মঙ্গলবার, ৬ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

জুলুমের পরিণতি ভয়াবহ

মুফতি হেলাল উদ্দিন হাবিবী

জুলুমের পরিণতি ভয়াবহ

পৃথিবীতে ঘৃণিত শব্দের মধ্যে একটি হলো জুলুম। এ শব্দটি সবার কাছে অপছন্দের হলেও সমাজের এমন কোনো স্তর নেই যেখানে শক্তিশালীরা দুর্বলদের ওপর জুলুম করে না। মহান আল্লাহর কাছে এটি একটি গুরুতর অপরাধ, কবিরা গুনাহ এবং এর পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। জুলুম একটি সামাজিক ব্যাধি। এর মাধ্যমে বিনষ্ট হয় মানবজীবনের শান্তি ও সম্প্রীতি। সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে অনাচার, দুর্যোগ ও বিশৃঙ্খলা। জালিমরা অন্যের ওপর জুলুম করে মূলত নিজেদের ধ্বংস এবং পতন ডেকে আনে। আল্লাহতায়ালা জালিমদের পছন্দ করেন না, বরং তাদের নির্দিষ্ট কিছু সময় পর্যন্ত অবকাশ দেন। এরপর বিভিন্ন আজাবের মাধ্যমে কঠোরভাবে পাকড়াও করেন। জালিমদের ব্যাপারে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, (হে রসুল) আপনি তাদের আসন্ন দিন সম্পর্কে সতর্ক করুন, যখন দুঃখকষ্টে এদের প্রাণ কণ্ঠাগত হবে, জালিমদের জন্য থাকবে না কোনো অন্তরঙ্গ বন্ধু ও সুপারিশকারী; যার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। (সুরা মুমিন, আয়াত ১৮)। দয়াময় আল্লাহ অন্য আয়াতে বলেছেন, (হে নবী) আপনি কখনো মনে করবেন না যে, জালিমরা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ উদাসীন। তবে তিনি তাদের সেদিন পর্যন্ত অবকাশ দেন, যেদিন চক্ষুগুলো হবে স্থির। তারা ভীতবিহ্বল চিত্তে আকাশের দিকে চেয়ে ছোটাছুটি করবে। নিজেদের দিকে দৃষ্টি ফেরাবে না এবং তাদের অন্তর হবে উদাস। (সুরা ইবরাহিম, আয়াত ৪২-৪৩)। মানুষকে তার প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা, সম্মানহানি করা, সম্পদ আত্মসাৎ করা ইত্যাদি জুলুমের অন্তর্ভুক্ত। জুলুম করা আর জালিমের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখা সমান অপরাধ। এ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা কোরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন, তোমরা জালিমদের প্রতি ঝুঁকে পড়বে না, নতুবা তোমাদেরও আগুন স্পর্শ করবে। আর আল্লাহ ছাড়া তোমাদের কোনো বন্ধু নেই। অতএব কোথাও সাহায্য পাবে না। (সুরা হুদ, আয়াত ১১৩)। হজরত আবু মুসা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, অবশ্যই আল্লাহ জালিমকে অবকাশ দেন। এরপর যখন তাকে গ্রেপ্তার করেন আর ছাড়েন না। (বুখারি, মুসলিম)। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কারও এক বিঘত পরিমাণ জমি অন্যায়ভাবে দখল করে নেবে, কেয়ামতের দিন মহান আল্লাহ সাত তবক জমিন তার গলায় লটকিয়ে দেবেন। (বুখারি, মুসলিম)। মজলুম ব্যক্তি যখন জুলুম-অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ভগ্নহৃদয়ে মহান আল্লাহর কাছে বদদোয়া করে, সেই বদদোয়া সরাসরি আসমানে পৌঁছে যায় এবং আল্লাহ তা অবশ্যই কবুল করেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, তিন ব্যক্তির দোয়া কখনো ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। এক. ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া। দুই. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া। তিন. মজলুমের দোয়া। মহান আল্লাহ এদের দোয়া মেঘমালার ওপর তুলে নেন এবং আসমানের দরজাগুলো খুলে দেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, আমার ইজ্জতের কসম! আমি অবশ্যই তোমাকে সাহায্য করব, যদিও তা কিছুটা বিলম্বে হয়। (তিরমিজি)।

 

লেখক : খতিব, মাসজিদুল কোরআন জামে মসজিদ, কাজলা, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা

সর্বশেষ খবর