শনিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

ইসলামের দৃষ্টিতে ধৈর্যের গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য

ডা. মুহাম্মদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

ইসলামের দৃষ্টিতে ধৈর্যের গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য

ইসলাম মানবতার ধর্ম। মানব চরিত্রের উৎকর্ষ সাধনই এর মূল লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন আদিযুগ থেকে নবী ও রসুল পাঠিয়েছেন। সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পাঠিয়েছেন মানবতার উৎকর্ষের পূর্ণতা প্রদানের জন্য। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, আমাকে পাঠানো হয়েছে সুন্দর চরিত্রের পূর্ণতা প্রদানের জন্য (মুসলিম ও তিরমিজি)। আর সবর বা ধৈর্য মানুষের নৈতিক চরিত্রের এক মহৎ গুণ। ধৈর্যের ফল সর্বদা মিষ্টি হয়। ব্যক্তি ও সমাজজীবনে বিভিন্ন কারণে মানুষকে নানারকম বিপদাপদের মোকাবিলা করতে হয়। আল্লাহ মানুষকে বিভিন্ন বালা-মুসিবত, দুঃখ-কষ্ট, রোগ-শোক ও অভাব-অনটন ইত্যাদির মাধ্যমে পরীক্ষা করে থাকেন। আবার তিনি মানুষকে সুখ-সমৃদ্ধি, অর্থ-বিত্ত, ধন-সম্পদ দিয়েও পরীক্ষা করে থাকেন। যারা এ পরীক্ষাকে সবরের সঙ্গে মোকাবিলা করতে থাকেন তারাই সফলকাম হন। আর পরীক্ষাকালীন ধৈর্যচ্যুতি ঘটলেই ফলাফল অশুভ হতে বাধ্য। তাই মানবজীবনে সবরের গুরুত্ব অপরিসীম।

ধৈর্যের শাখা : পবিত্র কোরআন ও হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী ধৈর্যের তিনটি শাখা রয়েছে- এক. নফসকে হারাম এবং নাজায়েজ বিষয়াদি থেকে বিরত রাখা। দুই. ইবাদত ও আনুগত্যে বাধ্য করা এবং তিন. যে কোনো বিপদ ও সংকটে ধৈর্য ধারণ করা।

যেসব বিপদাপদ এসে উপস্থিত হয় সেগুলোকে আল্লাহর সিদ্ধান্ত বলে মেনে নেওয়া এবং এর বিনিময়ে আল্লাহর তরফ থেকে প্রতিদান প্রাপ্তির আশা করা। অবশ্য কষ্টে পড়ে যদি মুখ থেকে কোনো কাতর শব্দ উচ্চারিত হয়ে যায় কিংবা অন্যের কাছে তা প্রকাশ করা হয়, তবে তা ধৈর্যের পরিপন্থি নয়। (ইবনে কাসির)।

ধৈর্যশীলতা অর্জনের উপায় : ধৈর্যশীলতা একটি কল্যাণকর গুণ। এটি অর্জন করতে প্রবল ইচ্ছাশক্তির প্রয়োজন। সঙ্গে প্রয়োজন দৃঢ় ইমান। কারণ কোনো মানুষের মধ্যে দৃঢ়তা না থাকলে, প্রবল ইচ্ছাশক্তি না থাকলে, সে ধৈর্যশীল হতে পারবে না। রসুল (সা.) একবার আনসারের কিছু লোককে বলেন, ‘আর যে ব্যক্তি ধৈর্য ধরে তিনি (আল্লাহ) তাকে ধৈর্যশীলই রাখেন। আর যে অমুখাপেক্ষী হতে চায়, আল্লাহ তাকে অভাবমুক্ত রাখেন। ধৈর্যের চেয়ে বেশি প্রশস্ত ও কল্যাণকর কিছু কখনো তোমাদের দান করা হবে না (বুখারি)।

ধৈর্যশীলতার পুরস্কার : ধৈর্যশীলতা অর্জন করা যত কঠিন, এর পুরস্কারও তত বড়। মানুষের জীবনে প্রতিকূল পরিস্থিতি আসাটা স্বাভাবিক। যারা তখন আল্লাহর ওপর আস্থা রেখে ধৈর্য ধারণ করবে, আল্লাহ তাদের অগণিত পুরস্কারে পুরস্কৃত করার ঘোষণা দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘বল! হে আমার মুমিন বান্দারা, যারা ইমান এনেছ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর। যারা এ দুনিয়ায় ভালো কাজ করে তাদের জন্য রয়েছে কল্যাণ। আর আল্লাহর জমিন প্রশস্ত, কেবল ধৈর্যশীলদেরই তাদের প্রতিদান পূর্ণরূপে দেওয়া হবে কোনো হিসাব ছাড়াই’ (সুরা আজ-জুমার-১০)।

অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ ধৈর্যশীলদের জান্নাত উপহার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, যারা তাদের রবের সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ধৈর্য ধারণ করে, নামাজ কায়েম করে এবং আমি তাদের যে রিজিক প্রদান করেছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে এবং ভালো কাজের মাধ্যমে মন্দকে দূর করে, তাদের জন্যই রয়েছে আখিরাতের শুভ পরিণাম। স্থায়ী জান্নাতগুলো যাতে তারা এবং তাদের পিতৃপুরুষগণ, তাদের স্ত্রীগণ ও তাদের সন্তানদের মধ্যে যারা সৎ ছিল তারা প্রবেশ করবে। আর ফেরেশতারা প্রতিটি দরজা দিয়ে তাদের কাছে প্রবেশ করবে। (আর বলবে) ‘শান্তি তোমাদের ওপর। কারণ তোমরা ধৈর্য ধারণ করেছ, আর আখিরাতের এ পরিণাম কতই না উত্তম’ (সুরা : রাদ ২২-২৪)।

দুনিয়াতে মানুষের বিপদাপদ আসা স্বাভাবিক। কিন্তু পরম করুণাময় এর বিনিময়েও মুমিন বান্দাদের গুনাহ মাফ করে দেন। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) ও আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, মুসলিম ব্যক্তির ওপর যে কষ্ট-ক্লেশ, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানি আসে, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে ফোটে, এসবের মাধ্যমে আল্লাহ তার গুনাহ ক্ষমা করে দেন (বুখারি)।

ধৈর্য নিয়ে আল্লাহর বাণী : হিলম তথা সহিষ্ণুতা সম্পর্কে মহাগ্রন্থ আল কোরআনুল কারিমে আল্লাহ বলেন, আল্লাহই তো সম্যক প্রজ্ঞাময়, পরম সহনশীল (সুরা হজ-৫৯)।

সবর, অর্থাৎ ধৈর্য সম্পর্কে কোরআন মাজিদে আল্লাহ বলেন, আমি তো তাকে পেলাম ধৈর্যশীল। কত উত্তম বান্দা সে! সে ছিল আমার অভিমুখী (সুরা : সাদ-৪৪)। নিশ্চয় এতে তো নিদর্শন রয়েছে প্রত্যেক পরম ধৈর্যশীল ও পরম কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য (সুরা ইবরাহিম-৫)।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

সর্বশেষ খবর