শনিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

তথ্যের সঠিক ব্যবহার

মো. আবু তালহা তারীফ

তথ্যের সঠিক ব্যবহার

তথ্য মানুষের জীবনের চাহিদা মেটায়। খবর আদান-প্রদান করার নামই তথ্য। আমরা প্রতিদিন পরিবারে, সমাজে, অফিস আদালতে, হাটে, মাঠে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমনকি পথ চলতেও তথ্যের বিনিময় করি। সংবাদপত্র, অনলাইন পত্রিকায়, টেলিভিশনে ও বেতারে জনগণের উদ্দেশে তথ্য প্রচার করা হয়। তথ্য অধিকার আদান-প্রদান সংরক্ষণ কীভাবে করতে হবে, সে সম্পর্কে ইসলামে রয়েছে ব্যাপক নির্দেশনা। তথ্য প্রকাশের জন্য নিজেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিস্তারিত জেনে প্রকাশ করতে হবে। সামান্য জেনে তথ্য প্রকাশ করলে সেখানে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অন্তরে ভয় নিয়ে তথ্য প্রকাশ করা। নিজ কানে শুনে, চোখে দেখে, তথ্য প্রমাণ করে অন্যের কাছে প্রকাশ করা খুবই জরুরি। যেহেতু আমাদের আল্লাহর কাছে জবাব দিতে হবে। আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই কান, চোখ, অন্তর- এগুলোর প্রতিটি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে।’ সুরা বনি ইসরাইল : ৩৬। অন্যের দেওয়া তথ্য বিশ্বাস করার সময় ভালোভাবে যাচাই করে বিশ্বাস করতে হবে। হতে পারে কেউ আপনাকে ভুল তথ্য দিয়ে সমস্যায় ফেলতে চাইছে। আপনাকে মুহূর্তে পরাজিত করে অপমান করতে চাইছে। ভুল তথ্য দিয়ে কেউ আপনার সঙ্গে অন্যের সম্পর্ক নষ্ট করার অপেক্ষায় রয়েছে। একটি ভুল তথ্য বিশ্বাস করে আপনি পরাজিত হতে পারেন। একটি ভুল তথ্যের কারণে জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটতে পারে। উহুদের যুদ্ধে কাফের মুশরিকরা ভুল তথ্য ছড়ালো- রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবিত নেই। ভুল তথ্য শুনে সাহাবিরা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভালোবাসায় যুদ্ধ বন্ধ করে দিলেন। নবীকে খুঁজতে বের হলেন। কোথায় দ্বীনের নবী? এ জন্যই আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, ‘হে মুমিনগণ! কোনো পাপাচারী যদি তোমাদের কাছে বার্তা নিয়ে আসে, তোমরা সেই বার্তা পরীক্ষা করে দেখবে যাতে অজ্ঞতাবশত তোমরা কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে যাতে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য তোমাদের অনুতপ্ত হতে না হয়।’ সুরা হুজরাত : ৬।

তথ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা মারাত্মক অন্যায়। মিথ্যা কথা বলে তথ্য প্রকাশ করা ইসলাম নিষেধ করছে। ইসলাম ধর্ম কাউকে মিথ্যা শিক্ষা দেয়নি। মিথ্যাকে কবিরা গোনাহ বলা হয়েছে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমি কি তোমাদের কবিরা গোনাহ সম্পর্কে বলব না? কথাটি তিনি তিনবার বললেন। সাহাবিরা বলেন, হ্যাঁ, বলুন। অবশেষে তিনি বললেন, ‘আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া এরপর রসুল (সা.) হেলান থেকে সোজা হয়ে বসে বললেন, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া ও মিথ্যা সংবাদ প্রচার করা।’ বুখারি।

একটি তথ্য উপস্থাপন করতে হলে অবশ্যই সুন্দর, সাবলীল, যুগোপযোগী মিষ্টি ভাষায় উপস্থাপন করতে হবে। এমনভাবে তথ্য উপস্থাপন করতে হবে, যাতে মানুষ সে বিষয়টি শুনতে আগ্রহী হয়। তথ্য উপস্থাপন করার ক্ষেত্রে ভাষা, বাক্য ও বচন ব্যবহারে অসতর্ক হলে জনগণ ভুল বুঝতে পারে। তথ্য প্রকাশের সময় অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করে তথ্য প্রকাশ করা উচিত নয়। প্রত্যেক নবী নম্রতা, ভদ্রতা ও কোমল ভাষায় আল্লাহর দেওয়া তথ্য উম্মতের কাছে প্রকাশ করেছেন। আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘হে মুসা ও হারুন, ফেরাউনের সঙ্গে নম্র ভাষায় কথা বলবে। সে উপদেশ গ্রহণ করবে বা ভয় পাবে।’ সুরা ত্বহা : ৪৪।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর