বুধবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

গুজব ও অপপ্রচার শাস্তিযোগ্য অপরাধ

মো. আমিনুল ইসলাম

গুজব ও অপপ্রচার শাস্তিযোগ্য অপরাধ

কোনো বিষয়ে ভিত্তিহীন তথ্য প্রচার করাই হচ্ছে অপপ্রচার। ইসলামে গুজব ও অপপ্রচার যেমন নিষিদ্ধ তেমনি সামাজিকভাবেও তা সবার কাছে ঘৃণিত। কোনো বিষয় বা ঘটনা নিয়ে বিকৃত তথ্য বা অমূলক কথা মানুষের মাঝে প্রচার করাই হলো গুজব। গুজব ছড়ানো বা অপপ্রচার করা ইসলামে গুরুতর শাস্তিযোগ্য অপরাধ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, “হে ইমানদার ব্যক্তিরা, যদি কোনো দুষ্ট প্রকৃতির লোক তোমাদের কাছে কোনো তথ্য নিয়ে আসে, তবে তোমরা তার সত্যতা পরখ করে দেখবে, কখনো যেন এমন না হয় না জেনে তোমরা কোনো একটি সম্প্রদায়ের ক্ষতি করে ফেললে, অতঃপর নিজেদের কৃতকর্মের ব্যাপারে তোমাদেরই অনুতপ্ত হতে হলো।” (সূরা আল হুজরাত, আয়াত ০৬)। গুজব ছড়ানোর মূল উদ্দেশ্য হলো সমাজে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করা। মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করাকে কোরআনে মুনাফেকির বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘ওরা তোমাদের মাঝে বের হলে তা তোমাদের মধ্যে বিভ্রান্তিই শুধু বাড়িয়ে দিত এবং তোমাদের সমাজে নানারকম অশান্তি সৃষ্টির জন্য তারা তোমাদের ভিতর ছোটাছুটি করত। তোমাদের ভিতর তাদের কথা শোনার মতো গুপ্তচর রয়েছে। আল্লাহ জালেমদের সম্পর্কে সম্যক অবগত রয়েছেন।’ (সূরা তাওবা, আয়াত ৪৭)

আমাদের সমাজে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে অপপ্রচার মহামারির মতো ব্যাপকতা ধারণ করেছে। এ বিষয়টি এখন প্রতিপক্ষকে দমনের হাতিয়ার। সত্য মিথ্যা যাচাই না করে নিজের ইচ্ছে মতো অপপ্রচার করাই যেন ফ্যাশনের মতো দাঁড়িয়েছে। ব্যক্তি বা দল বলে কোনো বাছবিচার নেই। অপপ্রচার করতেই হবে এ যেন এক প্রতিযোগিতা। আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি একটি অন্যায় কিংবা পাপ কাজ করে, কিন্তু সে দোষ চাপিয়ে দিল একজন নির্দোষ ব্যক্তির ওপর, (এ কাজের জন্য) সে একটি অপবাদ ও জঘন্য গুনাহের বোঝা নিজের ঘাড়ে উঠিয়ে নিল।’ (সূরা নিসা, আয়াত ১১২)। গুজব ছড়ানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। গুজব ছড়িয়ে যারা মানুষের নিরাপত্তা ও শান্তি বিঘ্ন করে তাদের জন্য কঠোর শাস্তির কথাও ইসলামে বলা হয়েছে। ইসলামের শিক্ষা হলো প্রয়োজনের ব্যতীত কোনো কথা না বলা। রসুল (সা.) বলেন, “যে চুপ থাকে সে মুক্তি পায়” (তিরমিজি ২৫০১)। রসুল (সা.) আরও বলেন, “ব্যক্তির মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনে তা বলে বেড়ায়।” (সুনানে আবু দাউদ, ৪৯৯২)। যারা কোনো কথা শোনামাত্র সত্যতা যাচাই না করেই মানুষের কাছে প্রচার করে বেড়ায় রসুল (সা.) তাদের মিথ্যাবাদী হিসেবে এই হাদিসে গণ্য করেছেন। সুতরাং একজন মুসলমানের কল্যাণ নেই এমন কোনো কাজে নিজেকে জড়িত করবে না, যে কাজ তার নিজেকে এবং সমাজকে ক্ষতির সম্মুখীন করতে পারে। আমাদের মনে রাখতে হবে পরকালে প্রতিটি কাজের জন্য আমাদের জবাবদিহি করতে হবে। সুতরাং একজন মুসলমান সমাজে গুজব বা অপপ্রচার করে পরকালে গুনাহের ভাগীদার হওয়া ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর নেই। আল্লাহ বলেন, ‘যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তার অনুসরণ করো না, নিশ্চয়ই কান চোখ, অন্তরের প্রতিটি বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে।’ (সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত ৩৬)। যে নেতিবাচক সংবাদ প্রচারের জন্য সমাজে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে তা প্রচার করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা তা অপবাদের সমতুল্য। কারও বিরুদ্ধে অপবাদ দেওয়া গিবত বলে বিবেচিত হয়। আর গিবতের ব্যাপারে কোরআনে কঠোর হুঁশিয়ারি রয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, একটি হাদিসেও গুজবকে শয়তানের কাজ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, “শয়তান মানুষের রূপ ধরে তাদের কাছে আসে এবং তাদের মিথ্যা কথা শোনায়।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার

সর্বশেষ খবর