বুধবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

জাতীয় ঐকমত্য

আগে সংস্কার পরে নির্বাচন

অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠকে আগে রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কার ও পরে নির্বাচনের বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠাকে জাতির জন্য এক বিরাট অর্জন বলেই ভাবা হচ্ছে। কর্তৃত্ববাদী সরকারের পৌনে ১৬ বছর শুধু নয়, দেশের রাষ্ট্র ও প্রশাসনিক কাঠামোতে ঘুণ ধরেছিল স্বাধীনতার পর থেকেই। কালক্রমে নির্বাচনি ব্যবস্থাও চলে গিয়েছিল লুটেরা শ্রেণির পকেটে। শুধু ভোট কারচুপি নয়, টাকা দিয়ে মনোনয়ন ও সবকিছু কেনা নির্বাচনি ব্যবস্থার অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছিল। এ যথেচ্ছাচারের সংস্কার না করে নির্বাচন হলে তাতে অতীতের মতো সত্যিকারের নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিক ও সৎ ব্যক্তিরা অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন কি না সংশয় রয়েছে। রাষ্ট্র ও প্রশাসনের এমন কোনো স্থান নেই যেখানে দুর্নীতি আর অনিয়ম বাসা বাঁধেনি। কর্তৃত্ববাদের পুতুল হয়ে চলতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নিশান বরদার  হিসেবে ভূমিকা পালন করার কথা যে পুলিশ বাহিনীর, সে বাহিনীর সদস্যরা জনগণের বন্ধুর বদলে ভিন্ন অভিধায় চিহ্নিত হতো সাধারণ মানুষের কাছে। বিচার ব্যবস্থা পরিণত হয়েছিল কর্তৃত্ববাদের হুকুম বরদার হিসেবে। প্রশাসনে চালু হয়েছিল ‘এলোমেলো করে দে মা লুটেপুটে খাই’ তত্ত্বের অবাধ বাস্তবায়ন। শুধু রাজনৈতিক নেতারা নয়, আমলা ও সরকারি কর্মকর্তাদের অবৈধ পথে অর্জিত অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়ায় দেশের অর্থনীতি খাদে পতিত হওয়ার বিপদ সৃষ্টি হচ্ছিল। ব্যাংকগুলো পরিণত হয়েছিল জনগণের অর্থ লুটের ক্ষেত্র হিসেবে। লাখ লাখ কোটি টাকা ঋণ খেলাপির ঘটনা ঘটছে ব্যাংক থেকে নেওয়া অর্থ নির্দিষ্ট খাতে বিনিয়োগ না করে বিদেশে পাচার ও আত্মসাতের কারণে। সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশি রাজনীতিক ও আমলাদের সম্পত্তির পরিমাণ কয়েক লাখ কোটি টাকার বলে ধারণা করা হয়। রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থার সংস্কার না করে নির্বাচনের মাধ্যমে আরেকজন কর্তৃত্ববাদীর উদ্ভব ঘটালে তা হবে শিব গড়তে বানর গড়ার নামান্তর। রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন অন্তর্বর্তী সরকারের কাজের গতি নির্বিঘ্ন করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। দেশে সুস্থ রাজনীতির বিকাশেও অবদান রাখবে এ জাতীয় ঐকমত্য।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর