে না আসে তাহলে তার জন্য একটি গুনাহ লিখে রাখবে। আর যদি সে শেষ পর্যন্ত গুনাহ থেকে ফিরে আসে তাহলে তার জন্য অবশ্যই সওয়াব লিখবে। কেননা সে আমার ভয়েই গুনাহ থেকে ফিরে এসেছে। (মুসনাদে আহমাদ ও মুসলিম)।

 

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি, পীরসাহেব, আউলিয়ানগর

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর