রবিবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

নবীজি (সা.) অবরুদ্ধ ছিলেন কাফেরদের বয়কটে

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি

নবীজি (সা.) অবরুদ্ধ ছিলেন কাফেরদের বয়কটে

আবু জেহেল ও আবু লাহাব ছিল জাহেলি যুগের সন্ত্রাসী গডফাদার। নবীজি (সা.)-এর ওপর অত্যাচার নির্যাতন চালিয়ে যাওয়াই ছিল এ মাফিয়াদের মূল লক্ষ্য। প্রতিনিয়ত তারা নির্মমতার ভয়ংকর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতো। মহান প্রভু তাদের সব ষড়যন্ত্রের ফাঁদ নস্যাৎ করে দেন। দলে দলে মানুষ মহানবী (সা.)-এর শান্তির পতাকাতলে সমবেত হতে থাকে। এ পরিস্থিতিতে চক্রান্তকারীরা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা মুহাম্মদ (সা.)-কে হত্যার পরিকল্পনায় মেতে ওঠে। মুহাম্মদ (সা.)-কে স্বৈরাচারীদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য তারা বনি হাশেম ও বনি মুত্তালিবের প্রতি প্রস্তাব পাঠায়। আবু তালেব স্বৈরাচারীদের এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। ফলে আবু জেহেল গং বনি হাশেম ও বনি মুত্তালিবকে বয়কটের ডাক দেয়। সমগ্র কুরাইশ মাফিয়াদের প্রভাবে জোটবদ্ধ হয়ে এ মর্মে একটি চুক্তিনামা পবিত্র কাবাঘরের দেয়ালে ঝুলিয়ে দেয়। পরিস্থিতির ভয়াবহতায় রসুলুল্লাহ (সা.) -এর চাচা আবু তালিব, রসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর স্ত্রী খাদিজা (রা.) এবং বনি হাশেম ও বনি মুত্তালিব সম্প্রদায়ের নারী, পুরুষ ও শিশু সবাই আবু তালিব নামক পাহাড়ের গুহায় আত্মনির্বাসিত হয়। বনি হাশেমের গডফাদার আবু লাহাব সেদিন স্বৈরাচার আবু জেহেলের পক্ষ নেয়। তারা সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সর্বক্ষেত্রে বয়কট চক্রান্তে দাম্ভিকতার চরম সীমা লঙ্ঘন করে। রসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর সাথীগণ সুদীর্ঘ তিনটি বছর আবু তালিব গিরিসংকট নামক স্থানে নিদারুণ মানবেতর জীবনযাপন করেন। খাদ্য সংকটে তারা গাছের শিকড়, লতাপাতা ইত্যাদি চিবিয়ে জীবন ধারণ করেছেন। ক্ষুধার তাড়না ও নির্মম পরিস্থিতির জাঁতাকলে অসহায় নারী ও শিশুদের কান্নায় সেদিন আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে আসছিল। অতিষ্ঠ জনগণ মানবতার দাবিতে মুক্তির আন্দোলনে সোচ্চার হয়। অন্যদিকে কাবাগৃহে ঝুলানো স্বৈরাচারীদের চুক্তিপত্র আল্লাহ প্রদত্ত একপ্রকার পোকা বিনষ্ট করে দেয়। ফলে তাদের বয়কটের অবসান হয় এবং রসুলুল্লাহ (সা.) বয়কট থেকে মুক্তিলাভ করেন। যুগে যুগে স্বৈরাচারী শাসকবর্গ তাদের অবৈধ ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য নির্যাতনের আয়নাঘর স্থাপন করেছে। ভারতবর্ষে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে বঙ্গোপসাগর উপকূলে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে ‘কালাপানি’ নামক আয়নাঘর স্থাপন করেছিল। এতে ভারতের স্বাধীনতাকামীদের হাতে-পায়ে লোহার শিকল বেঁধে অত্যাচার নির্যাতন চালানো হতো মরণ পর্যন্ত। তবে সব স্বৈরাচারীর এক দিন পতন হয়। সব অপশক্তির হয় অবসান। এটা মহান প্রভুর শাশ্বত বিধান। ইসলাম বিচার বহির্ভূত সব ধরনের হত্যা, নির্যাতন, রিমান্ড, সন্ত্রাস ও লুটপাট অসমর্থন করে। বদর যুদ্ধের প্রাক্কালে সাহাবাগণ কুরাইশের এক গোয়েন্দাকে ধরে ফেলেন। তারা লোকটিকে রিমান্ড স্টাইলে প্রহার করে জিজ্ঞাসা করেন আবু সুফিয়ান কোথায়? জানের নিরাপত্তার জন্য সে চিৎকার করে বলছি, আবু সুফিয়ান কোথায় আমি বলছি, বলছি। প্রহার বন্ধ হলে সে বলে আবু সুফিয়ান কোথায় আমি জানি না। সাহাবাগণ পুনরায় তাকে প্রহার আরম্ভ করে। রসুলুল্লাহ (সা.) নামাজে ছিলেন। সালাম ফিরিয়ে তিনি ফরমান, ‘শপথ তাঁর নামে যার হাতে আমার প্রাণ! লোকটি যখন সত্য বলে, তখন তোমরা তাকে প্রহার করছ, আর যখন সে তোমাদের মিথ্যা বলে তখন তোমরা তাকে ছেড়ে দিচ্ছ।’ (সহিহ মুসলিম)।

সাহাবাগণ বুঝে গেলেন, লোকটিকে তারা মুক্ত করে দেন। এরপর এমন রিমান্ডের কোনো ঘটনা ইসলামী ইতিহাসে কখনো পুনরাবৃত্তি হয়নি।

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা

সর্বশেষ খবর