শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

মিথ্যা বলা মানুষের একটি কদর্য ও ঘৃণ্য আচরণ

আবদুর রশিদ

মিথ্যা বলা মানুষের একটি কদর্য ও ঘৃণ্য আচরণ। মিথ্যার মাধ্যমে মানুষের হক নষ্ট করা হয়। মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে মানুষকে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানিয়ে না-হক অর্থ হরণ করা হয়। এমন উপার্জন হারাম তা বলাই বাহুল্য।

মিথ্যুক ব্যক্তি যে ঘৃণ্য ও তুচ্ছ সে ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন- “অর্থাৎ, নিশ্চয় আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারী ও মিথ্যাবাদীকে সৎ পথে পরিচালিত হেদায়াত করেন না (সুরা মুমিন ২৮)।

আবু বাকরাহ (রা.) বলেন, একদা আমরা আল্লাহর রসুল (সা.)-এর নিকট বসা ছিলাম। তিনি বললেন, তোমাদের সবচেয়ে বড় কবিরা গোনাহর কথা বলে দেব না কি? এরূপ তিনবার বলার পর তিনি বললেন, আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া। শোনো! আর মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া ও মিথ্যা কথা বলা।

ইতিপূর্বে তিনি হেলান দিয়ে বসেছিলেন, কিন্তু শেষোক্ত কথাটি বলার সময় হেলান ছেড়ে উঠে বসলেন। অতঃপর এ কথা তিনি বারবার পুনরাবৃত্তি করতে লাগলেন। শেষ অবধি আমরা বললাম, হায় যদি তিনি চুপ হতেন। আল্লাহর রসুল (সা.) বলেন, অবশ্যই সত্যবাদিতা পুণ্যের প্রতি পথপ্রদর্শন করে এবং পুণ্য পথপ্রদর্শন করে বেহেশতের প্রতি। আর মানুষ সত্য বলতে থাকে, পরিশেষে সে আল্লাহর নিকট দারুণ সত্যবাদী হয়ে যায়। পক্ষান্তরে মিথ্যাবাদিতা পাপের প্রতি পথপ্রদর্শন করে এবং পাপ পথপ্রদর্শন করে দোজখের প্রতি। আর মানুষ মিথ্যা বলতে থাকলে অবশেষে সে আল্লাহর কাছে ভীষণ মিথ্যাবাদী বলে লিখিত হয়। মিথ্যা বলার অভ্যাস কোনো মুসলিমের হতে পারে না। তার কর্ম ও পেশা যাই হোক, কোনো ক্ষেত্রেই সে মিথ্যার আশ্রয় নিতে পারে না। আসলে মিথ্যা বলা মুনাফিকদের হীন চরিত্রের একটি নিকৃষ্ট গুণ।

আল্লাহর নবী (সা.) বলেন, মুনাফিকের লক্ষণ হলো তিনটি : কথা বললে মিথ্যা বলে, ওয়াদা দিলে খেলাপ করে এবং চুক্তি করলে ভঙ্গ করে। মুসলিমের এক বর্ণনায় এ কথা বেশি আছে, যদিও সে ব্যক্তি নামাজ পড়ে, রোজা রাখে এবং নিজেকে মুসলিম মনে করে।

বহু উকিল আছেন, যারা মক্কেলকে কেসে জিতাবার উদ্দেশে মিথ্যা ব্যবহার করেন। বহু লেখক আছেন, যারা মিথ্যা কথা বানিয়ে বানিয়ে লিখে লোককে হাসিয়ে অর্থ উপার্জন করে থাকেন। বহু ব্যবসায়ী আছে, যারা মিথ্যা বলে নিজেদের পণ্য বিক্রয় করে থাকে। এরা বলে মিথ্যা না বললে কি ব্যবসা চলে নাকি? আসলে মিথ্যা বলাটা এদের কাছে ব্যবসার একটা টেকনিক।

আল্লাহর রসুল (সা.) বলেন, ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে পৃথক না হওয়া পর্যন্ত (ক্রয়-বিক্রয়ে) তাদের এখতিয়ার থাকে। সুতরাং তারা যদি (ক্রয়-বিক্রয়ে) সত্য বলে এবং (পণ্যদ্রব্যের দোষ-গুণ) খুলে বলে, তাহলে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত দেওয়া হয়। অন্যথা যদি (পণ্যদ্রব্যের দোষ-ত্রুটি) গোপন করে এবং মিথ্যা বলে, তাহলে বাহ্যত তারা লাভ করলেও তাদের ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত বিনাশ করে দেওয়া হয়।

মিথ্যা না বললে কি ব্যবসা চলে নাকি? এ কথা ওদের নিকট ধ্রুব ও চিরন্তন সত্য বলেই আমাদের মহানবী (সা.) আমাদের ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে বলেছেন, ব্যবসায়ীরাই ফাজের (পাপাচারী)। সাহাবারা বললেন, আল্লাহ কী ব্যবসাকে হালাল করেননি? তিনি বললেন, অবশ্যই। কিন্তু তারা কসম করে পাপ করে এবং কথা বলতে মিথ্যা বলে। তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ীরা কিয়ামতের দিন ফাজের (পাপাচারী) হয়ে (কবর থেকে) উঠবে। তবে সে নয়, যে (তার ব্যবসায়) আল্লাহকে ভয় করে, লোকের প্রতি এহসানি করে এবং সত্য কথা বলে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের মাল অনধিকার আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে কসম করে, সে ব্যক্তি এমন অবস্থায় আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, যখন তিনি তার ওপর ক্রোধান্বিত থাকবেন। হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাযি. বলেন, অতঃপর আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথার সমর্থনে আল্লাহর কিতাব থেকে এই আয়াত আমাদের জন্য পাঠ করলেন। যারা আল্লাহর প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথকে স্বল্পমূল্যে বিক্রয় করে পরকালে তাদের কোনো অংশ নেই। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকিয়ে দেখবেন না এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধও করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সুরা আলে ইমরান ৭৭) মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা ব্যবসা-বাণিজ্যে অধিকাধিক কসম খাওয়া থেকে দূরে থেকো। কারণ, কসম পণ্যদ্রব্য চালু করে ঠিকই, কিন্তু তা উপার্জনের বরকত নষ্ট করে দেয়।

আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, চার ব্যক্তিকে আল্লাহ ঘৃণা করেন, অত্যধিক কসম খেয়ে পণ্য বিক্রয়কারী ব্যবসায়ী, অহংকারী গরিব, ব্যভিচারী বৃদ্ধ এবং অত্যাচারী রাজা (শাসক)।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

সর্বশেষ খবর