বুধবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

মৃতপ্রায় ব্যাংক

সৎ দক্ষ ও অভিজ্ঞদের দায়িত্ব দিন

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের নিউইয়র্ক শাখায় রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়েছিল। সেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বহীনতা ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা চলছে। তার প্রায় ৭ কোটি ডলার আজও ফেরত পাওয়া যায়নি। যাদের দায়িত্বহীনতা বা যোগসাজশে এত বড় বিপর্যয়টা ঘটেছিল - তাদের দৃশ্যমান শাস্তি হয়নি। গত মে মাসেও কয়েক বিলিয়ন ডলার চুরির খবর চাউর হয়; বাংলাদেশ ব্যাংক যা সত্য নয় বলে জানায়। এভাবেই চলেছে ব্যাংকিং খাত। দখল, জবরদস্তি এবং ঋণখেলাপের মচ্ছব চলেছে। তারই দুঃখজনক পরিণতি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ১৮ কোটি মানুষের দেশে ব্যাংক ৬১টি। শিক্ষিত তরুণদের কর্মসংস্থানে কিছু ভূমিকা রেখেছে এটাই এ ব্যাংকগুলোর একমাত্র ইতিবাচক অবদান। না হলে এত ব্যাংকের লাইসেন্স কেন দেওয়া হয়েছে সে প্রশ্ন তোলাই যায়। সমস্যা হচ্ছে, গত ১৫ বছরে ২৪টি বড় ধরনের কেলেঙ্কারির ঘটনায় প্রায় লক্ষ কোটি টাকা লোপাট হয়ে গেছে। ব্যাংকিং খাতের সুশাসন সম্পর্কে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ - সিপিডি এমনই এক তথ্য তুলে ধরেছে। সিপিডির মূল্যায়ন, তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্মের কিছু ব্যাংক ‘ক্লিনিক্যালি ডেড’ হয়ে গেছে। পুঁজির জোগান দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে অকারণেই সরকার ও জনগণের টাকার অপচয় হচ্ছে। আর কিছু ব্যাংক  আছে মৃতপ্রায়, খুঁড়িয়ে চলছে। এগুলো যদি টিকিয়ে রাখতেই হয়, পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা আগাপাশতলা ঢেলে সাজাতে হবে। নতুন বোতলে পুরনো পানীয় ঢেলে চাতুরীর আশ্রয় নিলে হবে না। গত দেড় দশকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নররা যেসব নীতিমালা গ্রহণ করেছেন, অধিকাংশই ব্যাংকিং আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ছিল। স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতার শুভচর্চা থেকে বিচ্যুৎ হয়ে বোধগম্য কারণেই তারা বিশেষ মহলকে সুবিধা দেওয়ার ফাঁকফোকর তৈরি করেছিলেন। হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ বেরিয়ে গেছে, যা ফিরে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ। স্বভাবতই সেই ফাঁক দিয়ে শুধু নেংটি ইঁদুর নয়, বড় বড় সাপ ঢুকে ব্যাংকিং খাতে বিষাক্ত ছোবল বসিয়েছে। শক্ত প্যাঁচ কষে অর্থনীতির শ্বাসরোধে উদ্যত হয়েছে। এর জন্য যারা দায়ী তাদের কঠিন শাস্তির আওতায় আনা উচিত। চলতি রাষ্ট্র সংস্কারে ব্যাংকিং খাতকেও সুস্থ ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে। বিতর্কিতদের বদলে সৎ ও দক্ষ হাতে ব্যাংক পরিচালনার দায়িত্ব দিতে হবে।

সর্বশেষ খবর